চালককে আটকে মারধরের অভিযোগে ৮ দিন বন্ধ থাকার পর বরিশাল থেকে খুলনাসহ চার রুটে ফের বাস চলাচল শুরু হয়েছে।
নিউজবাংলাকে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশালের রূপাতলী বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন।
তিনি জানান, বিভাগীয় কমিশনারের হস্তক্ষেপে নবম দিনে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ঝালকাঠিতে পিরোজপুরের বাসের চালককে মারধরকে কেন্দ্র করে বরিশাল থেকে খুলনাসহ প্রথমে ৭ রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে টানা আট দিন বরিশাল থেকে খুলনা ও পিরোজপুরসহ চার রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকে।
‘বুধবার বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান মহোদয় তার কার্যালয়ে পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও বরিশালের মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নকে নিয়ে বসেছিলেন। সেখানেই চলতি সমস্যার সমাধান হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’
ঝালকাঠি বাস-শ্রমিক ইউনিয়নের সহ সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বুধবার বিকালে আমরা বসেছিলাম। আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ায় বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।’
ঝালকাঠি বাস টার্মিনালের অফিসকক্ষে গত ৪ জানুয়ারি পিরোজপুরের বাস ড্রাইভার অরবিন্দ কুমার দাসকে আটকে মারধর করা হয়। ছিনিয়ে নেয়া হয় তার সঙ্গে থাকা ৩৯ হাজার টাকা।
এই অভিযোগ তুলে ৫ জানুয়ারি থেকে পাঁচ জেলায় বাস চালানো বন্ধ করে দেয় পিরোজপুর বাস-মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন।
ফলে টানা ৮ দিন ধরে পিরোজপুর থেকে ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশালগামী বাসের চাকা ঘুরেনি।
বাস বন্ধের কারণ হিসেবে মারধরের বিষয়টি দেখানো হলেও জানা গেছে, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের বাস মালিকদের বিবাদ আসলে পুরোনো। দুই জেলার এ দ্বন্দ্ব চলছিল আগে থেকেই।
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে ঝালকাঠি টু বরিশাল এবং বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা রুটে বাস পরিচালনা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি। তবে এ দাবি মানতে রাজি ছিল না বরিশাল বাস মালিক সমিতি।
তখন প্রায় এক বছর বরিশালের সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ রাখে ঝালকাঠি সমিতি। তখন সমর্থক হিসেবে পাশে চেয়েছিল পিরোজপুর বাস মালিক সমিতিকে। কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি পিরোজপুর। সেই থেকেই মূলত বরিশাল ও পিরোজপুরের সঙ্গে ঝালকাঠির দ্বন্দ্বের শুরু। এরপর এই দুই জেলার বাস শ্রমিকদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় বহুবার বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটে।
নিউজবাংলাকে পিরোজপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হালদার বলেন, ‘গত ৬ বছরে ঝালকাঠি ও পিরোজপুর বাস স্টাফদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে ৫০টিরও বেশি। এসব দ্বন্দ্বের জেরে মোট ৮ বার বন্ধ ছিল পিরোজপুর থেকে বরিশাল রুটে বাস চলাচল।’
তিনি বলেন, ‘পিরোজপুর থেকে বরিশাল রুটের মাঝখানে ঝালকাঠি। ঝালকাঠির ওপর দিয়েই বরিশাল যেতে হয়। এই সুযোগে ঝালকাঠি বাস মালিকরা নিয়মের বাইরে গিয়েও বাস চালায় এবং রাস্তা থেকে যখন-তখন যাত্রী তোলে। তাতে বাধা দিলেই দ্বন্দ্বে জড়ায় তারা।
‘এ সব বিষয় নিয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার বারবার বসে সমস্যা সমাধান করলেও লাভ হয়নি কিছুই। দুই দিন পর আবার আগের খামখেয়ালিতে চলে যায় তারা।’
এ সব ঘটনায় পিরোজপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হান্নান শেখ দায়ী করেন ঝালকাঠির বাস মালিক ও স্টাফদের।
বলেন, ‘বরিশাল ও খুলনা রুটে ঝালকাঠির বাস মালিক ও স্টাফরা অনেক সমস্যা তৈরি করে। কিছু বললে বা প্রতিবাদ করলেই চালানো হয় হামলা। এমনকি বরিশালের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধে ঝালকাঠি সীমানায় আটকে দেয় পিরোজপুরের বাসগুলো।
‘আমাদের শ্রমিকদেরও মারধরের ঘটনা আজ নতুন কিছু নয়। অনেক দিন ধরেই চলছে। আমরা এর সঠিক বিচার দাবি করছি।’