রাজধানীর বকশীবাজারে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার একটি হলের প্রাচীর এবং হল সুপারের বাসভবন ভেঙে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
আলিয়া মাদ্রাসার আল্লামা কাশগরী (রহ.) হলের সামনে শনিবার দুপুর ১২টার দিকে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ ঘোষণা দেন সাবেক ছাত্র সাগর আহমেদ শাহিন।
অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদসহ পাঁচ দাবিতে এ মানববন্ধনের আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে মাদ্রাসাটির বর্তমান ও সাবেক কয়েকশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
বেশ কিছুদিন ধরে হলের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, হলের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে অধিদপ্তরের ভবন নির্মাণ করা হলে মাদ্রাসার স্বকীয়তা ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হবে। কোনো অবস্থাতেই তারা হলের সামনে ভবন নির্মাণ করতে দেবেন না।
শিক্ষার্থীদের এ প্রতিবাদকে সরকারি কাজে বাধা আখ্যা দিয়ে সম্প্রতি মাদ্রাসা ফাঁকা করতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে দফায় দফায় নোটিশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার তিন দফা নোটিশ পেয়েছেন তারা। সে সময়ই শিক্ষার্থীরা হল না ছেড়ে আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন।
কামিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাইমুল ইসলাম বলেন, ‘এই মাসের শেষে অনেক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা। পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে মাদ্রাসা প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির সুযোগ করে দিতে হলের নানান সমস্যা ও সংকটগুলো নিরসন করা।
‘কিন্তু সেখানে নিজ ছাত্র ও প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর নির্মাণ করার মতো ঘৃণ্য সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হল বন্ধের নোটিশ দেয়। এটি অযৌক্তিক।’
কামিল দ্বিতীয় বর্ষের আরেক ছাত্র আজিজুল হক বলেন, আলিয়া মাদ্রাসায় প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী পড়ছে। ১৯৫৮ সালে স্থাপিত একটি মাত্র জরাজীর্ণ আবাসিক হলের দুটি ভবনে রয়েছে মাত্র ৩৫০ জন শিক্ষার্থীর আবাসনব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনের জন্যে মাদ্রাসা প্রশাসনকে বারবার অবগত করা হলেও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। এর মধ্যে হঠাৎ আল্লামা কাশগরী (রহ.) হলের অংশ, হল সুপারের বাসভবন ভেঙে সেখানে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের অফিস নির্মাণের পরিকল্পনা করে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটি স্বতন্ত্র ও ঐতিহাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করে অন্য প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নির্লজ্জ স্বেচ্ছাচারিতা।’
নিসার হোসেন নামের এক ছাত্র বলেন, ‘মাদ্রাসার অধ্যক্ষ অধ্যাপক আলমগীর হোসেনই সকল নাটের গুরু। আমরা এই অধ্যক্ষের পদত্যাগ চাই। আর যতদিন অধিদপ্তর নির্মাণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হবে, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করবে।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অধিদপ্তর নির্মাণের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় গত ৪ জানুয়ারি মাদ্রাসার সহকারী অধ্যক্ষ আবদুর রশীদ বাদী হয়ে বেশ কয়েকজন ছাত্রের নামে চকবাজার থানায় মামলার আবেদন করেন। এ মামলায় বাদী হতে রাজি না হওয়া এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলায় কয়েকজন শিক্ষককে ওএসডি করা হয়।
এদিকে শিক্ষার্থীদের সার্বিক দাবির বিষয়ে জানতে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
পাঁচ দফা দাবি
শনিবারের মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা অধিদপ্তর নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ছাড়াও আরও চারটি দাবি জানান।
১. কোনো অবস্থাতে আবাসিক হল বন্ধ করা যাবে না।
২. শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসন করতে হবে।
৩. সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আরোপিত সব ধরনের ‘হয়রানিমূলক, মিথ্যা অভিযোগ’ অনতিবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে কোনো ধরনের বাণিজ্য করা চলবে না।