বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৮ দিনের ৭ দিনই পতন

  •    
  • ২০ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৫:২৩

গত ৭ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসিকে নিয়ে বৈঠকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসার পর আট দিনে সূচক পড়ল ৩১২.৪৪ পয়েন্ট।

আরও একটি খারাপ দিন গেল পুঁজিবাজারে। টানা দুই দিন আর আট কর্মদিবসের মধ্যে সাত কর্মদিবস পতন দেখল বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারদর কমছেই, এই পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছে না বিনিয়োগকারীরা। ফলে লেনদেনও গতি পাচ্ছে না।

আড়াই মাস আগে এক ঘণ্টায় যে লেনদেন হতো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে, এখন সাড়ে চার ঘণ্টাতেও তা দেখা যাচ্ছে না।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিদিনই লেনদেন ছিল ২ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে ৪ অক্টোবর হাতবদল হয় ২ হাজার ৭৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।

সেই লেনদেন এখন নেমেছে সাত থেকে আটশ কোটি টাকার ঘরে। গত ৫ কর্মদিবসের মধ্যে এক দিনই কেবল এক হাজার কোটি টাকার বেশি ছিল। ১৩ ডিসেম্বর তা গত আট মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো সাতশ কোটির নিচে নেমে যায়।

নভেম্বরের শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, বেশিরভাগ সপ্তাহেই প্রথম কর্মদিবস শুরু হয় পতন দিয়ে, যার ধারা বজায় থাকে দ্বিতীয় কর্মদিবসেও।

চলতি সপ্তাহেও প্রথম কর্মদিবস রোববার ৯৪.৯৮ পয়েন্ট পতন হয়। দ্বিতীয় দিন সোমবার আরও কমে ৪৬.৬৩ পয়েন্ট। ১০০ কোম্পানির শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির বিপরীতে কমছে ২৪১টির দর।

গত ৭ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসিকে নিয়ে বৈঠকে কোনো সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না আসার পর আট দিনে সূচক পড়ল ৩১২.৪৪ পয়েন্ট।

সোমবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র

সেই বৈঠক শেষে জানানো হয়, পুঁজিবাজারে ব্যাংকে বিনিয়োগের যে সীমা বা এক্সপোজার লিমিট, সেটি শেয়ারের বাজারমূল্য নাকি ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ হবে, বন্ডে বিনিয়োগ এই সীমার বাইরে থাকবে কি না –এই দুটিসহ যেসব বিষয়ে মতভিন্নতা আছে, সেগুলো নিয়ে ডিসেম্বরের শেষে বা জানুয়ারির শুরুতে আরও একটি বৈঠক হবে। সেই বৈঠকের পর দৃশ্যমান একটি ঘোষণা আসবে।

অর্থাৎ সেই বৈঠকের আলোচনা আশাবাদী হওয়ার মতো হলেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আস্থাহীনতা রয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ডিসেম্বর ক্লোজিংয়ের কারণে ব্যাংক, বিমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও কিছু মিউচ্যুয়াল ফান্ড এবং বহুজাতিক কোম্পানির প্রফিট টেকিংয়ের কারণে বিক্রয় চাপ এবং নতুন করে শেয়ার না কেনার কারণে লেনদেনও গতি পাচ্ছে না।

সোমবাররে এই লেনদেনে কোনো বিশেষ দিক নেই। প্রধান খাতগুলোর মধ্যে কেবল বিমাতেই শেয়ারদর কিছুটা বাড়তে দেখা গেছে। বাকি প্রায় সবগুলোতেই দেখা গেলে দরপতন।

লেনদেনেও বিমা খাতে আগ্রহ দেখা গেছে। শীর্ষ অবস্থানে থাকা বিবিধ খাতের সঙ্গে এর পার্থক্য খুবই কম। গত এক মাসে সবচেয়ে বেশি দিন লেনদেনের শীর্ষে থাকা ব্যাংক খাতে আগ্রহ কমে গেছে। লেনদেনে তৃতীয় অবস্থানে ছিল এই খাত।

সূচক পতনে প্রধান ভূমিকা যেসব কোম্পানির

সোমবার সূচক পতনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল গ্রামীণফোনের। কোম্পানিটির দর কমেছে দশমিক ৯১ শতাংশ। এতে সূচক পড়েছে ৫.৪২ পয়েন্ট।

ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশ (বিএটিবিসি) শেয়ার দর পতন হয়েছে প্রায় কাছাকাছি দশমিক ৯৪ শতাংশ। এতে সূচক পতন হয়েছে ৪.১৩ পয়েন্ট।

সূচক পতনে প্রধান ভূমিকায় ছিল এই ১০ কোম্পানি

টেলিকম খাতের রবির শেয়ার দর পতন হয়েছে ১.০৮ শতাংশ। সোমবার ডিএসইর প্রধান সূচকের যে পতন হয়েছে তাতে রবির অংশগ্রহণ ছিল ২.৬৩ পয়েন্ট।

ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশনের শেয়ার দর কমেছে দশমিক ৯৬ শতাংশ। এতে সূচক কমেছে ১.৭৪ পয়েন্ট।

ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ারের শেয়ার দর কমেছে ২.৭৯ শতাংশ, এতে সূচক কমেছে ১.৪০ পয়েন্ট।

বেক্সিমকো ফার্মা ১.৩৪ পয়েন্ট, বিএসআরএম স্টিল ১.১২ পয়েন্ট, ব্র্যাক ব্যাংক ১.০৫ পয়েন্ট, বার্জার পেইন্টস ১.০৩ পয়েন্ট এবং কেপিসিএলের দরপতনে সূচক পড়ে ১ পয়েন্ট।

সব মিলিয়ে এই ১০টি কোম্পানির কারণেই সূচক পড়েছে ২৫.৭৩ পয়েন্ট।

তবে শেয়ারদর সবচেয়ে বেশি পড়েছে লোকসানি ও স্বল্প মুলধনি কোম্পানির। সূচক উঠানামায় এসব কোম্পানির ভূমিকা থাকে না বললেই চলে।

এর বিপরীতে সূচকে সবচেয়ে বেশি ০.৮৬ শতাংশ পয়েন্ট যোগ করেছে সিটি ব্যাংক। এশিয়ার ইন্স্যুরেন্স, ওয়ান ব্যাংক, গ্রিনডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, বিএনআইসিএল, এসআইবিএল, ন্যাশনালটি, এনআরবিসি ব্যাংক, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইল ও পেপার প্রসেসিংও সামান্য কিছু পয়েন্ট যোগ করতে পেরেছে।

এই ১০ কোম্পানি সূচকে কিছুটা হলেও পয়েন্ট যোগ করতে পেরেছে

দর বৃদ্ধিতে শীর্ষ ১০ কোম্পানি

দর বৃদ্ধিতে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ওটিসি ফেরত দুই স্বল্প মূলধনি কোম্পানি। এর মধ্যে মনোস্পোল পেপারের শেয়ার দর বেড়েছে সবচেয়ে বেশি ৯.৭৬ শতাংশ। কোম্পানিটির ১ কোটি ৫৯ লাখ টাকার ৮৫ হাজার ১৫২টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

পেপার প্রসেসিং মিলসের শেয়ার দর বেড়েছে ৯.৩৬ শতাংশ। শেয়ার দর ১৯৪ টাকা ৩০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১২ টাকা ৫০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার।

নয় শতাংশের বেশি দর বৃদ্ধি পাওয়া আরেক কোম্পানি ছিল বিমা খাতের এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, যার দর বেড়েছে ৯.২৭ শতাংশ। শেয়ার দর ৯৬ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০৪ টাকা ৯০ পয়সা।

সোমবার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এই ৬টি খাতে

সাত শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে দুটি কোম্পানির। এর মধ্যে ন্যাশনাল টি কোম্পানির দর বেড়েছে ৭.৪৯ শতাংশ আর আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বেড়েছে ৭.০৫ শতাংশ।

ছয় শতাংশের বেশি দুটি আর পাঁচ শতাংশের বেশি ছয়টি কোম্পানির। এগুলোর মধ্যে প্রগতি লাইফেরে ৬.৬৫ শতাংশ, অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের ৬ শতাংশ, এএমসিএল (প্রাণ) ৫.৮৬ শতাংশ, লিব্রা ইনফিউসেসের ৫.৫৮ শতাংশ, সিএনএ টেক্সটাইলের ৫.৪৭ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে।

সোনালী আঁশ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স, তমিজউদ্দিন টেক্সটাইলের শেয়ার দরও বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি।

