ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দ্বিতীয় ধাপে নরসিংদীর রায়পুরায় ব্যাপক প্রাণহানির জেরে আড়াই মাস পর সহিংসতায় আরো দুই জনের মৃত্যু হলো।
গত নভেম্বরে সহিংসতায় প্রাণহানির পর এলাকা ছাড়তে বাধ্য হওয়া নৌকার সমর্থকরা রোববার এলাকায় ফিরতে গেলে বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে পরাজিত নৌকার প্রার্থীর চাচাত ভাই ও বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীর এক সমর্থক নিহত হন।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় নরসিংদীতে ১৫ দিনে ১০ প্রাণহানি হয়। এর মধ্যে ভোটের আগের দিন রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহত হন তিন জন।
দ্বিতীয় ধাপের ভোট হয় গত ১১ নভেম্বর। তাতে জয়ী হন নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী জাকির হোসেন রাতুল। পরাজিত হয়ে এলাকা ছাড়েন নৌকার প্রার্থী আশরাফুল হক ও তার লোকজন।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাকির ও আশরাফুলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব বেশ পুরনো। দ্বিতীয় ধাপের ইউপির ভোটের জেরে তা আরও তীব্র হয়। বেশ কয়েকবার দুইপক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়ায়। এর মধ্যে গত ১০ নভেম্বর সংঘর্ষে দুইপক্ষের ৩ জন নিহত হন।
দ্বিতীয় ধাপের ভোটে বাঁশগাড়ীর প্রতিবেশি ইউনিয়ন মির্জারচরেও জয় পান নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী জাফর ইকবাল মানিক। সেখানেও এলাকাছাড়া হন নৌকার প্রার্থী ফারুকুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, দুই ইউনিয়নের জয়ী চেয়ারম্যানরা একজোট। দুই ইউনিয়নেরই পরাজিত নৌকার প্রার্থীরা ভোটের পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। নিজেদের মধ্যে যোগসাজশ করে বাঁশগাড়ীর আশরাফুল ও মির্জারচরের জাফর রোববার নিজ নিজ গ্রামে ফেরার উদ্যোগ নেন।
রায়পুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোবিন্দ সরকার জানান, রোববার দুপুরে আশরাফুল ও তার লোকজন বাঁশগাড়ীতে ফেরেন। তাদেরকে প্রতিহত করতে যায় চেয়ারম্যান জাকিরের লোকজন। সেখানে এক দফা দুইপক্ষের সংঘর্ষ হয়।
ধাওয়া খেয়ে বিকেলে আশরাফুল বাহিনী মির্জারচরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সে সময় মির্জারচরে ফেরেন সেখানকার পরাজিত নৌকার প্রার্থী ফারুকুল ও তার লোকজন। তাদের আবার প্রতিহত করতে যায় সেই ইউপির চেয়ারম্যান জাফর।
খবর পেয়ে বাঁশগাড়ীর চেয়ারম্যান জাকিরের বাহিনী মির্জারচরে উপস্থিত হন। এরপর সেখানে জাকির-জাফর বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আশরাফুল-ফারুকুল বাহিনী।
এ ঘটনা নিহত হন ফারুকুলের চাচাত ভাই রুবেল মিয়া ও জাফরের সমর্থক হিসেবে এলাকায় পরিচিত মামুন মিয়া। আহত হন অন্তত আট জন।
সংঘর্ষের বিষয়ে মিজারর্চর ইউনিয়নের পরাজিত প্রার্থী ফারুকুল বলেন, ‘বাশঁগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে মিজারর্চর থেকে আমার লোকজন বাশঁগাড়ী যায়। সেখানে তাদের ধাওয়া দিয়ে মিজার্চর পাঠালে বাশঁগাড়ীর জাকির চেয়ারম্যানের হয়ে মিজার্চরের জাফর চেয়ারম্যানের লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। ওই সময় প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলিতে আমার চাচাতো ভাই রুবেল মারা যায়।’
অভিযোগ অস্বীকার করে মিজারর্চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাফর বলেন, ‘মূলত বাশঁগাড়ীর সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল ও মিজার্চরের ফারুকুল ইসলাম এক গ্রুপ। তারা একে অপরকে বরাবরই সহায়তা করে।
‘রোববার আশরাফুলের লোকজনকে গ্রামে তুলে দিতে ফারুকুলের লোকজন লাঠিয়াল হিসেবে বাশঁগাড়ী যায়। সেখানে জাকির চেয়ারম্যানের লোকজন তাদের বাধা দেয় এবং ধাওয়া খেয়ে মিজারর্চর এসে তারা গণ্ডগোল করেন। এতে আমার লোকজন বাধা দিতে গেলে আমার সমর্থক এক জন নিহত হয়। এখানে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ ঘটনায় আমার ৪/৫ জন লোক আহত হয়েছে।’
তবে সংঘর্ষের বিষয়ে বাঁশগাড়ীর চেয়ারম্যান ও পরাজিত প্রার্থীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পুলিশ কর্মকর্তা গোবিন্দ বলেন, পরাজিত প্রার্থীদের গ্রামে ফেরা নিয়েই মূলত সংঘর্ষ হয়। এলাকার পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে মোতায়েন করা আছে। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভৈরবসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।