বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিশ্বের খর্বাকৃতি গরুর রেকর্ড গড়ার পথে চারু

  •    
  • ২৬ জানুয়ারি, ২০২২ ১১:২০

রানির পর বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতির গরুর জায়গা এবার পেতে যাচ্ছে শিকড় অ্যাগ্রোরই আরেকটি গরু, নাম চারু। চূড়ান্ত ঘোষণার আগে গরুর মালিকের কাছে প্রয়োজনীয় নথি চেয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস।

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুর কথা উঠলেই আসে সাভারের শিকড় অ্যাগ্রোর রানির নাম। খর্বাকৃতির গরুটি বাংলাদেশ তো বটেই জায়গা করে নেয় বিশ্ব মিডিয়ায়ও। শেষ পর্যন্ত অসুস্থ হয়ে মারা যায় রানি। মৃত্যুর পর গিনেস বুকে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতি গরুর স্বীকৃতি পায় এটি।

রানির এই জায়গা এবার পেতে যাচ্ছে শিকড় অ্যাগ্রোরই আরেকটি গরু, নাম চারু। চূড়ান্ত ঘোষণার আগে গরুর মালিকের কাছে প্রয়োজনীয় নথি চেয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস।

সাভারের আশুলিয়ার চারিগ্রাম এলাকায় শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সুফিয়ান বুধবার সকালে নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর শিকড় অ্যাগ্রো থেকে চারুর বিষয়ে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে আবেদন করা হয়েছিল। তারা চারুকে এই স্বীকৃতি দেয়ার চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। তবে এর আগে গিনেস কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কিছু নথি চেয়েছে।

চারুকে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতির গরুর চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেয়ার আগে গিনেজ কর্তৃপক্ষের নথি চেয়ে পাঠানো মেইল

খামার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চারু নামের গরুটির জন্ম ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। সে হিসেবে তার বয়স আড়াই বছর। চারুর এখন চার দাঁত। উচ্চতা ২৩.৫০ ইঞ্চি, লম্বা ২৭ ইঞ্চি ও ওজন ৩৯ কেজি।

২০২১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর গিনেস বুকে মৃত গরু হিসেবে রেকর্ড গড়া রানির উচ্চতা ছিল ২০ ইঞ্চি, লম্বা ২৪ ইঞ্চি ও ওজন ২৬ কেজি।

শিকড় অ্যাগ্রো খামারে গিয়ে দেখা মেলে চারু নামের গরুটির। হেলে দুলে পুরো খামারে হেঁটে বেড়াচ্ছে এটি। খামারটিতে আরও বেশ কয়েকটি ভুট্টি জাতের ছোট গরু থাকলেও চারু কিছুটা আলাদা। লালচে রঙের চারুর কান দুটো খাড়া, পা দুটো খাটো ও মোটা।

খুব দ্রুত সময় লেজ নাড়তে নাড়তে আয়েশ করে খাবার খায় চারু। পুরো খামারজুড়েই ঘাস, পাতা এসব খেতে বেশ ব্যস্ত। ছবি তুলতে গেলে ফিরিয়ে নেয় মুখ, ফিরে যায় ক্যামেরার উল্টো দিকে।

চারুকে দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা খামারের কর্মচারী মো. মামুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের শিকড় অ্যাগ্রো ইন্ড্রাস্ট্রিজ খামারে অনেক রকমের পশু-পাখি পালন করি। রানি মারা যাওয়ার পর প্রায় এক বছর আগে চারুকে আমরা সিলেট থেকে সংগ্রহ করেছি। যেভাবে রানিকে সংগ্রহ করা হয়েছে সেভাবেই চারুকে আনা হয়েছে।

‘যেহেতু আমাদের রানি মারা গেছে, তাই চারুর প্রতি একটু বেশি যত্ন নেই। স্যাররা এখানে আসার পর ওর নাম চারু দিয়েছে। গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী একাধিকবার চারুর মাপের ছবি এবং ভিডিও পাঠানো হয়েছে।’

চারুর চলাফেরার ধরন নিয়ে খামারের আরেক কর্মচারী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে অনেক ধরনের গরু আছে। তবে চারুর চলাফেরা, খাওয়া, ঘুমানো সবার চেয়ে একটু ভিন্ন টাইপের। দেখা যায়, ছবি তুলতে চাইলে ও একটু অন্য টাইপের হয়ে যায়। মুখটা ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে, পেছন দিকে দৌড়াতে থাকে। আকারে ছোট আর পাগুলো গোছাগোছা মোটা। কানগুলো খরগোশের মতো।

‘রানি ছিল আমাদের অমূল্য সম্পদ। রানির চেয়ে চারু একটু পিছিয়েই। যেহেতু একবার রানিকে নিয়ে আমাদের একটা অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গেছে। এজন্য ওই দিক থেকে সতর্ক থেকে চারুকে আমরা একটু বেশি কেয়ারিং থাকি। চলাফেরা, খাওয়া, ঘুমানো সব দিক থেকে সতর্ক থাকি। আর সব গরুর মতই চারু ঘাস, খর, দানাদার খাবার খায়। অন্যান্য গরু, ছাগল সবার সঙ্গে মিলে চারু খাবার খায়।’

