বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল আসন্ন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। গতকাল বুধবার তিনি নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। শুধু তামিম নন, সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন আরও বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর সাংবাদিকদের তামিম বলেছেন, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করেন।বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমিসহ প্রায় ১৪ থেকে ১৫ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছি। প্রত্যাহারের কারণটা খুবই স্পষ্ট। আমার কাছে মনে হয় না বিস্তারিতভাবে আপনাদের কিছু বলার দরকার আছে। নির্বাচন কোন দিকে যাচ্ছে, এই জিনিসটা এখন পরিষ্কার। যখন যেমন মনে হচ্ছে, যখন যা মনে হচ্ছে, তখন তা করা হচ্ছে। এটা আসলেই নির্বাচন নয়, ক্রিকেটের সঙ্গে এই জিনিসটা কোনো দিক থেকেই মানায় না।’তামিমের ভাষায়, ‘যারা নাম প্রত্যাহার করেছেন, তারা সবাই হেভিওয়েট, তাদের ভোটব্যাংকও শক্তিশালী। এটা একটা প্রতিবাদ। দিন শেষে এই নোংরামির অংশ হয়ে আমরা থাকতে পারব না। বাংলাদেশ ক্রিকেট এটা ডিজার্ভ করে না। যারা এভাবে নির্বাচন করতে চান, তারা করতে পারেন। তবে আজ ক্রিকেট শতভাগ হেরে গেছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আপনারা বড় গলায় বলেন বাংলাদেশে ফিক্সিং বন্ধ করা লাগবে, আগে নির্বাচনের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তা করেন। পরে ক্রিকেটের ফিক্সিং বন্ধ করার চিন্তা করেন। এই নির্বাচন বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য একটা কালো দাগ হয়ে থাকল।’তামিমের মতোই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এক্সিউম ক্রিকেটার্স থেকে পরিচালক পদে প্রার্থিতার মনোনয়ন প্রত্যাহার করা ইসরাফিল খসরু। নির্বাচনে সরকারের একটি গোষ্ঠীর হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, ‘সরকারের একটি গোষ্ঠী এখানে নগ্নভাবে হস্তক্ষেপ করছে। আপাতত এটুকুই বলতে পারি। আমাদের পুরো বক্তব্য শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।’মনোনয়ন প্রত্যাহারের বিষয়ে ইসরাফিল খসরু বলছেন, ‘এখানে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ দেখছি না। খুবই দুঃখজনক ব্যাপার যে, বিসিবির নির্বাচনে এই পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়াটাই ছিল অস্বচ্ছ।’ তিনি আরও বলেন, ‘জেলা-বিভাগের কাউন্সিলরদের ফোন করে প্রভাব বিস্তার করা হয়েছে। এ রকম উদাহরণ আমরা বিভিন্নভাবে পেয়েছি। আবার ১৫টি ক্লাব নিয়ে স্বেচ্ছাচারিতা দেখছি। নতুন বাংলাদেশে আমরা এ রকম নির্বাচন দেখতে পারি না। নির্বাচন ম্যানুফেকচার করা হচ্ছে, এমনটা হতে পারে না। তাই নৈতিক জায়গা থেকে আমরা এই অবস্থান নিয়েছি।’সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন ইন্দিরা রোড ক্লাবের হয়ে পরিচালক পদে নির্বাচন করতে চাওয়া রফিকুল ইসলাম। তিনি গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা শেষ পর্যন্ত কেন টিকেনি? রফিকুল বলেছেন, ‘আমরা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চেয়েছিলাম। ২০০৫ সালে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন দেখেছিলাম। আমরা তেমন একটা নির্বাচন চেয়েছিলাম। সমঝোতার কথাটা হাওয়ায় উড়ে বেরিয়েছে, কোনো সঠিক তথ্য ছিল না।’শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিসিবি নির্বাচন থেকে ১১ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। ক্যাটাগরি-১ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন মির হেলাল, ক্যাটাগরি-৩ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন সিরাজ উদ্দিন আলমগীর।ক্যাটাগরি-২ থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন তামিম ইকবাল, সাইদ ইবরাহিম (বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদের ছেলে), ইসরাফিল খসরু (বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে), রফিকুল ইসলাম বাবু, বোরহানুল পাপ্পু, মাসুদুজ্জামান, আসিফ রব্বানি, মির্জা ইয়াসির আব্বাস (বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের ছেলে) ও সাব্বির আহমেদ রুবেল।চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা গতকাল বুধবার দুপুর ২টায় ঘোষণা করার কথা নির্বাচন কমিশনের।বিসিবি নির্বাচনে যাচাই-বাছাই ও শুনানি শেষে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় নাম ছিল ৫০ জনের। গতকাল বুধবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন ১৬ জন। অর্থাৎ ৬ অক্টোবরের নির্বাচনে ২৫টি পরিচালক পদের জন্য ৩টি ক্যাটাগরিতে নির্বাচনে অংশ নেবেন ৩৩ প্রার্থী।মনোনয়ন প্রত্যাহার করা প্রার্থীরা ‘ব্যক্তিগত কারণে’ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ড. শেখ জোবায়েদ হোসেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে বিসিবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘তিনটি ক্যাটাগরিতে মোট ১৬টি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য আবেদন জমা পড়েছে। সেই মোতাবেক আমরা প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছি।’ইতোমধ্যে জেলা-বিভাগের ক্যাটাগরিতে ১০ পরিচালকের ৬ জনই অবশ্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। খুলনা বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার ও সাবেক নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক এবং জুলফিকার আলী খান। বরিশাল থেকে শাখাওয়াত হোসেন এবং সিলেটের রাহাত সামসও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আগেই নির্বাচিত হয়েছেন।গতকাল বুধবার চট্টগ্রাম ও রাজশাহী থেকে একটি করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার হয়েছে। এতে করে চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবির পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর ও আহসান ইকবাল চৌধুরী।
সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগে সরে দাঁড়ালেন তামিম ইকবাল
এ বিভাগের আরো খবর/p>