নরসিংদীতে সহিংসতা ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন। প্রচার ও ভোটের দিনের সহিংসতায় তিন ইউপিতে এখানে মাত্র ১৫ দিনে প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। পুলিশসহ আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ।
স্থানীয়রা বলছেন, নরসিংদীর চরাঞ্চলগুলোতে আগে থেকেই সংঘর্ষ হয়ে আসছে। তুচ্ছ ঘটনায়ও এখানকার বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। নির্বাচন সেই দ্বন্দ্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
তাদের অভিযোগ, এখানে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সংঘর্ষ থামাতে রাজনৈতিক দলের নেতারা কখনও পদক্ষেপ নেননি, বরং তারা এটিকে ব্যবহার করে আসছেন। এ কারণে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বজায় রাখা ও প্রতিপক্ষকে দমাতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মেতে উঠেছিলেন গ্রামপতিরা।
দেশে দ্বিতীয় দফায় ইউপি নির্বাচনে নরসিংদী সদর উপজেলার দুটি এবং রায়পুরার ১০টিতে ভোট হয় ১১ নভেম্বর। নির্বাচনকে ঘিরে এখানে বিভিন্ন বিবাদী দল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ১০ জন হলেন বাঁশগাড়ি গ্রামের সালাউদ্দিন মিয়া, দুলাল মিয়া ও জাহাঙ্গীর; কাচারিকান্দি এলাকার সাদিব মিয়া ও হিরণ মিয়া; নেকজানপুর গ্রামের আমির হোসেন ও একই গ্রামের আশরাফুল, খুশি বেগম এবং অজ্ঞাতপরিচয় একজন।
স্থানীয়রা জানান, নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল চারটি। এর মধ্যে আলোকবালী, চরদীঘলদী ও করিমপুরে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। রায়পুরার চরাঞ্চলেও নিয়মিত সংঘর্ষ হয়। এখানে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আগে থেকেই একাধিক পক্ষ রয়েছে, নির্বাচনে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব তাতে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
জেলায় নির্বাচনি সহিংসতার শুরু রায়পুরার পাড়াতলী ইউনিয়ন থেকে। ২৮ অক্টোবর এখানে দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন।
স্থানীয়রা জানান, ইউনিয়নের কাচারিকান্দি এলাকার ইউপি সদস্য শাহ আলম এবং একই গ্রামের ছোট শাহ আলমের মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। এর জেরে ছয় মাস এই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ছোট শাহ আলমের পক্ষের দুজন নিহত হন। ওই ঘটনায় ইউপি সদস্য শাহ আলমের পক্ষের সদস্যরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সেই পক্ষ গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করে।
২৮ অক্টোবর তারা শাহ আলম মেম্বারের সদস্যরা টেঁটা, বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে গ্রামে ঢুকে ছোট শাহ আলমের বাড়িতে হামলা চালান। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ছোট শাহ আলম গ্রুপের সাদির ও হিরন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ঘটনার পাঁচ দিন পর আহত সুলমান মিয়া নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
ওই ঘটনার পর সাব মিয়া নামে একজনকে দুটি পাইপগান ও ৩টি রাবার বুলেটসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
৪ নভেম্বর সংঘর্ষ হয় আলোকবালী ইউনিয়নে। পুলিশ জানায়, আলোকবালীর চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহর মধ্যে আগে থেকেই দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। কিছুদিন আগে তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংষর্ষও হয়।
আলোকবালী ইউপি নির্বাচনে ফের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন আসাদুল্লাহ আসাদ। পরে অবশ্য নেতা-কর্মীদের চাপে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন।
তবে এ নিয়ে আসাদুল্লাহ সমর্থক মেম্বার প্রার্থী রিপন মোল্লা ও দীপু সমর্থক মেম্বার প্রার্থী আবু খায়ের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এর জেরে রিপন মোল্লার সমর্থকরা ৪ নভেম্বর সকালে টেঁটা, বল্লম ও অস্ত্র নিয়ে নেকজানপুর গ্রামে আবু খায়ের সমর্থকদের ওপর হামলা চালান। পরে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। ঢাকায় নেয়ার পথে আরও একজনের মৃত্যু হয়।
রায়পুরার দুর্গম চরাঞ্চল বাঁশগাড়ি ইউপিতে ভোটের আগের রাতে সংঘর্ষে জড়ায় নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থী আশরাফুল হক ও বিদ্রোহী প্রার্থী রাতুল হাসান জাকিরের পক্ষ। আতঙ্ক সৃষ্টি, আধিপত্য বিস্তার ও মাঠ দখল করতে দুই প্রার্থীর সমর্থকরা রাত ৩টার দিকে সংঘর্ষে জড়ান।
বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুলের সমর্থকরা স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকিরের বাড়িতে হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন প্রাণ হারান। আহত হন কমপক্ষে ২০ জন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বাঁশগাড়িতে নিহত সালাউদ্দিনের স্ত্রী আঁখি বেগম জানান, তার স্বামী ঢাকার গাজীপুর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালাতেন। ভোট দেয়ার জন্য তিনি বাড়িতে যান। নৌকার প্রার্থীর লোকজন তাদের বাড়িতে গিয়ে সালাউদ্দিনকে গুলি করে হত্যা করেন।
নিহত জাহাঙ্গীরের বোন ফুলমালা জানান, তার ভাই মালয়েশিয়াপ্রবাসী। ছয় মাস আগে দেশে ফিরে এলাকায় ব্যবসা শুরু করেন। ভোটের দিন সকালে কেন্দ্র দখল করে নৌকা প্রার্থীর লোকজন জাল ভোট দিচ্ছে- এমন তথ্য পেয়ে বের হওয়ার পর নৌকার প্রার্থী আমির হোসেনের পক্ষের গুলিতে তিনি নিহত হন।
ভোটের দিন চসুবুদ্ধি ইউনিয়নেও সংঘর্ষ হয়েছে। এ কারণে মহিষবের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. নাসির উদ্দীন ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী খোরশেদ আলমের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এসআই নিয়ামত ও আনসার সদস্য কাউসারসহ অনেকে আহত হন।
স্থানীয় বাসিন্দা, রাজনীতিবিদ ও পুলিশ জানিয়েছে, নির্বাচনে রায়পুরায় রক্ত ঝরার আরেক কারণ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ায় হতাহত বেশি হয়েছে।
তবে এবার নির্বাচনের সময় হওয়া সংঘর্ষে যুক্ত হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। ১০ জনের সবাই নিহত হয়েছেন গুলিতে।
আগ্নেয়াস্ত্র সহজলভ্য হওয়ার বিষয়টি র্যাবের অভিযানেও বোঝা গেছে। ভোটের দুই দিন আগে ৯ নভেম্বর নরসিংদীর চরাঞ্চলের আলোকবালী, রায়পুরার মির্জারচর ও নিলক্ষাচরে অভিযান চালায় বাহিনীটি। ওই সময় স্বাধীন বাহিনীর সঙ্গে র্যাবের গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
অভিযানে উদ্ধার করা হয় ১টি রিভালবার, রিভালবারের ২টি গুলি, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ১টি শটগান, শটগানের ২৯টি গুলি, ১টি ওয়ান শুটারগান, তিনটি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, ৬টি রামদাসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় ১২ জনকে।
চরাঞ্চলের ভঙ্গুর যোগাযোগব্যবস্থার বিষয়টিও উঠে এসেছে তাদের কথায়। তারা জানান, দুর্গম হওয়ায় এখানে পুলিশের নজরদারি কম। দুর্গম চরাঞ্চল এবং অন্য জেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় খুব সহজেই অপরাধীরা গা ডাকা দিতে পারে।
রায়পুরার একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দুই যুগের বেশি সময় ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রায়পুরায় এমন সহিংস ঘটনা ঘটছে। উপজেলার চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নে প্রায়ই আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে টেঁটা, বল্লম, দা ও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গ্রামবাসী সংঘর্ষে জড়ান। আর এর ফায়দা লোটেন গুটি কয়েক নেতা আর গ্রাম্য মোড়ল।
তারা কখনও এ দল কখনও অন্য দলকে সমর্থন দেন। এভাবেই গ্রামবাসীকে ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ লোটেন মোড়লরা। তবে এবার ভয়াবহ বিষয়টি হলো দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার।
আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের বিষয়টিও উঠে এসেছে। ১০ জনের সবাই মারা গেছেন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইমান উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণেই চরাঞ্চলগুলোতে সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলছে। এত বছরে কোনো হত্যাকাণ্ডের বিচার হতে দেখিনি।
‘সবই নিজেদের আধিপত্য ও স্বার্থ হাসিলের জন্য আপস করে নেয়। আর যারা এগুলো থামাবেন, তারাই এসব নিয়মিত উসকে দিচ্ছেন। চার-পাঁচটা ঘটনার বিচার হলেই এসব থেমে যেত।’
আলোকবালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মামুন হাসান সরকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল আর আধিপত্যের কারণে আজকে আলোকবালীতে এ ধরনের সহিংসতা হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, আলোকবালী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ আসাদ স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ওপর সহিংসতা চালাচ্ছে।
‘আজকে আমি আওয়ামী লীগের লোক হয়েও গত কয়েক বছর ধরে বাড়িছাড়া। শুধু আলোকবালী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ আসাদের কারণে।’
নরসিংদী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘চরাঞ্চলগুলোর এই সহিংসতা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। মূলত আধিপত্য বিস্তারের জন্যই দুই দলে ভাগ হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
