কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিককে মাদারীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে এক নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখ ও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন।
মামলায় নাম উল্লেখ করা চার আসামি হলেন কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফি ওরফে ইসরাফিল হুদা জয় ওরফে জয়া, মেহেদী হাসান বাবু ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।
এর মধ্যে হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ গ্রেপ্তারের পর এখন রিমান্ডে আছেন। আর রোববার সকালে কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান জানান, আরও পাঁচজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
ওই তিনজন হলেন রেজাউল করিম, মামুনুর রশিদ ও মেহিদী হাসান।
সবশেষ আশিকসহ এই মামলায় গ্রেপ্তার আছেন মোট পাঁচজন।
ধর্ষণের অভিযোগ করা নারীর ভাষ্য অনুযায়ী স্বামী-সন্তান নিয়ে বুধবার সকালে তারা কক্সবাজার পৌঁছান। এরপর শহরের হলিডে মোড়ের সি ল্যান্ড হোটেলের ২০১ নম্বর কক্ষ ভাড়া নেন। বিকেলে সৈকতে গেলে সাড়ে ৫টার দিকে তার স্বামীর সঙ্গে এক যুবকের বাগ্বিতণ্ডা হয়।
এর জের ধরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার কিছু পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে কয়েকজন তুলে নিয়ে যায়। আর তাকে একটি সিএনজি অটোরিকশায় জোর করে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
আরও পড়ুন: এমপি-ছাত্রলীগ নেতার ‘প্রশ্রয়ে’ কক্সবাজারের আশিক গ্যাং
ওই নারীর অভিযোগ, তাকে শহরের একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে নিয়ে প্রথমে তিনজন ধর্ষণ করেন। তারপর নেয়া হয় হোটেল-মোটেল জোনের জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে। সেখানে আবারও তাকে ধর্ষণ করেন একজন।
মামলার তদন্তকারী ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আশিকসহ কয়েকজন ওই নারীর পূর্ব পরিচিত। অভিযোগকারী নারী তিন মাস ধরে কক্সবাজারে আছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগ তোলা নারী গত শুক্রবার কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম হামীমুন তানজীনের আদালতে জবানবন্দি দেন।
তদন্তকারী ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ওই নারী আদালতকে জানান, তার সন্তান জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। সন্তানের চিকিৎসার জন্য অন্তত চার লাখ টাকা প্রয়োজন। সেই টাকা জোগাড় করতেই তিন মাস আগে তারা কক্সবাজারে আসেন। কক্সবাজারে তিন মাস ধরে তারা বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া করে থাকছেন বলেও জবানবন্দিতে জানান ওই নারী।
তবে অভিযোগকারী নারী এর আগেও কক্সবাজারে ছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
আরও পড়ুন: ‘কক্সবাজারে ধর্ষণে অভিযুক্তরা নারীর পরিচিত’
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে অভিযান চালায় পুলিশ। সে সময় বেআইনি কাজে জড়িত অভিযোগে ৫৪ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে ওই নারীও ছিলেন। পরের দিন পুলিশের করা একটি মামলায় ২৭ নম্বর আসামি হিসেবে তার নাম রয়েছে। ওই মামলায় ‘মানব পাচার, পতিতালয় পরিচালনা এবং পতিতাবৃত্তি ও সহায়তার’ অভিযোগ আনা হয়। এজাহারের একটি কপি পেয়েছে নিউজবাংলা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (অপারেশন) সেলিম উদ্দিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তাকে (ওই নারী) আটক করার পর মানব পাচার মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।’
সে সময় ওই নারী অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন বলেও জানান ওসি।
বাঁয়ের ছবিতে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে আশিক, পাশের ছবিতে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে জয়া (ডানে)।এদিকে, প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিকের বিরুদ্ধে এর আগেও ইয়াবা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের অভিযোগে ১৬টি মামলা রয়েছে বলে জানায় জেলা পুলিশ।
কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনের পাঁচ শতাধিক হোটেল থেকে প্রতিদিন চাঁদাবাজি করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। হোটেল মালিকরা বলছেন, চাঁদা না দিলে জিম্মি ও মারধর করত আশিকের বাহিনী।
আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্য এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির প্রশ্রয়ে আশিক দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, আশিক মূলত ছিনতাইকারীচক্রের নেতা। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের মূল নিয়ন্ত্রক তিনি। তার নেতৃত্বে রয়েছে অন্তত তিন ডজন অপরাধীর একটি চক্র।