গৃহকর্মী ফারজানা আক্তারকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার গৃহকর্ত্রী সামিয়া ইউসুফ সুমির জামিন বাতিল করেননি বিচারক। হুমকির অভিযোগ তুলে গৃহকর্মীর বাবার করা আবেদন নাকচ হয়েছে।
ঢাকার মহানগর হাকিম শুভ্রা চক্রবর্তীর আদালতে সোমবার জামিন বাতিল আবেদনের ওপর শুনানি হয়। উভয় পক্ষের শুনানির পর বিচারক জামিন বাতিলের আবেদন নাকচ করে দেন।
আসামির পক্ষে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মামুন স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। অন্যদিকে গত ৩১ জানুয়ারি দাখিল করা জামিন বাতিলের আবেদনের ওপর রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর হাকিম আদালতের বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আজাদ রহমান এবং বাদী পক্ষের ব্যক্তিগত আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাহিদুর রহমান মিয়া ও আরিফুল ইসলাম পর্যায়ক্রমে শুনানিতে অংশ নেন।
আসামির পক্ষে আইনজীবী মিজানুর রহমান মামুন শুনানিতে বলেন, ‘আসামি জামিন পাওয়ার পর কোনো ধরনের আইনি ব্যত্যয় ঘটাননি, ফলে তার জামিন বাতিলের কোনো কারণ নাই। তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তিনি এই মামলার চূড়ান্ত বিচার (ট্রায়াল) ফেস করবেন। কাজেই জামিন বাতিলের মতো কোনো বিষয় থাকতে পারে না। জামিন পেয়ে তিনি জামিনের কোনো শর্তভঙ্গ করেননি।’
রাষ্ট্রপক্ষ বিরোধিতা করলেও শুনানি শেষে বিচারক জামিন বাতিলের আবেদন নাকচ করেন।
বিষয়টি আইনজীবী আজাদ রহমান নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, নির্মম নির্যাতনের শিকার ১৫ বছর বয়সী গৃহকর্মী ফারজানা গত ১৭ জানুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩৫ দিন রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিল।
ফারজানার বাবা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আসামির লোকজন আমার কাছ থেকে কাগজে সই নিয়েছে। সেই কাগজে লেখা ছিল জামিনে আমার আপত্তি নাই। আমি লেখাপড়া জানি না। তাতে কী লেখা ছিল জানি না। সে কথা জানিয়ে আমরা আদালতে জামিন বাতিলের আবেদন করেছিলাম।’
এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি গৃহকর্ত্রী সামিয়া ইউসুফ সুমিকে জামিন দেয় আদালত।
বিল্লাল হোসেন মামলায় উল্লেখ করেন, ফারজানাকে ২০১৫ সালে মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে রাজধানীর কলাবাগানে সামিয়ার বাসায় কাজে দেয়া হয়। পরে ফারজানা পরিবারকে জানায়, গৃহকর্ত্রী তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। অনেক সময় খাবার দেন না।
গত ১৭ জানুয়ারি ফারজানার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে বাবা বিল্লাল হোসেন ও মা জোস্না বেগম ঢাকায় আসেন। তারা অচেতন অবস্থায় ফারজানাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। কিছুটা সুস্থ হয়ে ফারজানা নির্যাতনের নানা তথ্য অভিভাবকদের জানায়।
১৫ জানুয়ারি বাসনপত্র ভেঙে ফেলার মিথ্যা অভিযোগে তাকে লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটান গৃহকর্ত্রী । একপর্যায়ে লোহার খুন্তি গরম করে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন।
এসব ঘটনা জেনে ফারজানার বাবা ২০ জানুয়ারি মামলা করেন। এরপর গৃহকর্ত্রী সুমিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।