ভারতের কর্ণাটকে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। হিজাব পরায় বিধিনিষেধ বাতিল না হলে দেশটির অভিমুখে যাত্রার হুমকি দিয়েছে দলটি।
রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেটে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে এ বিক্ষোভ করে দলটি।
বিক্ষোভ মিছিলে ভারতে কর্ণাটক রাজ্যে হিজাব নিষিদ্ধের প্রতিবাদে স্লোগান দেয়া হয়।
সেই সঙ্গে দেশে মদ পান-বিক্রয়ে অনুমতি ও তেল, গ্যাস, পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানান তারা।
বিক্ষোভ মিছিলটি বিজয়নগর পার হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ের কাছাকাছি গেলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে মিছিল শেষ করেন বিক্ষোভকারীরা।
এর আগে বায়তুল মোকাররমে সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ভারত বোরকা, হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। সেখান থেকে ইসলামকে বিদায় দেয়ার চক্রান্ত করছে।’
কর্ণাটকের উদুপি জেলার একটি সরকারি কলেজে ৩১ ডিসেম্বর পোশাক নিয়ে বিধিনিষেধ দেয়া হয়। এতে মুসলিম ছাত্রীরা ক্লাস চলাকালে হিজাব বা নেকাব পরে থাকতে পারবেন না বলে জানানো হয়।
কলেজ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই দিনই প্রতিবাদ করেন ছয় শিক্ষার্থী। সময়ের সঙ্গে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। হিজাব পরার পক্ষে-বিপক্ষে বিক্ষোভ অনেক জায়গাতেই সহিংস রূপ নেয়।
হিজাব নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়া উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে। এই ইস্যু এখন গড়িয়েছে আদালতে।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘যদি ভারত সরকার হিজাব পরায় বিধিনিষেধ না তুলে নেয়, তাহলে বাংলাদেশ থেকে আমরা প্রয়োজনে ভারতের দিকে অভিযান চালাব।’
এ সময় গত বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেদ্র মোদির সফর ঘিরে নাশকতার অভিযোগে গ্রেপ্তার আলেমদের মুক্তি দাবি করেন তিনি।
মদের লাইসেন্স দেয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘মতিয়া চৌধুরী ২০১৮ সালে সমাবেশে বলেছেন, বিএনপি মদের লাইসেন্স দিয়ে যুব সমাজকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে। আর আপনি কি ২১ বছরের সন্তানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে তাদের চরিত্রকে উত্তম করার চেষ্টা করছেন?’
‘অ্যালকোহল নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা, ২০২২’ প্রণয়ন করেছে সরকার। সেখানে বলা হয়েছে, ২১ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তিকে মদ পানের অনুমতি দেয়া যাবে না। এর বেশি বয়সী যে কেউ অনুমতির জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে মুসলিমদের ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর পদমর্যাদার কোনো ডাক্তারের সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।
মদ বিক্রির বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেন ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা। বলেন, ‘কোরআন ও ইসলাম যেহেতু মদকে নিষিদ্ধ করেছে, আমাদের উচিত সরকারের এই চেষ্টার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আন্দোলন গড়ে তোলা।’
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসে গ্যাস ও তেলের দাম বাড়ছেই। পানি ও চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে। মানুষ কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে সেই চিন্তা সরকারের নেই।’
মদ নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, ‘আপনারা কোরআনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবেন আর এ দেশের মমিনরা বসে থাকবে এটা ভাবলে চলবে না। আল্লাহপাকের বিধান ধরে রাখার জন্য এ দেশের মানুষের রক্ত ঝরবে, জীবন দেবে।’
দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, ভারতে হিজাবের ওপর বিধিনিষেধে আপনারা নিন্দা জানান।’
মদের লাইসেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার চাইছে মুদি দোকানের মতো মদ বিক্রি হবে। আমরা মুসলমানরা সেটা হতে দেব না।’