করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে দেশের সীমান্তবর্তী জেলা ঝিনাইদহ। মহামারির পর এ বছর জেলার আলোচনার কেন্দ্রে ছিল সড়ক দুর্ঘটনা আর নির্বাচন। ছিল হত্যা, হামলা, মামলা ও ভাঙচুরের মতোও ঘটনা।
এসব ঘটনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল শৈলকুপা উপজেলা। এ ছাড়া বছরের শেষের দিকে আলোচনায় আসে কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলা।
বছরজুড়ে ঝিনাইদহে আলোচিত ঘটনাগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ-
বছরের প্রথম আলোচিত ঘটনা জানুয়ারির ১৩ তারিখে। শৈলকুপা উপজেলার মদনডাঙ্গা এলাকায় ট্রাক ও আলমসাধুর সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ নির্মাণশ্রমিক।
একই দিন শৈলকুপা পৌরসভায় চলছিল ভোট। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাত ১০টার দিকে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয় কাউন্সিল প্রার্থী শওকত হোসেনের ছোট ভাই। আর রাত ২টার দিকে প্রতিপক্ষ আলমগীর খান বাবুর মরদেহ উদ্ধার করা হয় শৈলকুপার কুমার নদ থেকে।
ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখে আরেক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১২ জন। যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার তেলপাম্প এলাকায় বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই নিহত হয় ১০ জন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় আরও ২ জনের।
কালীগঞ্জে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে ১১ জন নিহত হন। ছবি: নিউজবাংলা
মার্চে কোনো ঘটনা তেমন আলোচনায় না আসলেও ছিল হত্যা ও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি। ছিল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে দেশে আসার ঘটনা।
এপ্রিলের শুরুতে আলোচনায় ছিল শৈলকুপার আউশিয়া গ্রামের খর্বকায় নারী-পুরুষের বিয়ে। ৩০ বছরের ৪০ ইঞ্চি উচ্চতার বর ও ১৮ বছরের ৪২ ইঞ্চি উচ্চতার কনের বিয়ের ঘটনা ছিল সবার মুখে মুখে।
এ ছাড়া ওই মাসে শৈলকুপায় জমি নিয়ে বিরোধে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন হন। ধর্ষণের শিকার হন শারীরিক প্রতিবন্ধী নারী। আর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় বেশ কয়েকজন।
মে মাসে আলোচনায় ছিল সড়ক দুর্ঘটনা আর ভারত সীমান্ত থেকে অবৈধ পারাপারের ঘটনায়। সড়ক দুর্ঘটনায় ওই ৩০ দিনে কলেজ ছাত্রসহ নিহত হয় চারজন। এক সংসদ সদস্য হন আহত। হত্যার ঘটনাও ঘটে কয়েকটা।
জুলাইয়ে ফের চোখ রাঙাতে শুরু করে মহামারি করোনা। ১৫ দিনে জেলায় মৃত্যু হয় অর্ধশত মানুষের। এ ছাড়া মাসজুড়ে ছিল হত্যা, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনা।
অক্টোবরের শুরুতে আলোচনায় আসে ঝিনাইদহ আদালতের মালখানায় বিস্ফোরণ। এতে ঘটনাস্থলেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় এক নির্মাণশ্রমিকের দেহ। আহত হন আরও তিনজন।
আদালতের মালখানায় বিস্ফোরণে দুজনের মৃত্যু হয়। ছবি: নিউজবাংলা
এ ছাড়া শৈলকুপাতে জমি নিয়ে বিরোধে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। উপজেলার কামান্না ও বারইহুদা গ্রামে দুপক্ষের ওই সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন আহত হন। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ৩০টি বাড়ি-ঘর।
পরের মাসে নির্বাচন শুরু হলে আলোচনায় আসে মহেশপুর ও কালীগঞ্জের ইউপি নির্বাচন। কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী নজরুল ইসলাম ঋতুর নির্বাচনি প্রচার নিয়ে প্রথমেই সাড়া পড়ে। ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে দ্বিগুন ব্যবধানে হারিয়ে হন দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান। ওই ঘটনা সারা দেশেই ছিল আলোচিত।
ভোটে নৌকার প্রার্থীকে দ্বিগুণ ব্যবধানে হারিয়ে বিজয়ী হন ট্রান্সজেন্ডার নজরুল ইসলাম ঋতু। ছবি: নিউজবাংলা
এ ছাড়া আলোচনায় ছিল ডায়রিয়ার প্রকোপ। ওই সময় শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তিন দিনের মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয় ৩০০ মানুষ। কয়েক দিনের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। ১৫ দিনে আক্রান্ত হয় দেড় হাজারের বেশি মানুষ।
চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে ইউপি নির্বাচনের প্রচার শুরু হলে ফের আলোচনায় আসে শৈলকুপা উপজেলা। উপজেলার সারুটিয়া, হাকিমপুর, দিগনগর ইউনিয়নের শুরু হয় হামলা, পাল্টা হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও লুটপাট। একই সঙ্গে সদর উপজেলার ফুরসন্দি ইউনিয়নে ঘটে সংঘর্ষের ঘটনা। এতে আহত একজন পরে মারা যায়। সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে আহত হন এক পুলিশ কর্মকর্তা।
এ ছাড়া শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নে নির্বাচনি সহিংসতায় পুড়িয়ে দেয়া হয় ১০টি মোটরসাইকেল, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয় অন্তত ৪৫টি বাড়ি-ঘর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খুলনা থেকে আনা হয় পুলিশ।
ইউপি নির্বাচনে বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ছবি: নিউজবাংলা
বছরজুড়ে সংঘর্ষ, হত্যা, ধর্ষণ, সড়ক দুর্ঘটনার মধ্যেও ঘটেছে ভালো কিছু ঘটনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১২৩ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্য স্থাপন করে ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেন কালীগঞ্জের ডা. রাশেদ সমশের।
বছরের মাঝামাঝিতে করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যু দেখার পর শেষ সময়ে মৃত্যুশূন্য ছিল এ জেলা। কৃষিতেও গত বছরের চেয়ে এগিয়েছে সীমান্তবর্তী এই জেলা। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০০ হেক্টর বেশি জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছে। ছিল ধান, পাট ও পেঁয়াজের বাম্পার ফলন।