‘রাজনৈতিক বিভাজনের সুযোগ নিয়ে তারা এসব চালিয়ে যেতে পারছে। এসব থামাতে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আমরা যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারছি না।’
তবে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জি এম তালেব হোসেন বলেন, ‘আলোকবালীর নির্বাচনি সহিংসতায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্বে হত্যাকাণ্ডটি ঘটে। এর মধ্যে কারও ইন্ধন থাকতে পারে, কিন্তু আমাদের দলীয় কোনো প্রভাব নেই।
‘পুলিশ তদন্ত করে যা পাবে সেটাই হবে। এটাতে আমাদের বলার কিছু নেই। হত্যার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করে যা নিশ্চিত করবে, আমরা তাতেই সহমত পোষণ করব।’
নরসিংদী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান জানান, কাচারিকান্দি ও আলোকবালীর ঘটনায় মামলা হয়েছে। ভোটের দিন সহিংসতায় যারা মারা গেছেন তাদের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চরে সহিংসতা এড়াতে এখনও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ যতই চেষ্টা করুক যদি সমাজের মানুষের মধ্যে পরিবর্তন না আসে, তাহলে এ বর্বরতা কমবে না। আমি রায়পুরা ও সদরের চরাঞ্চলের কয়েকটি বিষয় লক্ষ করে দেখলাম চরাঞ্চলের শিশু-কিশোরদের মধ্যে পর্যন্ত এ ধরনের হানাহানির বিষ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
‘এ বয়সে যারা মাটির পুতুল বা খেলাধুলা নিয়ে থাকার কথা, এমন শিশুরা কাগজ দিয়ে টেঁটা-বল্লম তৈরি করে। আর সেগুলো দিয়েই তারা খেলাধুলা করে। যদি এমনটাই চলতে থাকে, তাহলে চরাঞ্চলের অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।’
আরও পড়ুন:কুড়িগ্রামে শতাধিক দুস্থ অসহায় বাবা মায়ের জন্য ভ্রাম্যমাণ শাড়ি লুঙ্গির হাটের আয়োজন করেছে ফাইট আনটিল লাইট (ফুল) নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
ভ্রাম্যমাণ এ হাটে আট টাকা দরে একটি শাড়ি, একটি লুঙ্গি এবং দুই টাকায় একটি ব্লাউজের পিস বিক্রি করা হয়।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙা ইউনিয়নের কুমোরপুর দাখিল উলুম মাদ্রাসা মাঠে শুক্রবার দুপুরে এসব শাড়ি, লুঙ্গি বিক্রি করা হয়েছে।
আট টাকায় শাড়ি পেয়ে বৃদ্ধ আমেনা বেওয়া বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে একটা শাড়ির দাম নিম্নে ৩০০ টাকা। সেই শাড়ি আট টাকায় পেয়ে খুব উপকার হলো।’
লুঙ্গি পেয়ে হামিদ মিয়া বলেন, ‘৬৫ বছর বয়সে কোন দিন দেহি নাই আট টাহায় এহান (একটা) লুঙ্গি পাওয়া যায়। আইজ সেই আট টাহায় লুঙ্গি কিনলাম। খুব খুশি নাগছে।’
ভোগডাঙা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, “‘ফুল’ দীর্ঘদিন ধরে জেলায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অসহায় বাবা মাকে নিয়ে কাজ করে আসছে। তাদের আজকের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।”
ফাইট আনটিল লাইটের নির্বাহী পরিচালক আবদুল কাদের বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় সামাজিক সংগঠন ফুল শহর গ্রাম ও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষ মাঝে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়নে এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করে আসছে।
‘আমরা ত্রাণে নয়, বিনিময়ে উপহার দিয়ে মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে চাই। তাই অসহায় বাবা-মায়ের কাছে মাত্র আট টাকার বিনিময়ে শাড়ি লুঙ্গি বিক্রি করার ব্যবস্থা করছি।’
আরও পড়ুন:অতি তীব্র দাবদাহের মধ্যে মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়।
সীমান্তবর্তী জেলাটিতে শুক্রবার বেলা তিনটায় ৪২ দশমিক সাত ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জেলায় অতি তীব্র দাবদাহে ওষ্ঠাগত জনজীবন। গরমে একটু স্বস্তি পেতে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিচ্ছেন অনেকে। কেউ কেউ পান করছেন ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর পানীয়।
তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গার হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে গরমজনিত রোগী। এতে ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ।
পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। তা ছাড়া অতি গরমে নষ্ট হচ্ছে ধান, আম, লিচু ও কলাসহ মাঠের অন্যান্য ফসল।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তালতলা গ্রামের কৃষক আবু তালেব বলেন, ‘এই তাপে মাঠে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। ভ্যাপসা গরমে কৃষিকাজ করা যাচ্ছে না।
