বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফুল আর কেক নিয়ে কুষ্টিয়ার গ্রামে জাপানি প্রতিনিধি

  •    
  • ২৮ জানুয়ারি, ২০২২ ২১:১৩

ঢাকায় কর্মরত জাইকার স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিনিধি রি ওজাকি গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকিলাদহে পৌঁছান। পরে তিনি রাধা বিনোদের নিশ্চিহ্ন হওয়া ভিটেতে ফুল দেন।

‘জাপান-বন্ধু ভারতীয়’ বলে খ্যাত ড. রাধা বিনোদ পালের জন্মদিন পালিত হলো তার বাস্তুভিটা কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামে। এতে যোগ দেন জাপানি জাইকার প্রতিনিধি রি ওজাকি।

রাধা বিনোদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া ভিটেতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি শুক্রবার স্থানীয়দের সঙ্গে কেক কেটে রাধা বিনোদের ১৩৬তম জন্মদিন পালন করেন ওজাকি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী যুদ্ধপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারক হিসেবে রাধা বিনোদ জাপানের পক্ষে রায় দিয়ে অমর হয়ে আছেন।

ইতিহাসে উল্লেখ আছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অক্ষশক্তিকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করতে আন্তর্জাতিক আদালতের সব বিচারকই মিত্রশক্তির পক্ষে রায় দেন। এরই ধারাবাহিকতায় জাপানের জেনারেল হিদেকি তোজোকে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নেন বিচারকরা।

কিন্তু ওই আদালতের অন্যতম বিচারক ড. রাধা বিনোদ পালের যুক্তিসংগত রায় যায় জাপানের পক্ষে। এতেই যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে রক্ষা পায় জাপান।

সেই ঋণ থেকে রাধা বিনোদের জন্মদিনে এবারও কাকিলাদহ গ্রামে এসেছেন জাপানিদের প্রতিনিধি ওজাকি।

ঢাকায় কর্মরত জাইকার স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিনিধি রি ওজাকি গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কাকিলাদহে পৌঁছান। তিনি রাধা বিনোদের নিশ্চিহ্ন হওয়া ভিটেতে ফুল দেন। যেখানে রাধা বিনোদের বাড়ি ছিল, সেখানে এখন ফসলের আবাদ হয়। তবে বাড়ির বড় পুকুরটি এখনও আগের মতোই আছে।

শুক্রবার সন্ধ্যার পর রাধা বিনোদের নামে একটি মডেল স্কুলে জন্মদিন পালনে জাপানি নাগরিকের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয়রাও। স্মৃতি রক্ষার্থে রাধা বিনোদের নামে গ্রামে বিশেষ কিছু একটা করার দাবি জানান তারা।

জাপানে রাধা বিনোদের নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ

রি ওজাকি বাংলায় কথা বলতে শিখেছেন। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত সব মানুষ এবং জাপানবাসীর পক্ষ থেকে আমি বিচারপতি রাধা বিনোদকে ধন্যবাদ দিতে এসেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘জাপানিজরা সারা জীবন রাধা বিনোদকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।’

এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন, জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খানসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।

কামারুল আরেফিন বলেন, ‘স্থানীয়রা রাধা বিনোদের বাড়ি ও জায়গা দখল করে রেখেছে। এটা উন্মুক্ত করে সেখানে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

জাপানে রাধা বিনোদের নামে জাদুঘর, সড়ক ও ভাস্কর্যও রয়েছে। কিন্তু কুষ্টিয়ার স্মৃতি হিসেবে রাধা বিনোদের বাড়ির পুকুরের ঘাট থেকে একটি ইট তুলে নিয়ে যান রি ওজাকি।

১৮৮৬ সালের ২৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার তারাগুনিয়া গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মেছিলেন রাধা বিনোদ। তার পিতার নাম বিপিন বিহারি পাল।

জানা যায়, রাধা বিনোদের শৈশব কেটেছিল চরম দারিদ্র্যের মধ্যে। তারাগুনিয়া এলপি স্কুল ও কুষ্টিয়া হাই স্কুলে তিনি মাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পরে ১৯২০ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও ১৯২৫ সালে আইনে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

১৯১৯-২০ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে অধ্যাপনা দিয়ে রাধা বিনোদের কর্মজীবনের শুরু হয়। ১৯২৫ থেকে ১৯৩০ সাল এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৩৬ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে অধ্যাপনা করেন। পরে কলকাতা হাইকোর্টে আইন পেশায় যোগদান করেন।

১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত তিনি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। ১৯৪৪-৪৬ সাল মেয়াদে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি কলকাতায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

এ বিভাগের আরো খবর