বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দুপুরের খাবার ১৫ টাকায়

  •    
  • ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৮:১১

রাজশাহী শহরের রিকশাচালক মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘১৫ টাকায় খাবার এখন তো তেমন পাওয়া যায় না। আগে দুপুরে পুরি, শিঙাড়া বা হালকা কিছু খাইতাম। তখন আমাদের অন্তত ২০-৩০ টাকা চলে যেত। তাও পেট পুরে খেতে পারতাম না। এখন ১৫ টাকায় পেট পুরে খেতে পারলাম।’

বেলা দেড়টা। রাজশাহী সার্কিট হাউস রোড। গাছের নিচে বসে খাচ্ছেন বেশ কয়েকজন। তাদের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। দেখে যে কারও মনে হতে পারে পিকনিক চলছে। তবে বিষয়টি সে রকম নয় মোটেও।

যারা খাচ্ছেন তাদের বেশির ভাগই রিকশাচালক। মাত্র ১৫ টাকার বিনিময়ে তাদের দুপুরের খাবার দেয়া হচ্ছে। সস্তা দামের এই খাবারের আয়োজন করেছেন স্থানীয় একদল তরুণ।

‘ফুড ফর রাইডার’ নামে ব্যানার টাঙিয়ে তারা প্রতিদিন দুপুরের খাবার খাওয়াচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষকে।

শ্রমজীবীদের নিয়ে এই ভাবনার উদ্যোক্তা ইমতিয়াজ দীপন নামে একজন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি এই কার্যক্রম শুরু করেন।

প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে খাবার নিয়ে অবস্থান করেন রাজশাহী নগরীর সার্কিট হাউস রোডে, গণপূর্ত অফিসের সামনে। ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক রিকশাচালকদের ডেকে ডেকে খাওয়ান। ইমতিয়াজের এই উদ্যোগে সার্বিক সহযোগিতা করছেন নাইমুল ইসলাম সাকিব।

উদ্যোগের সহকারী প্রতিষ্ঠাতা সাকিব জানালেন, তারা এখানে সবাই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেন। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিনই খেতে আসা লোকজনের সংখ্যা বাড়ছে। এখন প্রতিদিন ৭০ জনকে তারা খাওয়াচ্ছেন।

১৫ টাকা করে দাম নেয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এখানে যারা খাবেন তারা যেন কেউ অস্বস্তিতে না পড়েন, কারও দয়া নিচ্ছেন এমন মনে না করেন সে জন্যই এই দামটা ধরা হয়েছে। করোনাকালে রিকশাচালকসহ বিভিন্ন রাইডারের কর্মীরা আমাদের অনেক বেশি উপকার করেছেন। সে জন্যই আমরা তাদের জন্য কিছু করতে এই উদ্যোগ নিয়েছি।

‘এখানে লজ্জার কিছু নেই। তারা তো টাকা দিয়ে কিনেই খাচ্ছেন। আমরা শুধু কম দামে তাদের খাবার দিচ্ছি। নিম্ন আয়ের মানুষ অনেকেই টাকার অভাবে এটা সেটা কিনে খেয়ে দিন পার করে। আমাদের এই উদ্যোগ তাদের অন্তত এক বেলা পেট পুরে খাবারের ব্যবস্থাটা করতে পারছে।’

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের ভ্যানচালক জাহিদ হাসান খেতে এসেছেন। শুরুতে একটি ওয়ানটাইম থালা দেয়া হলো তাকে। এরপর একে একে দেয়া হলো সব খাবার। ভাত, ডাল, সবজি সঙ্গে মুরগির মাংস।

খাওয়া শেষে জাহিদ বলেন, ‘আমি শুরুতে ভেবেছিলাম এখানে হয়তো তারাই খাচ্ছে বা পিকনিক করছে। পরে তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এখানে এসে আমিও খেলাম। ভাত, ডাল, সবজি ও মাংস। এই খাবার সাধারণত দুপুরে আমার খাই না। হালকা কিছু খেয়ে আমরা কাজ করি। কিন্তু এখানে মাত্র ১৫ টাকায় খাবার পেয়ে খেতে পারলাম। এখন থেকে দুপুরে এখানে এসেই খেয়ে যাব।’

রাজশাহী শহরের আরেক রিকশাচালক মো. আলাউদ্দিন খেয়ে উঠে হাত মুছছিলেন। তিনি বলেন, ‘১৫ টাকায় খাবার এখন তো তেমন পাওয়া যায় না। আগে দুপুরে পুরি, শিঙাড়া বা হালকা কিছু খাইতাম। তখন আমাদের অন্তত ২০-৩০ টাকা চলে যেত। তাও পেট পুরে খেতে পারতাম না। এখন ১৫ টাকায় পেট পুরে খেতে পারলাম। আমাদের খাওয়াটাও স্বাস্থ্যসম্মত হচ্ছে। পাশাপশি আমাদের খরচও কম হচ্ছে।’

ফুড ফর রাইডারের উদ্যোক্তা ইমতিয়াজ দীপন বলেন, ‘অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্য নিয়েই এ কাজটি শুরু করেছি। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতিদিনই মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে যে খাবার দিচ্ছি তার দাম ৬০-৭০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু ১৫ টাকায় দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা কারও সহযোগিতা ছাড়াই এটি করছি। যতদিন সম্ভব এটি চালিয়ে যাব।’

এ বিভাগের আরো খবর