নূরজাহান বেগম। পিরোজপুর কদমতলা সিঅফিস বাসস্ট্যান্ডে এসেছেন। যাবেন বরগুনার পাথরঘাটায়। সেখানে তার মেয়ের ঘরে কয়েকদিন আগে এসেছে নতুন অতিথি। ধর্মঘট চলায় নবজাতককে দেখতে তখন যেতে পারেননি।
ভেবেছিলেন এর মধ্যে চালু হবে বাস চলাচল। তবে সেই আশায় গুড়েবালি। দেখতে দেখতে ধর্মঘট গড়িয়েছে অষ্টম দিনে। এ অবস্থায় ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছাতে পরিবার নিয়ে বের হয়েছেন তিনি।
তার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার প্রতিবেদকের। ক্ষুব্ধ নূরজাহান বেগম বলেন, ‘আমার ছোট মেয়ের চার দিন হলো বাচ্চা হয়েছে। তাই নাতিটাকে দেখতে যাবো। চারদিন অপেক্ষা করে আজ যাচ্ছি অটোতে। এত দূর কী অটোতে যাওয়া সম্ভব বলেন। পুরুষরা তো মোটরসাইকেল করে যায়। আমরা তো নারীরা পারছি না। এ ঝামেলা দ্রুত সমাধান হোক। নাতি দেখে ফেরার পথে বাস চাই।’
নূরজাহান পথের ঝক্কি মাথায় নিয়ে বের হলেও অনেকেই না জেনে আজও টার্মিনালে এসেছেন। বাস চলাচল বন্ধ দেখে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তারা।
আবু বক্কর তাদেরই একজন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ধর্মঘট দিয়েছে আমরা কিছুই জানতাম না। বাড়ি থেকে শহরে এলাম বরিশাল যাওয়ার উদ্দেশে। এখন দেখি গাড়ি নাই। তাই বাড়তি টাকা খরচ করে বাইকে করে বরিশাল যেতে হচ্ছে। প্রশাসন কী করছে। আজ শুনলাম ধর্মঘট আট দিন ধরে চলছে। এখান থেকে বাসের চাকা ঘুরবে কবে।’
যাত্রী রিপন জমাদ্দার বলেন, ‘গত তিন দিনে ব্যবসার কাজে পিরোজপুর থেকে বরিশাল আসা-যাওয়া করেছি চারবার। আগে প্রতিদিন বাসে গেলেও এখন বাইক করে যেতে বাধ্য হচ্ছি। এই সমস্যা আর কতদিন থাকবে।’
বাস ধর্মঘটের কারণে পিরোজপুর থেকে পাঁচ রুটে ঘুরছে না গাড়ির চাকা। এতে শত শত যাত্রী ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
ঝালকাঠি বাস টার্মিনালের অফিস কক্ষে গত ৪ জানুয়ারি পিরোজপুরের বাস ড্রাইভার অরবিন্দ কুমার দাসকে আটকে মারধর করা হয়। ছিনিয়ে নেয়া হয় তার সঙ্গে থাকা ৩৯ হাজার টাকা।
এই অভিযোগ তুলে ৫ জানুয়ারি থেকে ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল রুটে বাস চালানো বন্ধ করে দেয় পিরোজপুর বাস-মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন।
চালকের ওপর হামলা ও ঘটনার বিচার দাবিতে বার বার বৈঠক আহ্বান করা হলেও তাতে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতির সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
বরিশাল বাস মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হান্নান শেখ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবারই মূল সমস্যা তৈরি হয় ঝালকাঠি থেকে। পিরোজপুর থেকে বরিশাল রুটের মাঝখানে ঝালকাঠি হওয়ায় যাত্রী তোলা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
‘সমস্যা সমাধানে তাদের বৈঠকে ডাকা হলেও এখনও সাড়া দেয়নি। বুধবারের মধ্যে যদি কোনো সমন্বয়ে না আসে ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি তবে তাদের ব্যাপারে আমরা বিভাগীয় এবং আইনি ব্যবস্থা নেব।’
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চৌধুরীর রওশন ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যে বাস মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবং বিভাগীয় কমিশনার স্যারকেও অবহিত করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত সম্ভব দুই জেলার বাস মালিক ও নেতাদের বুঝিয়ে বাস চালুর করার জন্য।’