বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বালুখেকো সুরুজ্জামাল বেপরোয়া

  •    
  • ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ২২:৩৫

অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল বলেন, ‘আমার এক শ্যালক শেখ হাসিনার পার্সোনাল গোয়েন্দা, একজন দেওয়ানগঞ্জের সাংবাদিক। এইগলা নিউজটুউজ করেন না। খরচপাতি নিয়া আসিয়া মিলমিস করি দেও। একলা তো বড়লোক হওয়া যায় না। দশে মিলে করি কাজ হারিজিতি নাহি লাজ, বোঝেন নাই?’

চারটি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের বালু তুলে লোপাট করছেন কুড়িগ্রাম রৌমারীর আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল মিয়া। প্রশাসনের বাধা ও আদালতের নিষেধ মানছেন না তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সুরুজ্জামাল রাজনৈতিক প্রভাবে বিধিনিষেধের তোয়াক্কা করছেন না। তিনি ব্রহ্মপুত্র নদে অবৈধভাবে চার ড্রেজার মেশিন বসিয়ে পাইপ দিয়ে টেনে নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণ বালু। এতে ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। আগে ধরা পড়ে আদালতে মুচলেকা দিলেও ফের তৎপর হয়েছেন বালু লুটে। বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে তিনি ব্রহ্মপুত্র নদের বালু তোলা অব্যাহত রেখেছেন।

রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল মিয়ার অবৈধ কাজে বাধা দিতে ভয় পান স্থানীয়রা। প্রশাসনের লোকজনকে 'ম্যানেজ' করেই তিনি চলেন বলে এলাকাবাসীর দাবি।

তারা জানান, আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ বালু ব্যবসা চলছে প্রকাশ্যেই। গ্রামবাসী ভয়ে প্রতিবাদ করেন না। প্রশাসনের লোকজন এলাকায় ঘুরে গেলেও ব্যবস্থা নেয় না। বালু লুটের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন সুরুজ্জামাল ও তার ছেলেরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে পাশাপাশি রয়েছে ৪টি ড্রেজার মেশিন। তার মাধ্যমে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এসব ড্রেজারের পাইপে যোগ করা আছে ৫ থেকে ১০টি অতিরিক্ত শ্যালো মেশিন।

স্থানীয় লোকজন জানান, ২০২১ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীরের ধনারচরের গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রামের রৌমারী আমলী আদালত স্ব-প্রণোদিত হয়ে একটি আদেশ জারি করে।

আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল মিয়া, তার দুই ছেলে আতিকুর রহমান ও আজিজুর রহমানসহ ৪২ ড্রেজার মালিকের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় পুলিশ। এরপর আদালত তাদের বিরুদ্ধে গতবছর ২৫ আগস্ট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এর আগে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম ফেরদৌস ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানের সময় সুরুজ্জামাল, তার দুই ছেলে সহ কয়েকজন হামলা চালায়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত তখন তিনজনকে আটক করার পাশাপাশি বালু উত্তোলনে ব্যবহার করা পাইপ ধ্বংস করে। পরে সুরুজ্জামালসহ তিনজন ড্রেজার মেশিন না চালানোর শর্তে মুচলেকা দিয়ে মুক্ত হন।

গোলাবাড়ি আকন্দপাড়া গ্রামের বালু ব্যবসায়ী মোকবুল হোসেন বলেন, ‘২০২১ সালের আগস্টে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর আমরা আদালতে আত্মসমর্পণ করে বালু না তোলার শর্তে জামিন পেয়েছি। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা বালু উত্তোলন বন্ধ রেখেছি। কিন্তু আওয়ামীলীগ নেতা ও তার দুই ছেলেসহ পাঁচ-ছয় এখনও বালু উত্তোলন করছেন।’

স্থানীয় বাসিন্দা সাগর আলী বলেন, ‘সুরুজ্জামাল কয়েক বছর আগে স-মিলের ব্যবসা করতেন। এরপর বালু ব্যবসায়ে নামেন। সরকারি জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারেন না। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি এলাকার মানুষকে কোনঠাসা করে রেখেছেন।’ ওই এলাকার রহমত আলী বলেন, ‘অবাধে বালু তুললে নদের ভাঙন আরও বেড়ে যাবে। সুরুজ্জামাল অসীম ক্ষমতাধর। তিনি আইনের কোনো তোয়াক্কা করেন না। প্রশাসনের লোকজনকে ম্যানেজ করে তিনি ড্রেজার মেশিনের সংখ্যা বাড়িয়ে বালু ব্যবসা প্রসারিত করছেন।

‘তিনি দলের নাম ভাঙিয়ে নানা অপরাধ করছেন। তার কারণে মানুষ অতিষ্ঠ। এতে আওয়ামী লীগের ক্ষতি হচ্ছে।’ এই বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল বলেন, ‘আমার এক শ্যালক শেখ হাসিনার পার্সোনাল গোয়েন্দা, একজন দেওয়ানগঞ্জের সাংবাদিক। এইগলা নিউজটুউজ করেন না। খরচপাতি নিয়া আসিয়া মিলমিস করি দেও। একলা তো বড়লোক হওয়া যায় না। দশে মিলে করি কাজ হারিজিতি নাহি লাজ, বোঝেন নাই?’

রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোন্তাছের বিল্লাহ বলেন, ‘এই ধরনের কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কেউ যদি অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেন, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল ইমরান বলেন, ‘আমার কাছে যেসব অভিযোগ এসেছে, সেসব বন্ধ করা হয়েছে। এরপরও কেউ যদি ড্রেজার মেশিন চালু করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর