ভোলার একটি স্কুলে রাতেও জাতীয় পতাকা টানিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে। জেলার সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ২০১ নং শিবপুর কালিকীর্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সোমবার সকালে টাঙানো পতাকা মঙ্গলবার রাতেও ছিল।
জাতীয় পতাকা আইন অনুযায়ী, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্তের মধ্যেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও নামাতে হবে। রাতে পতাকা উত্তোলন করে রাখা যায় না।
ভাষার মাসে এভাবে জাতীয় পতাকার অবমাননায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকার মানুষজন। এ জন্য তারা স্কুলটির শিক্ষকদের দায়িত্বে চরম অবহেলার অভিযোগ তুলেছেন।
স্থানীয় আলামিন হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষিকারা এসে স্কুলের ছেলেদের দিয়ে পতাকা উত্তলোন করে। তবে তারা আর পতাকা নামায়নি। সোমবার রাতেও বিদ্যালয়ের পতাকা উড়েছে, মঙ্গলবারও ছিল। দুই রাতে জাতীয় পতাকা উড়লেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পতাকা নামানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
আব্দুর রহমান নামের আরেকজন বলেন, ‘৩০ লাখ শহীদ ও ৩ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছি। এর অবমাননা মেনে নেয়া যায় না।’
মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জাতীয় পতাকার অবমাননার অর্থ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীন বাংলাদেশকে অস্বীকার করা। শিক্ষকরা যদি জাতীয় পতাকার সম্মান নষ্ট করেন, তাদের কাছ থেকে নতুন প্রজন্ম কী শিখবে? এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল নাকি ইচ্ছাকৃত সেটি খুঁজে বের করা দরকার।’
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আয়েশা বেগমের সঙ্গে ফোনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্কুলটির সহকারী শিক্ষিকা ফাহামিদা সুলতানা বলেন, ‘সরকারি বিধিনিষেধ অনুযায়ী বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান হয়, আমাদের কোনো পিয়ন নেই, তাই আমরা নিজেরাই পতাকা উত্তোলন ও নামিয়ে থাকি। সে দিন স্থানীয় একজনকে পতাকা নামানোর দায়িত্ব দেয়া হলেও তিনি ভুলে গেছেন। এ ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।’
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ভারপ্রাপ্ত শিরিন সুলতানা বলেন, ‘শিবপুর কালিকীর্তি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রাতে জাতীয় পতাকা উড়ছে এমন খবর পেয়ে পতাকা নামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে অবহেলা পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ভোলা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, রাতে স্কুলে পতাকা উড়ার বিষয়টি অবমাননার শামিল। জাতীয় পতাকা উত্তোলনের আইন ভঙ্গ করা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। ঘটনার তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর একই ইউনিয়নের ২৪ নং দক্ষিণ পশ্চিম শিবপুর শরীফ সরদার বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাতে পতাকা টানিয়ে রাখার ঘটনা ঘটে। সে ঘটনায় ওই স্কুলের পাঁচ সহকারী শিক্ষককে অসদাচরণ ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়।