‘ধানের জমি শুকিয়ে যাচ্ছে। ধানে বেশি সেচ লাগছে, কিন্তু সেচ পাম্পে ঠিকমতো পানিও উঠছে না।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের চুয়াডাঙ্গা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র দাবদাহ অব্যাহত রয়েছে। আগামী তিন দিন এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে।’
দেশের কোনো অঞ্চলের তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেখানে মৃদু তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ বইছে ধরা হয়।
তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তীব্র দাবদাহ ধরা হয়। অন্যদিকে তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে বলা হয় অতি তীব্র দাবদাহ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানায়, চুয়াডাঙ্গা ও যশোর জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের আশুলিয়ায় একটি নির্জন বাঁশবাগানের ভেতর থেকে এক নারী পোশাকশ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
আশুলিয়ার কাঠগড়া নয়াপাড়া এলাকার বাঁশবাগান থেকে শুক্রবার সকালে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।
প্রাণ হারানো আনজু খাতুন আশুলিয়ার নরসিংহপুরের হা-মীম গ্রুপের একটি তৈরি পোশাক কারখানার অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। তার বাড়ি গাইবান্ধা সদর থানার ঘাগুয়া ইউনিয়নে।
পুলিশের ভাষ্য, বাঁশবাগানের ভেতর নারী পোশাকশ্রমিকের মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেয় স্থানীয়রা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ওই নারীর গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্রে দেখা যায়, তিনি হা-মীম গ্রুপের একটি পোশাক কারখানার অপারেটর।
হা-মীম গ্রুপের টিআইএসডব্লিএল-১ কারখানার মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘আনজু খাতুন নামে এক নারী শ্রমিক গতকাল রাত ৯টা ১৫ মিনিটের পরে কারখানা থেকে বাসায় যায়, কিন্তু আজ সকালে তিনি আর কারখানায় আসেননি।
‘পরে লাইনের সুপারভাইজার আনজুকে কল দিলেও সে রিসিভ করেনি।’
আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ভজন চন্দ্র বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে কেউ তাকে (পোশাকশ্রমিক) হত্যা করে ফেলে রেখে যেতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের কারণ উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।’
আরও পড়ুন:লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তের ওপারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু (২২) নামের বাংলাদেশি রাখাল নিহত হয়েছেন।
উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালাংগী বিজিবি ক্যাম্পের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলার এলাকায় শুক্রবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও যুবকের পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে কয়েকজন রাখালসহ শ্রীরামপুর ইউনিয়ন সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলারের ওপারে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় গরু আনতে যান আবুল কালাম ডাকু। গরু নিয়ে ফেরার পথে শুক্রবার ভোররাতে বিএসএফের ডোরাডাবরী ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে ডাকু গুরুতর আহত হলে সঙ্গীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে বাংলাদেশ সীমান্তে। পরে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করলে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে জানান।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ঝালাংগী ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার নুরুল আমিন বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম ডাকু নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। পাটগ্রাম থানা পুলিশ পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিহতের মরদেহের সুরতহাল রিপোর্ট করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদপত্র পাঠিয়ে বিএসএফকে পতাকা বৈঠকের আহ্বান জানানো হয়েছে।’
নিহত যুবকের মা মমতা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে। কী অপরাধের জন্য বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করল জানি না। আমি এই হত্যার বিচার চাই।’
পাটগ্রাম থানার ওসি আবু সাইদ বলেন, ‘বিএসএফের গুলিতে আহত যুবক আবুল কালাম ডাকুকে পরিবারের সদস্যরা পাটগ্রাম হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে মারা যান। সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। এ ঘটনায় একটি ইউডি (অপমৃত্যুর) মামলা করা হবে।’
আরও পড়ুন:মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় তিন চাকার ভ্যানের সঙ্গে কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় দুই সবজি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন।
