একজন রাজনীতিবিদের বক্তব্যের চেয়ে কবিতা আরও বেশি শক্তিশালী, মানুষকে আরও বেশি উদ্বেলিত করে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে বৃহস্পতিবার সকালে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় আবৃত্তি উৎসব ২০২০-২২’-এর উদ্বোধন এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক ২০২০-২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘কবিতার মধ্য দিয়ে অনেক না বলা কথা বলা যায়। রাজনীতিবিদরা অনেক কথা বা বক্তব্য দেন, কিন্তু একটি কবিতার মধ্য দিয়ে মানুষ অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হয়। আমি কথা বলে একটি মানুষকে যতটুকু উদ্বুদ্ধ করতে পারি, তার চেয়ে অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ হয় মানুষ একটা কবিতা, গান, নাটক বা সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে। যার মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ের কাছে পৌঁছনো যায়।’
গ্রাম-বাংলার চিরায়ত ‘কবিগান’-এর আসরের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমাদের দেশে আগে কবিয়ালদের লড়াই হতো। আসলে বাঙালিরা সহজাতভাবেই কবি, এটা হলো বাস্তবতা।’
কবিতা, গান, নাটক তথা সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে যেভাবে প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসে এবং মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়, তা আর কোনো কিছুতে হয় না বলেও মত তার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের পর যখন রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, তখনও প্রতিবাদ করেছেন কবি ও আবৃত্তিকাররা।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নাট্যকার দীন বন্ধু মিত্রের নীল দর্পণ নাটকের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন যেভাবে এগিয়ে গিয়েছিল- একটি কবিতার শক্তি যে কত বেশি সেটা তো আমরা নিজেরাই জানি। ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর যখন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করা যাচ্ছিল না, তখন আমাদের কবিতার মধ্য দিয়েই প্রতিবাদের ভাষা বেরিয়ে আসে এবং মানুষ সেখানে উদ্বুদ্ধ হয়।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের ওপর কতবার আঘাত এসেছে; কিন্তু বাঙালি বসে থাকেনি, প্রতিবারই প্রতিবাদ করেছে। কারণ আমাদের সাহিত্য চর্চা তো বৃথাই হয়ে যেত। এক-একজন কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকার আমাদের যা কিছু দিয়ে গেছেন এগুলো আমাদের সম্পদ।’
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর প্রতিবাদে যারা এগিয়ে এসেছেন, তাদের মধ্যে কবিদের অবদানকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমি বলব যে, এ দেশের আন্দোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে এ দেশের কবিদের এবং আবৃত্তিকারকদের। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তাদের সবার প্রতি।’
কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সে সময় অনেকেই যে যেভাবে পেরেছেন, লিখেছেন, নাটক করেছেন, সাহিত্য রচনা করেছেন, বই ছাপিয়েছেন, প্রতিবাদ করে গ্রেপ্তারও হতে হয়েছে কাউকে কাউকে, কিন্তু থেমে থাকেননি কেউ।’
বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত পাঁচ দিনের এই আবৃত্তি উৎসবের উদ্বোধনী দিনে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জাতীয় আবৃত্তি পদক ২০২০-২২’ দেয়া হয়। বিজয়ীদের হাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।