চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রায় অর্ধেক সময় পার হতে চললেও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি গতি পায়নি। প্রথম পাঁচ মাসে উন্নয়ন বাজেটের অর্থ ব্যয় হয়েছে ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ। এই বাস্তবায়ন হার গত বছরের একই সময়ের চেয়ে একটু বেশি হলেও আগের ৪ বছরের চেয়ে কম।
পরিকল্পনা কমিশনের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) বলছে, গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হার আগের বছরের চেয়ে সামান্য বেড়েছে। গত বছর এই হার ছিল ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
তবে তার আগের প্রায় ৪ বছর একই সময়ের বাস্তবায়ন হার ছিল আরও বেশি। ২০১৯-২০ সালে ১৯ দশমিক ২৪ শতাংশ, ২০১৮-১৯ সালে ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০১৭-১৮ সালে ২০ দশমিক ১১ শতাংশ, ২০১৬-১৭ সালে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ।
তবে যেহেতু বছর বছর এডিপির আকার বাড়ছে, তাই গত কয়েক বছরের চেয়ে খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। নভেম্বর পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৪৪ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৩৮ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। চলতি বছর ১ হাজার ৫৩৪টি প্রকল্পের বিপরীতে ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা এডিপি বরাদ্দ রয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার কারণে গত দুই বছরের বড় অংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সরকারও বেছে বেছে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বরাদ্দ দিয়েছিল।
তবে নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে করোনার প্রকোপ তেমন ছিল না, বরাদ্দও পর্যাপ্ত। তাই এ সময়ে কাজগুলো দ্রুত এগিয়ে নেয়া সম্ভব ছিল। তবে তা না করে বরাবরের মতোই মন্ত্রণালয়গুলো বছর শেষের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে কাজের গতি কমার পাশাপাশি মানের বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
অর্থনীতিবিদ ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমে আসায় দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরে ধীরে অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। তাই স্বাভাবিক এ সময়ে কাজ দ্রুত শেষ করা উচিত। কিন্তু তা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। দেখা যাবে, বছরের শেষে বড় অঙ্কের অর্থ থেকে যাচ্ছে। এ থেকে বের হয়ে আসা উচিত।’
গত ৫ মাসে বরাদ্দ ও খরচের অনুপাতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েরই অধীন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, দশমিক ৮৯ শতাংশ। এই বিভাগ ১ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েও খরচ হয়েছে মাত্র ১২ কোটি টাকার মতো।
পিছিয়ে পড়ার তালিকায় আরও রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ৪১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে খরচ প্রায় ৯ কোটি টাকা বা ২.১৪ শতাংশ।
৩৪৯ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়ে আইন ও বিচার বিভাগ খরচ করেছে ১০ কোটি ৯০ লাখের মতো বা ৩.১২ শতাংশ।
১৩৯ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ খরচ করেছে, যা মোট বরাদ্দের ৫.৭২ শতাংশ।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ ৬.৪৩ শতাংশ, যুব ও ক্রিয়া মন্ত্রণালয় ৬.১০ শতাংশ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ ৮.২৫ শতাংশ বরাদ্দ খরচ করেছে।