বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নির্মাণের মাস না পেরোতেই রাস্তায় ফাটল

  •    
  • ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ০৮:৪৭

নাদামপুর বাজারের তরুণ ব্যবসায়ী রাজু মিয়া বলেন, ‘আমার দোকানের সামনেই গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা জানি, গাইড ওয়ালে জিও ব্যাগ দেয়া হয়, কিন্তু এখানে দেয়া হয়েছে ছালার বস্তা (চটের বস্তা)। এ ছাড়া বস্তার ভেতরে বালু-সিমেন্ট মিশিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে শুধু বালু।’

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে একটি রাস্তায় গাইড ওয়াল (সুরক্ষা প্রাচীর) নির্মাণের মাস না পেরোতেই ফাটল দেখা দিয়েছে।

১৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৯ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই গাইড ওয়ালটি নিয়ে নির্মাণের সময়ই ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আনেন স্থানীয়রা। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেই বাধা উপেক্ষা করেই কাজ সম্পন্ন করেছে।

বরাদ্দ কমের কারণে পরিপূর্ণ কাজ না হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন উপজেলা সহকারী উপপ্রকৌশলী। নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, সরেজমিন পরিদর্শন করে কাজের অনিয়ম পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয়রা জানান, নবীগঞ্জ-রুদ্রাগ্রাম সড়ক দিয়ে প্রতিদিন বাউসা ইউনিয়নের ৩০ থেকে ৩৫টি গ্রামের কয়েক লাখ মানুষের যাতায়াত। সড়কটির উত্তর পাশ দিয়ে বয়ে চলা শাখা বরাক নদীর কারণে প্রায়ই বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দেয়।

দুই বছর ধরে সড়কের নাদামপুর এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। একাধিকবার সেটিকে জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সবশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ওই অংশে গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৯ টাকা বরাদ্দ হয়।

গত বছরের মে মাসে গাইড ওয়াল নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে নবীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডি। কাজ পায় মীম এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। একই বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গাইড ওয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করে।

নির্মাণের শুরু থেকে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এ কারণে স্থানীয়রা কাজ বন্ধ রাখতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান করেন। তবে তারা কাজ চালিয়ে যান।

ওই গাইড ওয়াল নির্মাণের এক মাস না পেরোতেই দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। স্থানীয়দের আশঙ্কা, বৃষ্টির মৌসুমের শুরুতেই ফের ভেঙে পড়বে গাইড ওয়াল ও সড়কের নাদামপুর অংশটি।

নাদামপুর বাজারের তরুণ ব্যবসায়ী রাজু মিয়া বলেন, ‘আমার দোকানের সামনেই গাইড ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা জানি গাইড ওয়ালে জিও ব্যাগ দেয়া হয়, কিন্তু এখানে দেয়া হয়েছে ছালার বস্তা (চটের বস্তা)। এ ছাড়া বস্তার ভেতরে বালু সিমেন্ট মিশিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে শুধু বালু। এখন এই বস্তাগুলো বৃষ্টিতে ভিজবে আর রোদে শুকাবে। এতে বস্তা পঁচে আবার ভাঙন দেখা দেবে।’

নাদামপুর গ্রামের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গাইড ওয়াল নির্মাণের সময় ঠিকাদার ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। যে কারণে কাজ চলাকালীন গ্রামের ময়-মুরব্বি ও যুবসমাজ কাজ বন্ধ রাখতে ঠিকাদারকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি গ্রামবাসীর কথা না শুনেই কাজ শেষ করেছেন। এখন ১৫ দিন যেতে না যেতেই গাইড ওয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।’

হুমায়ূন কবির আজিম বলেন, ‘বস্তার ভেতরে বালু আর সিমেন্টের মিশ্রণ দেয়ার কথা, যাতে বস্তা পঁচে গেলেও মিশ্রণটা থাকে। কিন্তু এখানে শুধু বালু দেয়া হয়েছে। যে কারণে আগামী বৃষ্টির মৌসুমেই গাইড ওয়ালটি ভেঙে পড়বে।

‘এ ছাড়া নিচে যে ওয়াল দেয়া হয়েছে সেটিও একেবারে হালকা। যে কারণে এক মাস যেতে না যেতেই সেটিতেও বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে।’

তবে কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি মীম এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার সজল মিয়ার। তিনি বলেন, ‘শিডিউলে যেভাবে বলা হয়েছে আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। শিডিউলে ছিল চটের বস্তা, এখানে আমি জিও ব্যাগ নিয়ে আসি। যে কারণে এখানে আমার এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন গাইড ওয়ালের জয়েন্টে একটু ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে ক্ষতি হবে না।’

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘কাজের সময় স্থানীয় লোকজন আমার কাছ থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছেন। আমি সেটি না দেয়ার কারণে আমার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন।’

নবীগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির সহকারী উপপ্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, ‘যে কাজটি করা হয়েছে, সেটিতে বরাদ্দ ছিল সাড়ে ১৫ লাখের মতো। অথচ এটির জন্য বাজেট প্রয়োজন ছিল কোটি টাকার ওপরে। তবে এই বাজেটের মধ্যে যে শিডিউল তৈরি করা হয়েছিল, সেই মোতাবেক কাজ হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।’

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মহিউদ্দিন বলেন, ‘কাজে অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমি নিজে ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করব। যদি কোনো অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর