বাসচালককে আটকে রেখে মারধরের অভিযোগ তুলে ৫ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বরিশাল-খুলনা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে পিরোজপুর বাস-মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন।
ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে পিরোজপুর থেকে ঝালকাঠি, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশালগামী বাসের চাকা ঘুরছে না। এই পাঁচ জেলা থেকে বাসও ঢুকছে না ধর্মঘট ডাকা এ জেলায়।
বাস বন্ধের কারণ হিসেবে আপাতত মারধরের বিষয়টি দেখানো হলেও জানা গেছে, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের বাস মালিকদের বিবাদ আসলে পুরোনো। দুই জেলার এ দ্বন্দ্ব চলছিল আগে থেকেই।
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে ঝালকাঠি টু বরিশাল এবং বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা রুটে বাস পরিচালনা করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতি। তবে এ দাবি মানতে রাজি ছিল না বরিশাল বাস মালিক সমিতি।
তখন প্রায় এক বছর বরিশালের সঙ্গে বাস চলাচল বন্ধ রাখে ঝালকাঠি সমিতি। তখন সমর্থক হিসেবে পাশে চেয়েছিল পিরোজপুর বাস মালিক সমিতিকে। কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দেয়নি পিরোজপুর। সেই থেকেই মূলত বরিশাল ও পিরোজপুরের সঙ্গে ঝালকাঠির দ্বন্দ্বের শুরু। এরপর এই দুই জেলার বাস শ্রমিকদের মধ্যে মারামারির ঘটনায় বহুবার বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটে।
নিউজবাংলাকে পিরোজপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হালদার বলেন, ‘গত ৬ বছরে ঝালকাঠি ও পিরোজপুর বাস স্টাফদের মধ্যে মারধরের ঘটনা ঘটেছে ৫০টিরও বেশি। এসব দ্বন্দ্বের জেরে মোট ৮ বার বন্ধ ছিল পিরোজপুর টু বরিশাল রুটে বাস চলাচল।’
তিনি বলেন, ‘পিরোজপুর টু বরিশাল রুটের মাঝখানে ঝালকাঠি। ঝালকাঠির ওপর দিয়েই বরিশাল যেতে হয়। এই সুযোগে ঝালকাঠি বাস মালিকরা নিয়মের বাইরে গিয়েও বাস চালায় এবং রাস্তা থেকে যখন-তখন যাত্রী তোলে। তাতে বাধা দিলেই দ্বন্দ্বে জড়ায় তারা।
‘এ সব বিষয় নিয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার বারবার বসে সমস্যা সমাধান করলেও লাভ হয়নি কিছুই। দুই দিন পর আবার আগের খামখেয়ালিতে চলে যায় তারা।’
চলমান বাস ধর্মঘটে সাধারণ যাত্রীদের ব্যাপক দুর্ভোগ হচ্ছে। বিষয়টি আপনারা কিভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আপনারা ইতিমধ্যে জানেন, আমাদের এক বাস চালককে অনেক মারধর করা হয়েছে। সে কারণে শ্রমিকরা বাস চালাবে না, বিচার না হওয়া পর্যন্ত।
‘যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করেই আমরা ঝালকাঠি বাস মালিক সমিতিকে আহ্বান করেছিলাম বৈঠকে বসতে। তবে তারা কথা দিয়েও বসেনি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। স্যারদের সঙ্গে আলাপ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।’
এ সব ঘটনায় পিরোজপুর জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি হান্নান শেখ দায়ী করেন ঝালকাঠির বাস মালিক ও স্টাফদের।
বলেন, ‘বরিশাল ও খুলনা রুটে ঝালকাঠির বাস মালিক ও স্টাফরা অনেক সমস্যা তৈরি করে। কিছু বললে বা প্রতিবাদ করলেই চালানো হয় হামলা। এমনকি বরিশালের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধে ঝালকাঠি সীমানায় আটকে দেয় পিরোজপুরের বাসগুলো।
‘আমাদের শ্রমিকদেরও মারধরের ঘটনা আজ নতুন কিছু নয়। অনেক দিন ধরেই চলছে। আমরা এর সঠিক বিচার দাবি করছি।’
এ বিষয়ে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমরা জেলা বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের ডেকেছি। আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে একটি মিটিং করে তাদের সমস্যার কথা শুনব। সেখানে যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হবে। যাত্রীদের ভোগান্তি সহ্য করা হবে না।’
ঝালকাঠি বাস টার্মিনালের অফিসকক্ষে গত ৪ জানুয়ারি পিরোজপুরের বাস ড্রাইভার অরবিন্দ কুমার দাসকে আটকে মারধর করা হয়। ছিনিয়ে নেয়া হয় তার সঙ্গে থাকা ৩৯ হাজার টাকা।
এই অভিযোগ তুলে ৫ জানুয়ারি থেকে পাঁচ জেলায় বাস চালানো বন্ধ করে দেয় পিরোজপুর বাস-মিনিবাস-কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। ৭ দিনেও হয়নি বাস ধর্মঘটের সুরাহা।