‘কোভিডে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষ কোনো প্রণোদনা ও সহায়তা পায়নি। অথচ ধনীদের বেলায় প্রণোদনার অর্থের স্বল্পসুদের মেয়াদ আরও বাড়াতে চাপ দেয়া হচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ ভীষণ সংকটে। ব্যাংকিং খাতে জবাবদিহিতা নেই, গণতন্ত্র বিপর্যস্ত, বাকস্বাধীনতা কমে আসছে। এমন অবস্থা ভবিষ্যতে দেশে বড় ধরনের সংকট বয়ে আনতে পারে।’
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত বলেছেন এসব কথা।
বুধবার অর্থনীতি সমিতির ইস্কাটন কার্যালয়ে ২১তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আবুল বারকাত বক্তব্য দেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, এ জেড এম সালেহসহ কার্যকরী কমিটির সদস্যরা।
সারা দেশের অর্থনীতিবিদদের নিয়ে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী সম্মেলন শুরু হবে শুক্রবার। সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে- ‘মহামারি কোভিড-১৯ এর প্রভাব: অভিঘাত ও মানব উন্নয়ন’।
ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘একদিকে মুষ্টিমেয় ব্যক্তির অগাধ টাকা ও সম্পদের পাহাড় গড়ে উঠছে। অন্যদিকে দরিদ্ররা ক্রমেই আরও দরিদ্র হচ্ছে। দরিদ্রদের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
‘করোনা ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের শ্রেণি-কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। শহর থেকে এক কোটি মানুষ উল্টো অভিবাসনে গ্রামে যেতে বাধ্য হয়েছে। সমাজের সব ক্ষেত্রেই বৈষম্য চরম রূপ নিয়েছে। বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার চরম অবস্থায় পৌঁছে গেছে।’
শুক্রবার সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির কার্যনিবাহী কমিটি মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে অর্থনীতি শাস্ত্রে অনন্যসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতকে ‘মুজিব স্বর্ণপদক’ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে একটি বিশেষ প্লেনারি সেশন ও আটটি কর্ম-অধিবেশন এবং সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সভা ও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
‘কোভিড-১৯ থেকে শোভন সমাজ’ শীর্ষক বিশেষ প্লেনারি অধিবেশনটি উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে এতে একক বক্তা থাকবেন অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
বিশেষ প্লেনারি সেশন ও কর্ম-অধিবেশনগুলোয় সভাপতি হিসেবে অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল, ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ড. আবদুল বায়েস, অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান, অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান এবং রাষ্ট্রদূত এম আব্দুল হান্নানের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
সম্মেলনে ৮৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে। সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রায় পাঁচ হাজার অর্থনীতিবিদ এই সম্মেলনে যোগ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।