বেক্সিমকো লিমিটেডের বহুল আলোচিত তিন হাজার কোটি টাকার গ্রিন সুকুকের লেনদেন শুরুর দিন পুঁজিবাজারে সূচক কিছুটা বাড়লেও লেনদেন কমে গেছে। সুকুকেও খুব একটা লেনদেন হয়েছে এমন নয়, দিন শেষে হাতবদল হয়েছে ৩৩ কোটি টাকার বন্ড।
নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে পাঁচ কর্মদিবসই পুঁজিবাজারে সূচক বাড়লেও দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রথম দিন বড় পতন, তার পরদিন বড় উত্থান, এরপর আবার বড় পতন, শেষ দিনে আবার সূচক বৃদ্ধি।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার ওঠানামা করতে করতে সূচকে যোগ হয়েছে ২১ পয়েন্ট। তবে লেনদেন কমে গেছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি।
এদিন লেনদেনে প্রধান আকর্ষণ ছিল সুকুক বন্ড। গত এক বছর ধরেই এই বন্ডটি নিয়ে তুমুল আলোচনা হচ্ছে। বন্ডটি যে লভ্যাংশের নিশ্চয়তা দিয়েছে, তা যেকোনো বিবেচনায় আকর্ষণীয়। তারপরেও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের এটি খুব একটা আকৃষ্ট করতে পেরেছে এমন নয়। পরে মূলত ব্যাংকগুলো এই বন্ডের ইউনিট কিনেছে।
বন্ডটি প্রতি বছর ন্যূনতম ৯ শতাংশ লভ্যাংশ দেবে, যার পুরোটাই করমুক্ত। আবার বেক্সিমকো লিমিটেডের লভ্যাংশ ১০ শতাংশের বেশি যতটুকু হবে, তার ১০ শতাংশ সুকুকের লভ্যাংশে যোগ হবে। প্রতি বছর সুকুকের ২০ শতাংশ টাকা তুলে নেয়া যাবে। অথবা এই টাকার বিনিময়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ার নেয়া যাবে। সেই শেয়ার দেয়া হবে বাজারদরের ২৫ শতাংশ কম দামে। ফলে সেখানে ৩৩ শতাংশ বেশি মুনাফা হবে। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিলে বছরে মুনাফা ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ হবে নিশ্চিতভাবেই। এর চেয়ে বেশিও হতে পারে।
পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর আগে সুকুকের লেনদেনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। সেখানে বক্তব্য রাখেন বেক্সিমকো লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান। তিনি দেখান ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে সুকুকে বিনিয়োগ করা লাভজনক।
পরে ১০০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি বন্ডের লেনদেন শুরু হয় ১১০ টাকায়। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কমতে থাকে। দিন শেষে ১০১ টাকায় শেষ হয় এটি।
এই দিনটি বিনিয়োগকারীদের দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বেড়েছে ১৫৬টির কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ১৭১টির। অপরিবর্তিত ছিল ৫৫টির।
বৃহস্পতিবার দিনভর পুঁজিবাজারে শেয়ারদরের উত্থান পতন দেখা গেছে
বছরের প্রথম কর্মদিবস ২ জানুয়ারি লেনদেন ছিল ৮৯৪ কোটি ১৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। সেটি বাড়তে বাড়তে ১১ জানুয়ারি হয় ১ হাজার ৯৭৬ কোটি ৮৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।
তবে এর পরের দুই দিনে কমতে কমতে সপ্তাহের শেষ দিন দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৪২ কোটি ৮৪ লাখ ১১ হাজার টাকা।
দিনটিতে সূচক এক দিনের ব্যবধানে আবার ৭ হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মতো তা এই ধাপ অতিক্রম করে ১১ জানুয়ারি। পর দিন আবার তা নিচে নেমে আসে। তার পরদিন তা ২১ দশমিক ১৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ১৭ পয়েন্টে।
সূচক বাড়াল যেসব কোম্পানি
দিনভর টানাপড়েনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত সূচক বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকায় ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি পাওয়ার গ্রিডের। আগের দিন দর হারানো কোম্পানিটির দর এদিন বেড়েছে ৬.৮ শতাংশ। কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে ৪.৯৭ পয়েন্ট।
সূচক যতটা বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বাড়িয়েছে এই ১০টি কোম্পানি
টেলিকম খাতের গ্রামীণফোনের শেয়ারদর বেড়েছে পরপর দুই দিন। ০.৬২ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে কোম্পানিটি সূচকে যোগ করেছে ৪.৩১ পয়েন্টে।
আগের দিন দর হারানো সরকারি কোম্পানি তিতাস গ্যাসের দর এদিন বেড়েছে ৩.৭৭ পয়েন্ট, কোম্পানিটি সূচক বাড়িয়েছে ২.৫৯ পয়েন্ট।
