বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমার ছেলের খোঁজ কে দেবে?’

  •    
  • ৩ মার্চ, ২০২২ ২২:২১

ফেনীর সোনাগাজীতে জয়নাল আবেদীনকে অপহরণ করে হত্যার মামলায় ছয় আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছে আদালত। এই রায়ে হতাশা প্রকাশ করে বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা ছেরাজুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসামিরা যদি নির্দোষ হয় তাহলে কি আমার ছেলে বেঁচে আছে? বেঁচে থাকলে তাকে এনে দেবে কে? রাষ্ট্রের কাছে, সমাজের কাছে, বিচারকের কাছে আমার ছেলেকে ফেরত চাই।’

ফেনীতে অটোরিকশাচালক জয়নাল আবেদীনকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগে হওয়া মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে মামলার তদন্তে অবহেলা করায় পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার ফেনী জেলা ও দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছা ছয় আসামির সবাইকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ের বিশ্লেষণে আদালত বলেছে, বাদীপক্ষ আসামিদের দোষী প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

আদালতের এই রায়ে জয়নাল আবেদীনের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ছেরাজুল হক হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘তাহলে আমার ছেলের সন্ধান কে দেবে? নিখোঁজ ছেলের সন্ধান কি পাব না?’

রায় ঘোষণার সময় আদালতে পাঁচ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অপরজন পলাতক। তারা হলেন নাছির উদ্দিন লিটন, ইসমাইল হোসেন দুলাল, সিরাজুল ইসলাম মাস্টার, দুলাল হোসেন খোকন, নাজমুল হন নয়ন ও নুর করিম।

মামলার নথি থেকে জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জয়নাল আবেদীন ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে বাঁধে চা দোকান থেকে নিখোঁজ হন। ১২ জানুয়ারি বড় ফেনী নদীর তীরে তার পরিহিত জ্যাকেট পাওয়া যায়।

এ ঘটনায় জয়নালের বাবা ছেরাজুল হক ১৮ জানুয়ারি চারজনকে আসামি করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. আমির ছয়জনকে অভিযুক্ত করে ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। একই বছরের ২৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে আদালত।

জয়নাল আবেদীন। ছবি: সংগৃহীত

আদালতের এই রায়ে হতাশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহম্মদ। তিনি বলেন, ‘আসামিদের সঙ্গে জয়নালদের জমি নিয়ে পূর্ববিরোধ ছিল। সে বিরোধের জের ধরে একটি মামলা হয়। ওই মামলা তুলে নিতে চাপ সৃষ্টি করত আসামিরা। তারা একসময় হত্যার হুমকি দেয়। তারই জের ধরে আসামিরা জয়নালকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।’

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হানিফ মজুমদার এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষীসাব্যস্ত করতে পারেনি। জয়নাল আত্মগোপনও করতে পারে। হত্যা মামলা হলেও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নেই। সম্পত্তির বিরোধ নিয়ে অনুমাননির্ভর আসামি করা হয়েছে। তাই আসামিদের খালাস দিয়েছে আদালত।’

মামলার রায়ের পর নিখোঁজ জয়নালের ভাই নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবার বয়স ৯০ বছরের কাছাকাছি। হাঁটতে-চলতে পারেন না। আসামিরা খালাস পাওয়ায় তিনি হতাশ। বারবার আক্ষেপ করে বলছেন- নিখোঁজ ছেলের সন্ধান পেলাম না।’

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ছেরাজুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসামিরা যদি নির্দোষ হয় তাহলে আমার ছেলে কোথায়? ৯ বছর ধরে অপেক্ষা করছি ন্যায়বিচারের জন্য। আজ আসামিদের নির্দোষ বলে খালাস দেয়া হয়েছে। তাহলে কি আমার ছেলে বেঁচে আছে? বেঁচে থাকলে কে তাকে এনে দেবে? রাষ্ট্রের কাছে, সমাজের কাছে, বিচারকের কাছে আমার ছেলেকে ফেরত চাই।’

নিখোঁজ জয়নাল আবেদীনের ভাই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আসামিরা যদি নির্দোষ হয়, তাহলে আমার ভাই নিশ্চয়ই বেঁচে আছে। কার কাছে আছে?’

এক প্রশ্নের উত্তরে প্রবীণ আইনজীবী ফয়জুল হক মিল্কী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশের তদন্তে দুর্বলতা ছিল। আদালতে দেয়া অভিযোগপত্রে তাদের ব্যর্থতা ছিল। যে অটোরিকশায় এসে জয়নালকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় সেই গাড়িটির খোঁজ করা দরকার ছিল। মামলার তদন্তে সেলুনকর্মীর নাম এলেও সাক্ষী হিসেবে তাকে রাখা হয়নি।’

এ বিভাগের আরো খবর