বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এমপি-ছাত্রলীগ নেতার ‘প্রশ্রয়ে’ কক্সবাজারের আশিক গ্যাং

  •    
  • ২৫ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৫:০৬

এলাকাবাসীর অভিযোগ, আশিকের চক্রটির আশ্রয়দাতা হিসেবে আছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন। এ ছাড়া কক্সবাজার-সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গেও এই চক্রের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের প্রশ্রয়েই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে আশিকের বাহিনী।  

কক্সবাজারের এক নারীকে ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগে তার স্বামীর করা মামলায় আসামি করা হয়েছে সাতজনকে। তাদের মধ্যে প্রধান আসামি আশিকুল ইসলাম আশিকের বিরুদ্ধে এর আগেও ইয়াবা, ছিনতাইসহ নানা অপরাধের অভিযোগে ১৬টি মামলা রয়েছে।

কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল জোনের পাঁচ শতাধিক হোটেল থেকে প্রতিদিন চাঁদাবাজি করার অভিযোগও উঠেছে তার বিরুদ্ধে। হোটেল মালিকরা বলছেন, চাঁদা না দিলে জিম্মি ও মারধর করত আশিকের বাহিনী।

আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্য এবং কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতির প্রশ্রয়ে আশিক দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, আশিক মূলত ছিনতাইকারীচক্রের নেতা। তবে স্থানীয়রা বলছেন, কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের মূল নিয়ন্ত্রক তিনি। তার নেতৃত্বে রয়েছে অন্তত তিন ডজন অপরাধীর একটি চক্র।

এই চক্রের আশ্রয়দাতা হিসেবে আছেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম হোসেন। এ ছাড়া কক্সবাজার-সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গেও এই চক্রের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে।

সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার আসামি আশিকুল ইসলাম (ডানে) ও ইসরাফিল হুদা জয়া

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা ছাত্রলীগের এক শীর্ষ নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জেলায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য সাদ্দাম একটি অপরাধীচক্রকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। মূলত মোবারক আলী নামে এক সন্ত্রাসীর মাধ্যমে এ চক্রটি পরিচালনা করেন সাদ্দাম।’

তিনি জানান, ২২ ডিসেম্বর রাতে এক নারী আশিকসহ তার চক্রের কয়েক সদস্যের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন। এর আগের দিন রাতেও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা দিতে দেখা গেছে আশিকদের। বাহারছড়া ল্যাবরেটরি স্কুলের পাশে ওই আড্ডায় আশিক, জয়া, রেশাদ, মোবারকসহ অপরাধীচক্রের অনেকেই ছিলেন। পরে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম সেন্ট মার্টিন চলে যান।

তিনি অভিযোগ করেন, ‘ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটিতে টাকার বিনিময়ে জামায়াত-ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের পদ দিয়েছেন সাদ্দাম। টেকনাফ ও চকরিয়ার মাতামুহুরী কমিটিতে এ ধরনের অনেকেই আছেন।’

জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, আশিক, জয়া, বিজয়, বাবু, রেশাদ, মোবারকরা ২০১৬ সালের দিকেও ছাত্রদল করতেন। আশিক ২০১৬ সালে কক্সবাজারের ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। তবে পরে তিনি ছাত্রলীগে সক্রিয় হন। তার প্রভাব অনেক বেড়েছে বর্তমান জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের প্রশ্রয়ে।

সাদ্দামের নেতৃত্বে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের পর শোভাযাত্রায় আশিক, জয়া ও মোবারক

সাদ্দামের নেতৃত্বে গত বছরের নভেম্বরে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটিতে আশিকের কোনো পদ না থাকলেও নিজের ভিত্তি মজবুত করতে আশিকের চক্রটির প্রধান আশ্রয়দাতা হয়ে ওঠেন সাদ্দাম।

আশিকের চক্রটি পর্যটন এলাকা কলাতলীতে ইয়াবা ব্যবসা, ছিনতাই, অপহরণসহ সব ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ করেছেন হোটেল-মোটেল জোনের ব্যবসায়ীরা।

তারা জানান, সাদ্দামের পরিচয় ব্যবহার করে আশিক প্রতিদিন বিভিন্ন হোটেল থেকে চার-পাঁচ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলতেন। টাকা না দিলে হোটেলের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়ার বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আশিক কোনো যৌনকর্মীকে ‘পছন্দ’ হলেই তাকে নিয়ে যেতেন। বাধা দিলে অনেক সময় মারধরের ঘটনাও ঘটেছে।

