রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সার্চ কমিটির তালিকা অর্ধেক করে ৫ সদস্যের যে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন, তাতে আওয়ামী লীগের প্রস্তাব করা কেউ নিয়োগ পাননি বলে জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তারপরও দলটি নাখোশ নয় বলে জানিয়েছেন তিনি। আশা করছেন, নতুন কমিশন কেবল অবাধ ও সুষ্ঠুই নয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনও করতে পারবে।
নতুন নির্বাচন কমিশনকে অভিনন্দন জানিয়ে রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তিনি এই আশার কথা বলেন। কমিশনকে সার্বিক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিও তুলে ধরেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কমিশন গঠনে আওয়ামী লীগ যে নাম প্রস্তাব করেছিল, তা বাদ পড়েছে। তারপরও সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠিত হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। গঠিত নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে।’
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৩ দিন পর কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন শপথ নিয়েছে রোববার। এই কমিশনই আগামী জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে।
সিইসি সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন সাবেক জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান, সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমানকে।
সার্চ কমিটি গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ১০ জনের নামের তালিকা দেয়ার পর বঙ্গভবন থেকে শনিবার ৫ জনকে বেছে নেয়ার কথা জানানো হয়।
সার্চ কমিটি এই নাম বেছে নিয়েছে বিভিন্ন দল, সংগঠন ও ব্যক্তি পর্যায়ে জমা দেয়া তালিকা থেকে। রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করার আগে নাম জমা পড়ার পর বিশিষ্টজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলোচনাও করেছে সার্চ কমিটি।
এ নিয়ে টানা তিনটি নির্বাচন কমিশন সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠন করা হলো। তবে আগের দুটি কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপির অংশগ্রহণ থাকলেও এবার তারা রাষ্ট্রপতির সংলাপ বর্জন করেছে, সার্চ কমিটিতেও কোনো নাম পাঠায়নি।
বিএনপি মনে করে, সার্চ কমিটির মাধ্যমে ২০১২ সালে বেছে নেয়া কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ও ২০১৭ সালে দায়িত্ব দেয়া কে এম নুরুল হুদার নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারেনি। দলটি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে ফিরে গেছে। তাদের দাবি, সেই সরকার এসেই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।
জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নতুন নির্বাচন কমিশনকে ‘আওয়ামী আমলানির্ভর’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, এদের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না।
তবে ওবায়দুল কাদের বিবৃতিতে বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের সম্মানিত সদস্যরা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সততা-নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। দেশের মানুষ যাতে ভোটের মাধ্যমে তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে সে বিষয়টি সুনিশ্চিত করবেন। আমাদের প্রত্যাশা, তারা অতীতে যে যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখিয়েছেন, ভবিষ্যতেও সেভাবে দেশবাসীর প্রত্যাশা পূরণ করবেন।’
নতুন নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে ‘অযৌক্তিক ও বিতর্কিত মন্তব্যের মাধ্যমে’ বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সব রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুরোধও জানান আওয়ামী লীগ নেতা।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে অন্য সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজ সাধুবাদ জানালেও বিএনপি নেতারা এ নিয়ে চিরাচরিতভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নেতিবাচক ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য অব্যাহত রেখেছেন।
‘বিএনপি নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই, তারা এটি মানেন না। প্রকৃতপক্ষে বিএনপির প্রতি দেশের জনগণের কোনো প্রকার আগ্রহ নেই এবং তারা সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন ও হতাশাগ্রস্ত একটি রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে।’
ওবায়দুল কাদেরের অভিযোগ, ‘রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের ফলেই বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ভয় পায়। তাদের লক্ষ্য নির্বাচন নয়, হত্যা-ক্যু ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করা। আর সে জন্যই তারা সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানটির প্রতি অবজ্ঞা দেখিয়ে কার্যত গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে।’