শিকড় অ্যাগ্রোর পশু চিকিৎসক প্রতি দু সপ্তাহ পরপর চারুকে দেখতে আসেন এবং চারুর ওজন, শরীর চকচকে আছে কি না, গঠন বাড়ছে কি না এসব দেখে যান।

খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও কাজী সুফিয়ানের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। এই খামারি চারুকে নিয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত এই সৌখিন খামারি, তেমনি রানির কথা মনে করে বাকরুদ্ধ হয় পড়েন। রানির সঙ্গে কোনো গরুকেই তুলনা করতে রাজি নন তিনি। তার মতে শিকড় খামারে রানি ছিল একটি সিগনেচার!

সুফিয়ান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু হিসেবে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে স্থান করে নেয় আমাদের শিকড় অ্যাগ্রোর রানি। পরম করুণাময়ের ইচ্ছাতেই অফিশিয়ালি বিশ্বরেকর্ডে নাম লেখাবার আগেই আমাদের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে রানি মারা যায়। পরবর্তীতে, রানির দেহাবশেষ বায়োডাইভারসিটি কনজারভেশন অ্যান্ড মিউজিয়াম ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ অফ বাংলাদেশে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’

ওই খামারি আরও বলেন, ‘অল্প কদিনেই রানির উল্লেখযোগ্য ভক্ত তৈরি হয়ে গেছিল। আর তাই বেশির ভাগ মানুষই রানির মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। আমরা অনেক টাকায় বিক্রির অফার পেয়েও কেন বিক্রি করিনি সেটা নিয়েও অনেকে বিদ্রূপ করেছেন। কেউ কেউ আমাদের গাফেলতির কথা বলে আমাদের বকাও দিয়েছেন। ঐ সময়টায় ভীষণ খারাপ লাগলেও আমরা দাঁতে দাঁত চেপে পরিস্থিতি মেনে নিয়েছিলাম। আসলে রানির প্রতি সবার ভালবাসাটা আমরা বুঝতাম।’

সুফিয়ান বলেন, ‘রানির মৃত্যুর পর গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ শোক প্রকাশ করে আমাদের ই-মেইল পাঠান। তারা জানান, রানির সম্মানার্থে পৃথিবীর সবচেয়ে জীবিত ছোট গরু হিসেবে আরও একটা ক্যাটাগরি তারা চালু করবেন এবং আমাদের কাছে কমপিট করার মতন কিছু থাকলে চাইলে এতে অংশগ্রহণ করতে পারি।’

চারুকে বিশ্বের সবচেয়ে খর্বাকৃতির গরুর স্বীকৃতি চেয়ে করা আবেদনের তথ্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ

রানির পর চারুকে কীভাবে খুঁজে পেলেন সে প্রসঙ্গও তুলে ধরেন শিকড় অ্যাগ্রোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও। তিনি বলেন, ‘যারা শিকড় অ্যাগ্রো সম্পর্কে জানেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন, আমাদের সুদক্ষ এবং নির্ভরশীল কর্মীবাহিনী প্রতিদিনই দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ান। রানির জীবদ্দশায়ই আমাদের সংগ্রহশালায় নতুন চমক যোগ হয় ৪ দাঁতের প্রাপ্তবয়স্ক দেশীয় প্রজাতির বামন গরু চারু। এটিকে বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে জীবিত ছোট গরু হিসেবে গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ স্বীকৃতি দিয়েছে।’

চারুকে নিয়ে পরিকল্পণার বিষয়ে সুফিয়ান বলেন, ‘আমাদের ইচ্ছে ছিল বিশ্বরেকর্ডধারী রানিকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারকে উপহার হিসেবে দেয়া। যেন সরকারের তত্ত্বাবধানে রানি তার জীবনের সর্বোচ্চ সময়টা উপভোগ করতে পারে। কিন্তু রানি অকালে চলে যাওয়ায় সে সুযোগটা আর আমরা পাইনি। এদিকে চারুর বিশ্ব রেকর্ডে স্থান করার আবেদনের শুরু থেকেই আমরা সঙ্গত কারণেই চরম গোপনীয়তা বজায় রেখেছি।

‘বিশ্বরেকর্ডধারী চারু যেন জীবনের সর্বোচ্চ সময়টা উপভোগ করতে পারে এটা আমাদের একান্তই প্রার্থনা। আর তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে উপহার হিসেবে চারুকে তুলে দিয়ে চারুর জীবনের সর্বোচ্চ সময়টা উপভোগ করার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বাঙ্গালি জাতিকে শিকড় অ্যাগ্রোর পক্ষ থেকে এটি উপহার দিতে চাই।’

এ বিভাগের আরো খবর