কক্সবাজারের এই হোটেলে নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে আশিকের বিরুদ্ধে

সীলবার বে নামের একটি হোটেলে গত ১৬ ডিসেম্বর চাঁদার জন্য যায় আশিকের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা। হোটেলটির ম্যানেজার নুরুজ্জামান চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে ছুরিকাঘাতে আহত করেন আশিক। পরে ড্রয়ার খুলে চাঁদার টাকাও নিয়ে যান।

ম্যানেজার নুরুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘একটি পর্যটন শহরে সন্ধ্যার পরপরই অপরাধীচক্র মাঠে নেমে পড়ে চাঁদার জন্য। না দিলে আমার মতো হামলার শিকার হতে হয়। এটা এখানে ওপেন সিক্রেট। তারা বিভিন্ন নেতার নাম বলে চাঁদা চায়।’

আশিকের চক্রের সঙ্গে কক্সবাজার-সদর রামু আসনের এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের সখ্যের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদমর্যাদার এক নেতা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ মাসের শুরুতেই সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে আশিক ও জয়াকে দেখা গেছে। ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের বাড়ি এমপি কমলের এলাকায়। এ কারণেই কমলের শেল্টারে আছেন সাদ্দাম। অপরাধীরাও তাদের পেছনে ছুটেছে।’

শহরের যে কোনো অনুষ্ঠানে এমপি কমলের সঙ্গে জয় ও আশিককে নিয়মিত দেখা যেত। সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর গত কয়েক দিনে আশিক ও জয়ার সঙ্গে এমপি কমল ও ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দামের একাধিক ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

আশিকের চক্রকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এস এম সাদ্দাম। তার দাবি, এই চক্রের সদস্যদের তিনি ‘ঠিকমতো চেনেনই না’।

কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের সঙ্গে ধর্ষণ মামলার আসামি জয়ার (বাঁয়ে) ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে

একসঙ্গে তোলা ছবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সাদ্দাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কোনো একটা অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে ছবি তুলেছিল, ওই ছবি এখন ভাইরাল করা হচ্ছে। একটা অনুষ্ঠানে কত মানুষই তো ছবি তুলতে পারে। আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপরাধীদের সঙ্গে জড়ানো হচ্ছে। বরং তাদের শাস্তির আওতায় আনতে আমি নিজে এই ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।’

২১ ডিসেম্বর আশিক, জয়, মোবারকের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার বিষয়টিও অস্বীকার করেন সাদ্দাম। তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে ছিলাম, সেখান থেকে ফিরেছি ২১ তারিখ মধ্যরাতে, পরদিন আবার সেন্ট মার্টিন চলে গেছি। যারাই এ কথা বলেছে মিথ্যা বলেছে।’

সাদ্দামের নামে হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার নাম ভাঙিয়ে যদি কেউ চাঁদাবাজি করে, সে দায় তো আমি নিতে পারি না। এ ছাড়া আমি আরও আগেই সব হোটেল ব্যবসায়ীকে বলে রেখেছি, কেউ যদি চাঁদাবাজির চেষ্টা করে তারা যেন আমাকে জানান। তবে কখনও কোনো হোটেল ব্যবসায়ী আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ দেননি।’

ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগও অস্বীকার করেন সাদ্দাম। তিনি বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন, মনগড়া কথা। কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে আমি পদত্যাগ করব।’

আশিকের চক্রকে প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ নিয়ে বক্তব্য জানতে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি।

ধর্ষণের অভিযোগ তোলা নারীর সঙ্গে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের কাউন্টারে আশিক। ছবি: সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেয়া

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘যারা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত তাদের চিহ্নিত করা গেছে। তারা এখানে কাদের শেল্টারে থেকে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাত, সে ব্যাপারেও আমরা তথ্য পেয়েছি। এসব নিয়ে তদন্ত ও আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’

১৬ মামলা মাথায় নিয়ে আশিক কী করে প্রকাশ্যে অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন- জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘সে (আশিক) জেলে ছিল। সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আবারও অপরাধে জড়িয়েছে। তার গ্যাংয়ের সদস্যদের বিষয়েও খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’

‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণের’ অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে এক নারীর স্বামী চারজনের নাম উল্লেখ ও তিনজনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলায় নাম উল্লেখ করা চার আসামি হলেন কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়া এলাকার আশিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ শফি ওরফে ইসরাফিল হুদা জয় ওরফে জয়া, মেহেদী হাসান বাবু ও জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।

এ বিভাগের আরো খবর