শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবারও বিক্ষোভ হয়েছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা। দাবি জানান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের।
মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু বড়ুয়া বলেন, ‘শাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। শিক্ষার্থীদের দাবি না মেনে উল্টো হামলা চালিয়েছে। এমন অযোগ্য ব্যক্তি ভিসি থাকতে পারেন না, তার অপসারণ চাই।’
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ চান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। ছবি: নিউজবাংলা
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের মতো শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের বেডে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে। এটা দেখে যদি বিবেক জাগ্রত না হয়, তাহলে বুঝতে হবে আমাদের বিবেক ঘুমিয়ে রয়েছে।
‘আজকে তাদের ওপর হামলা, কালকে আমাদের ওপর- এভাবে দিন দিন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা বেড়ে চলছে। আমাদের দাবি একটাই, উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।’
প্রতিবাদে উত্তাল ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। মানববন্ধনে পুলিশি হামলার বিচার, ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার ও উপাচার্যের অপসারণ দাবি করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মানববন্ধন শুরু হয়। পরে একটি মিছিল ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে আবার শহীদ মিনারে আসে।
নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী খালিদ মাহমুদ তন্ময় বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের কোনো নিরাপত্তা নেই। যেকোনো সময় সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে।
‘শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করলে তা দমাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশ দিয়ে হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মুখ বন্ধ করতে নানা ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিন্নমত চর্চার কোনো সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।’
ইতিহাস বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আলী হোসেন বলেন, ‘আমরা এই বিক্ষোভের মাধ্যমে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছি। শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা জানাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জেলা প্রেস ক্লাবের সামনে। সোমবার সন্ধ্যায় এই কর্মসূচিতে যোগ দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সাবেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। ছবি: নিউজবাংলা
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
প্রেক্ষাপট
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। রোববার আন্দোলনের চতুর্থ দিনে এসে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।
এদিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করলে সন্ধ্যায় অ্যাকশনে যায় পুলিশ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে রীতিমতো রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ক্যাম্পাস। লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে পুলিশ, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় সন্ধ্যার পর থেকে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে অবস্থা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের অভিযোগ, ভিসির নির্দেশেই পুলিশ হামলা ও গুলি চালিয়েছে।
এই বিক্ষোভের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ও হল ছাড়ার নির্দেশনা আসে। এরপর উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে রোববার রাত থেকেই আন্দোলন শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরাও এসে যোগ দেন এই বিক্ষোভে। তারা উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন।
সোমবার আন্দোলন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। এতে মঙ্গলবার সকালে ক্যাম্পাসে এসেও কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের নিজ নিজ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আর পুলিশ প্রহরায় বাসভবনেই অবস্থান করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।