দর পতনের ১০ কোম্পানি

সাভার রিফ্যাক্টরিজের দর কমেছে সবচেয়ে বেশি ৭.৭০ শতাংশ। শেয়ার দর ১৮৪ টাকা ২০ পয়সা থেকে কমে হয়েছে ১৭০ টাকা। ৩ লাখ ৩৮ হাজার টাকা লেনদেনে হাতবদল হয়েছে ১ হাজার ৯০৮টি শেয়ার।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন শেয়ার দর কমেছে ৬.৫২ শতাংশ। এর আগে দুই কর্মদিবস ধারাবাহিক দর বেড়েছিল কোম্পানিটির। এদিন ২ কোটি ৩১ লাখ টাকার ১৭ লাখ ৫০ হাজার ৬৬২টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা কেপিসিএলের দর কমেছে ৬.১৩ শতাংশ। গত দশ কর্মদিবসে কেপিসিএলের দর বেড়েছে মাত্র দুদিন। এর মধ্যে সোমবারসহ পাঁচদিন টানা দর পতন হয়েছে কোম্পানিটির।

চতুর্থ অবস্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির দর কমেছে ৫.২৬ শতাংশ। ১ কোটি ৫২ লাখ টাকার ৫ রাখ ২৫ হাজার ৮৫২টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে।

ফাইন ফুডসের দর কমেছে ৫.০২ শতাংশ। একটিভ ফাইনের দর কমেছে ৫ শতাংশ। সুহিৃদের শেয়ার দর কমেছে ৪.২৫ শতাংশ। সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের দর কমেছে ৪.২১ শতাংশ। ফার্স্ট ফাইন্যান্সের দর কমেছে ৪.১৬ শতাংশ।

গত তিন কর্মদিবস টানা দর বৃদ্ধির পর সোমবার শেয়ার দর কমেছে ফুওয়াং ফুডের ৪.১১ শতাংশ।

বেশিরভাগ খাতই দরপতন দেখেছে সোমবার

লেনদেনে এগিয়ে থাকা ১০ কোম্পানি

রোববারের ধারাবাহিকতায় সোমবারও লেনদেনের শীর্ষে ছিল বেক্সিমকো লিমিটেড, যার ১২৮ কোটি ৮২ লাখ টাকার ৮৫ লাখ ২৬ হাজার ৯১৮টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৭০ পয়সা বা দশমিক ৪৬ শতাংশ।

জেনেক্স ইনফোসিসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ৩৭ কোটি ২৬ লাখ টাকার ২১ লাখ ৫০ হাজার ৫১৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে কোম্পানিটির।

শেয়ার দর ২.১৭ শতাংশ বা শেয়ার প্রতি ৩ টাকা ৮০ পয়সা কমে ১৭৫ টাকার শেয়ার দিন শেষে হয়েছে ১৭১ টাকা ২০ পয়সা।

ওয়ান ব্যাংকের শেয়ার দর গত সাত কর্মদিবস কমার পর বেড়েছে ২.৯০ শতাংশ। কোম্পানিটির ৩৩ কোটি ২০ লাখ টাকার ২ কোটি ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার ২২৫টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। শেয়ার দর ১৩ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪ টাকা ২০ পয়সা।

বিমা খাতের এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকার। হাতবদল হয়েছে ২৭ লাখ ২ হাজার ২৩টি শেয়ার।

বিমা খাতের আরেক কোম্পানি সেনাকল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের দর বেড়েছে দশমিক ৪৭ শতাংশ। লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ১৯ লাখ ৮৬ হাজার ৯৬৩টি শেয়ার।

আইএফআইসি ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা। হাতবদল হয়েছে ৭৬ লাখ ৪১ হাজার ৬৭০টি শেয়ার।

ফরচুন সুজের লেনদেন হয়েছে ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকার। শেয়ার হাতবদল হয়েছে ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৬৮৭টি।

জিএসপি ফাইন্যান্সের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৮১ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ড টেক্সটাইলের ১০ কোটি ৫৩ লাখ টাকা, ফাস্ট সিকিউরিজিস ইসলামী ব্যাংকের লেনদেন হয়েছে ১০ কোটি ৪৭ লাখ টাকার।

এ বিভাগের আরো খবর