আগের দিন দর হারানোর সর্বোচ্চ সীমায় লেনদেন হওয়া বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ারদর এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন হয়েছে দিনের সর্বোচ্চ সীমায়। ৯.৯৫ শতাংশ দর বৃদ্ধিতে সূচকে যোগ হয়েছে ২.৫২ পয়েন্ট।
এ ছাড়া বাংলাদেশ সাবমেরিন কেব্ল কোম্পানি ২.০৬ পয়েন্ট, স্কয়ার ফার্মা ১.৬৭ পয়েন্ট, ব্র্যাক ব্যাংক ১.৬২ পয়েন্ট, লাফার্জ হোলসিম ১.৩৫ পয়েন্ট, ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ০.৯৭ পয়েন্ট ও লিনডে বিডি ০.৯৫ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে।
সব মিলিয়ে এই ২০টি কোম্পানিই সূচক বাড়িয়েছে ২৩.০১ পয়েন্ট।
অন্যদিকে সূচক সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে রবির দরপতনের কারণে। আগের দিন সূচকে ৪৩ পয়েন্ট যোগ করা কোম্পানিটি পরদিন সূচক কমিয়েছে ৩.০৪ পয়েন্ট।
এ ছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, এক্সিম ব্যাংক, আইসিবি, বিএসআরএম, মেঘনা পেট্রোলিয়াম, পদ্মা অয়েল, ব্যাংক এশিয়া ও প্রাইম ব্যাংকও সূচক কিছুটা কমিয়েছে।
এই ১০টি কোম্পানি সূচক কিছুটা কমিয়েছে
সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণে সূচক কমেছে ৯.১৭ পয়েন্ট।
দর বৃদ্ধির ১০ কোম্পানি
বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি দর বেড়েছে রংপুর ফাউন্ডির, ৯.৯৮ শতাংশ। কোম্পানিটির শেয়ারদর ১৮৮ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২০৭ টাকা ১০ পয়সা।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের শেয়ারদর বেড়েছে ৯.৯৫ শতাংশ। ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স ও এপেক্স ফুডের দর বেড়েছে একই হারে। পঞ্চম স্থানে থাকা পেনিনসুল চিটাগাং কোম্পানির দর বেড়েছে ৯.৯২ শতাংশ।
আট শতাংশের বেশি শেয়ারদর বেড়েছে তিনটি কোম্পানির। এর মধ্যে জেমিনি সি ফুডের দর ৮.৭৪ শতাংশ, এএমসিএল (প্রাণ) ৮.৭৪ শতাংশ ও এপেক্স ফুটওয়ারের ৮.৬৯ শতাংশ শেয়ারদর বেড়েছে।
পুঁজিবাজারে এই ৬টি খাতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বৃহস্পতিবার
সাত শতাংশের বেশি শেয়ারদর বেড়েছে দুটি কোম্পানির। একটি ওয়াটা কেমিক্যাল, যার শেয়ারদর বেড়েছে ৭.৯১ শতাংশ, আরেকটি বিডি অটোস, যার শেয়ারদর বেড়েছে ৭.২২ শতাংশ।
পাওয়ার গ্রিড, মুন্নু ফেব্রিক্স ও পদ্মা লাইফের দর বেড়েছে ছয় শতাংশের বেশি।
দরপতনের ১০ কোম্পানি
লেনদেনে সবচেয়ে বেশি ৮.৬৬ শতাংশ দর হারিয়েছে শ্যামপুর সুগার। ৩০ লাখ ৫ হাজার টাকার মোট ৩৫ হাজার ৭৮২টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের দর কমেছে ৫ শতাংশ।
তিন শতাংশের বেশি দর কমেছে চারটি কোম্পানির। এগুলোর মধ্যে ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৩.৬৫ শতাংশ, আইএফআইসি ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৩.৪৪ শতাংশ, এসইএমএল এফবিএসএল মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৩.৪০ শতাংশ এবং আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ৩.১৫ শতাংশ দর কমেছে।
দুই শতাংশের বেশি শেয়ারের দরপতন হয়েছে ১৬টি কোম্পানির। এর মধ্যে পিপলস ইন্স্যুরেন্সের ২.৯৫ শতাংশ, বিডি ফিন্যান্সের ২.৮৬ শতাংশ, ইনটেকের ২.৬২ শতাংশ, এস আলম কোল্ডরোল স্টিলের দর ২.৪৫ শতাংশ ও সোনালী পেপারের ২.৪৪ দর শতাংশ কমেছে।
বেশিরভাগ খাতেই লেনদেন কমেছে বৃহস্পতিবার
লেনদেনের এগিয়ে থাকা ১০ কোম্পানি
বৃহস্পতিবার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৮০ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। ৬৬ লাখ ৬২ হাজার ৬৫০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাওয়ার গ্রিডে লেনদেন হয়েছে ৬০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ৮৩ লাখ ১২ হাজার ৪৮১টি শেয়ার।
তৃতীয় অবস্থানে থাকা বেক্সিমকো লিমিটেডে ৫৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইলে ৪০ কোটি ১৪ লাখ টাকা, আরএকে সিরামিকসে ৩৮ কোটি ১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এদিন ৩৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ফরচুন সুজে। তিতাস গ্যাসের শেয়া লেনদেন হয়েছে ৩৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার। ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
এ ছাড়া লাভেলো আইসক্রিমে ২৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা, দ্য পেনিনসুলায় ২৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।