উপজেলার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ডে শুক্রবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো আবদুস সালাম (৫০) ও ছানোয়ার হোসেন (৪৫) মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রাম এলাকার বাসিন্দা। তারা স্থানীয় কাটিগ্রাম বাজারে সবজির ব্যবসা করতেন।
গোলড়া হাইওয়ে থানার ওসি সুখেন্দু বসু বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সকালে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর বন্দর আড়ত থেকে চাষীদের কাছ থেকে সবজি কিনে তিন চাকার ভ্যানের মাধ্যমে কাটিগ্রাম যাচ্ছিলেন ব্যবসায়ী আবদুস সালাম ও ছানোয়ার হোসেন, কিন্তু ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছালে পাটুরিয়াগামী একটি কাভার্ড ভ্যান ওভারটেক করতে গিয়ে ওই তিন চাকার ভ্যানকে ধাক্কা দেয়।
এতে ঘটনাস্থলেই আবদুস সালাম নিহত হন এবং গুরুত্ব অবস্থায় ছানোয়ার হোসেনকে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি জানান, নিহতদের একজনের মরদেহ সদর হাসপাতালে এবং অপরজনের মরদেহ গোলড়া থানায় রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর কাভার্ড ভ্যানের চালক ও হেলপার পালিয়ে গেলেও কাভার্ড ভ্যানটি জব্দ করা হয়।
এ ঘটনায় গোলড়া থানায় আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন:উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার উদযাপন করা হয়েছে ১৩৭তম বন্দর দিবস।
এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে বন্দর ভবন চত্বরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য ও বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
ওই সময় বোর্ড সদস্য (প্রকৌশল) কমোডর মোহাম্মদ মাহবুবুবর রহমানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পতাকা উত্তোলনকালে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সব জলযান ও জাহাজ থেকে একনাগাড়ে এক মিনিট হুইসেল বাজানো হয়। এরপর বন্দর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহায়েল উপস্থিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বন্দর দিবসের কেক কাটেন ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ওই সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্মচারী পরিষদ, বন্দরের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার ও অন্যান্য সংগঠনের নেতারা।
কর্ণফুলীর মোহনায় ১৩৬ বছর আগে ২৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর। ইংরেজ শাসনামলের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সালামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ সালে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়। ১৮৭৭ সালে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়।
১৮৮৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং নির্মাণ হয়। একই বছরের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। এরপর ১৮৯৯ থেকে ১৯১০ সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার এবং আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে রেলওয়ের সংযোগ সাধন হয়।
১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। সেই থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখে আসছে।
আরও পড়ুন:শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে বন্য হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামে বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাণ হারানো ৬০ বছর বয়সী হাজী উমর আলী একই গ্রামের বাসিন্দা।
নালিতাবাড়ী থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া জানান, প্রায় তিন-চার দিন ধরে নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের পাহাড়ি ঢালে বোরো ধান ক্ষেতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫টি বন্য হাতি নেমে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে হাতির পালটি বাতকুচি গ্রামের ধান ক্ষেতে যায়। এ সময় উমর আলি ও গ্রামবাসীরা তাদের ফসল বাঁচানোর জন্য মশাল জ্বালিয়ে ডাক ও চিৎকার শুরু করেন।
একপর্যায়ে বন্যহাতির পালটি একটু পিছিয়ে যায়। পরে বাড়িতে যাওয়া সময় পাহাড়ে লুকিয়ে থাকা হাতির পালটি উমর আলিকে ঘিরে ফেলে ও পা দিয়ে পিষ্ট করে।
বন বিভাগের ময়মনসিংহ মধুটিলা ফরেস্টের রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে নিহত উমর আলির পরিবারকে বন বিভাগের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
থানার ওসি মনিরুল আলম ভুইয়া বলেন, ‘ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
আরও পড়ুন:
মন্তব্য