বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে গুটিশুটি ভঙ্গিতে শুয়ে থাকা এক নারী। পেছন দিক থেকে তোলা ছবিতে বোঝা যায় চরম নিঃসঙ্গ এই নারী। দেহে প্রাণ আছে কি না, সেটি অবশ্য বোঝার উপায় নেই।
দ্বিতীয় ছবিতে ওই নারীর পুড়ে ক্ষত-বিক্ষত দেহ, যেন গলে পড়ছে হাড়-মাংস।
ফেসবুকে গত মাসে অনেকে পোস্ট করেছেন এই দুটি ছবি। আলোচিত নারীর নাম-পরিচয় এসব পোস্টে নেই। তবে পোস্টের ভাষ্য অনুযায়ী, এই নারী তার স্বামীর ‘অবাধ্য’ হয়ে নিজের ভয়ংকর পরিণতি ডেকে এনেছেন।
ছবি দুটি একসঙ্গে জুড়ে দিয়ে শিরোনামে বলা হয়েছে ‘একটি নারী ধ্বংসের মূল ৩টি কারণ’।
আর সেই কারণগুলো হলো:
১. যে নারী স্বামীর সাথে যেদ (জেদ) করে
২. যে নারী স্বামীর সাথে মুখে মুখে ত্বর্ক (তর্ক) করে
৩. যে নারী তার মা-বোনের কু-পরামর্শ (কুপরামর্শ) শুনে স্বামীর বাড়িতে অশান্তি সৃষ্টি করে।’
এসব পোস্ট ছড়াচ্ছে ফেসবুকে
‘স্বামীর অবাধ্য হয়ে নিজের ধ্বংস’ ডেকে আনা ওই নারীর পরিচয় খুঁজেছে নিউজবাংলা। আর তাতে দেখা গেছে, একটি ইনস্টলেশন আর্ট থেকে দুটি ছবি তুলে নারীর প্রতি চরম অমর্যাদাকর ভাষায় ফেসবুকে পোস্টটি দেয়া হয়। এরপর সেটি শেয়ার করেন বাংলাভাষী অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী।
ছবিটির উৎপত্তি যেভাবে
২০১১ সালের ঘটনা। হাসপাতালের বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন এক নারী। বিমর্ষ দেখাচ্ছে খুব। চুলগুলো এলোমেলো। কিন্তু তার পরনে বেলজিয়ামের বিখ্যাত ফ্যাশন হাউস আ. এফ. ফান্ডেফর্স্ট-এর ডিজাইন করা পোশাক।
নেদারল্যান্ডসের আর্নহেম শহরে ২০১১ সালে হয় এই শিল্পকর্মের প্রদর্শনী
মোম দিয়ে তৈরি নারীর অবয়বজুড়ে বসানো বেশ কিছু সলতে। সবকটি জ্বলছে একসঙ্গে। ধীরে পুড়ে যায় মোমের গোটা অবয়ব।
হাসপাতালের বেডে ঘুমন্ত সেই নারীর দেহটি ছাড়াও যে ম্যাট্রেসের ওপর তিনি শুয়ে ছিলেন সেটিও মোমের তৈরি। এমনকি মাথার নিচে রাখা বালিশটিও ছিল মোমের।
পুরো দেহটি মোমবাতির মতো জ্বালাতে শরীরজুড়ে তৈরি করা খোপে বসানো হয় সুতো। তাতে আগুন দেয়ার পর দেহটি পুড়তে থাকে, আর গলতে থাকে মোমের শরীর।
মোম বাতি জ্বালানোর সময় শিল্পকর্মটি
চারুকলার ভাষায় এটি ইনস্টলেশন আর্ট। প্রদর্শনীর সময় উৎসুক দর্শকেরা দেখতে পান, পুড়তে থাকা নারীর শরীরেও আ. এফ. ফান্ডেফর্স্ট-এর পোশাক। ফলে শিল্পকর্মের পাশাপাশি নিজস্ব পণ্যের বিজ্ঞাপনও প্রচার করা গেছে ওই প্রদর্শনীতে।
নেদারল্যান্ডসের পূর্বাঞ্চলীয় শহর আর্নহেমে ২০১১ সালে ‘আর্নহেম মোড বিনালে’ শিরোনামের পোশাক প্রদর্শনীতে তুলে ধরা হয় শিল্পকর্মটি। এটি তৈরি করেন আ. এফ. ফান্ডেফর্স্ট-এর ডিজাইনার।
আগুনে গলতে শুরু করার মুহূর্তে সেই মোমের নারীদেহ
১০ বছর পর অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী সেই ইনস্টলেশন আর্টের ছবিতে ‘নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক বার্তা’ ছড়ানো শুরু করেছেন।
আশিক রহমান নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি পোস্ট দিয়েছেন নিজের ফেসবুক ওয়ালে। আর ওই পোস্টে জান্নাতের মুসাফির নিক নেইমের একজন কমেন্ট করেছেন, ‘ইউ আর রাইট’। তবে ওয়াজিহা আবিয়াত মিহা নামের একজন লিখেছেন, ‘ইউ আর রং’।
মোম দিয়ে তৈরি সেই নারী অবয়ব আগুনে গলে যাওয়ার পরের ছবি
মন্তব্য করা দুজনকে একই উত্তর দিয়েছেন আশিক রহমান। রোমান হরফে বাংলায় লেখা কথাটি হলো: ‘সাধারণত যেসব ফ্যামিলিতে ওয়াইফদের এই কু-গুণগুলো আছে তাদের সংসারে অশান্তি লেগেই থাকে। যার কারণে এখানে ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। ওকে…।’