করোনা মহামারির কারণে আবাসন খাতে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দিয়েছিল। এই আবাসন মেলার মাধ্যমে তা অনেকটাই কেটেছে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট খাতে জড়িত ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। তবেও করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ না থাকলে ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি আরও বেশি থাকত বলে জানিয়েছেন অনেকে।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পাঁচ দিনের রিহ্যাব মেলা শেষ হচ্ছে আজ। মেলায় শেষ মুহূর্তে এসে তাই উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের।
সোমবার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেছে, অনেকেই শেষ বেলায় মেলায় আসেন প্রকল্প ও ফ্ল্যাটের খোঁজখবর নিতে। আর শেষ সময়ে চাপ সামলে নিজেদের বিভিন্ন প্রজেক্ট সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন আবাসন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
যদিও এবারে মেলা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
শেষ বেলায় মেলায় এসেছেন প্রবাসী শাহিদুল ইসলাম। এবার কয়েক মাসের জন্য দেশের বাড়িতে এসেছেন। ঢাকার আশপাশে জমি কিনবেন তাই মেলায় আসা। তিনি বলেন, ‘গত চার দিন সময় করতে পারিনি, অনেক কাজ ছিল, তাই শেষ মুহূর্তে মেলায় এলাম খোঁজখবর নিতে।
‘আমার অন্যান্য ভাই-বোনসহ আত্মীয়রাও দেশের বাইরে থাকেন। সবাই মিলে কোথাও একটা জমি কিনে ফ্ল্যাট করার ইচ্ছা আছে। মেলায় খোঁজখবর নিচ্ছি, এগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করব। পরে পছন্দসই কোনো জায়গায় জমি কিনব।’
তিনি বলেন, এ ধরনের মেলা হওয়া ভালো, তা থেকে ক্রেতারা একই ভেন্যু থেকে সবকিছুর তথ্য সহজে নিতে পারেন। ভালো-মন্দ বাছ-বিচার করে ফ্ল্যাট কেনার সিদ্ধান্ত নেয়া যায় মেলায় এসে।’
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার আবদুল করিম বলেন, ‘মেলায় এলাম একটু খোঁজখবর নিতে। এখনই ফ্ল্যাট কিনব তা নয়। তবে যেহেতু মেলায় অল্প জায়গায় বিভিন্ন আবাসন কোম্পানি সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া যায়, তাই তথ্য নিয়ে রাখলাম। সুযোগ বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে।’
কনকর্ড রিয়েল এস্টেটের সেলস ও মার্কেটিং বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার মো. খালেদ হোসেন বলেন, ‘বিগত অন্য যেকোনো মেলার চেয়ে এবারের মেলা একটু আলাদা। আগে করোনা ছিল না, কিন্তু এখন করোনার প্রকোপ কিছুটা রয়েছে। তাছাড়া ওমিক্রনের কারণে ভয় একটু বেড়েছে। এতে মানুষের সমাগম কিছুটা কম হয়েছে, তবে আজ শেষ দিন পুরোটা সময়ই ক্রেতাদের চাপ ছিল ভালোই, সন্ধ্যার পরও সমাগম অনেক বেড়েছে।
‘মেলায় আবাসন কোম্পানিগুলো আসে ক্রেতার চাহিদা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিতে। কোন আকারের, কোন শ্রেণির, কত টাকার মধ্যে প্লট, ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকে, তার একটা সার্বিক চিত্র পাওয়া যায় মেলায় অংশ নিলে। এখান থেকে ধারণা নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিভিন্ন পণ্য ও প্রজেক্ট সাজায়। তাই মেলা হচ্ছে তাদের জন্য একটা পরিকল্পনা তৈরির ক্ষেত্র। এখানে বিক্রি মুখ্য নয়, নিজের বিভিন্ন পণ্য ক্রেতাদের কাছে তুলে ধরাই প্রধান উদ্দেশ্য।’
ক্রেতা সমাগম আগের চেয়ে কিছুটা কম থাকলেও মেলার আয়োজনকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন মেরিন গ্রুপের করপোরেট সেলস এক্সিকিউটিভ রাসেল মালুম।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আবাসন খাতে একটা স্থবিরতা চলছিল। এই মেলার মাধ্যমে তা কিছুটা হলেও কেটেছে বলে মনে করি। তবে ওমিক্রনের সংক্রমণ না থাকলে ক্রেতা-দর্শনার্থী আরও বেশি থাকত। কারণ ফ্ল্যাটের বেশির ভাগ ক্রেতা থাকেন বয়স্ক মানুষরা। করোনার কারণে তাদের একটা অংশ জনসমাগম এড়িয়ে চলছেন। তাই তারা মেলায় আসেননি। এতে খুব একটা ক্ষতি হয়েছে তা নয়, কারণ এখন প্রায় সব আবাসন কোম্পানি বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি অব্যাহত রেখেছে, ফলে বাসায় থেকেই ফ্ল্যাট ও প্লটের খোঁজখবর নেয়া যায়।’
প্রথমবার আবাসন মেলায় অংশ নিয়েছে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড (এসএফআইএল)।
প্রথমবার আবাসন মেলায় অংশ নিয়ে ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড ব্যাপক সফলতা পেয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা
প্রতিষ্ঠানটির বিজনেস ডেভেলপমেন্ট রিটেইলস ফিন্যান্স বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. মুকুল হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো মেলায় অংশ নিয়েছি। আবাসন খাতে দেয়া ঋণ সম্পর্কে গ্রাহকদের জানাতে এবার আমরা মেলায় এসেছি। সার্বিক বিবেচনায় আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ গুণ সফলতা পেয়েছি।
‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের যাত্রা মাত্র দেড় বছর। মেলায় অংশ নেয়া ২০০টিরও বেশি আবাসন খাতসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এখন জানে যে আমরা গৃহঋণ দিচ্ছি। প্রথমবার হলেও আমাদের স্টলে গ্রাহক ও দর্শনার্থীদের ভিড় ও আগ্রহ অনেক বেশি ছিল।’