মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআন এবং বাংলাদেশের সংবিধানকে নিয়ে দেয়া ডাকসুর সাবেক সহসভাপতি নুরুল হক নুরের একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নুরের এই বক্তব্যে কোরআনের অবমাননা হয়েছে দাবি করে অনেকেই তার গ্রেপ্তারও দাবি করছেন। এমনকি নুরের অনেক সমর্থকও এই ইস্যুতে তার সমালোচনা করছেন। তাদের দাবি, নুর যেন সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করে তওবা করেন।
ছড়িয়ে পড়া সেই ১৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে নুর বলেন, ‘কোরআন যদি মুসলমানের ধর্মগ্রন্থ হয়ে থাকে আর বাইবেল যদি খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ হয়ে থাকে তাহলে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব বাংলাদেশির জন্য বাইবেল এবং কোরআনের সমতুল্য হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান। এই সংবিধানের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয়।’
সেই ভিডিওতে নুরের আশপাশে যারা ছিলেন তাদের মাথার ক্যাপ দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর একটি অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্য।
গত ৩১ আগস্ট যুব অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। তবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দেয়া সেই বক্তব্য সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নুরের ওই বক্তব্যে কোরআনের অবমাননা হয়েছে দাবি করে অনেকেই তার সমালোচনা করছেন। সরকারি দল আওয়ামী লীগের অনেক সমর্থক তার গ্রেপ্তার দাবি করে ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন।
তবে নুরের সমর্থকরা তার গ্রেপ্তার দাবি না করলেও বক্তব্য প্রত্যাহার করে তওবা করার আহ্বান জানাচ্ছেন।
সাইফুল মাদানী জীবন নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, ‘কোরআন আর সংবিধান এক কোন পাগলে বলে? হতভাগারা বুঝবে না কোরআনের মূল্য। এবার ভিপির আসল মুখোশ খুলল।’
আবুল হাসেম নামের একজন লেখেন, ‘নুরুল হক নুর, তুমি যদি এটি বলে থাক তাহলে তোমার ওই কথা প্রত্যাহার করো।’
আব্দুল জলিল লেখেন, ‘তোমারও মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। তওবা করে মুসলিম জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
ইয়াসিন লেখেন, ‘ভিপি নুরকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং আল্লাহর কাছে খাস নিয়তে তওবা করতে হবে।’
হাফিজুর রহমান বাতেন লেখেন, ‘হিসাব করে কথা না বলার কারণে অনেকের মন থেকে সে বের হয়ে গেল।’
সর্বশেষ গত বুধবার চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এক ওয়াজ মাহফিলে সোলাইমান আলী রজভী নামের এক ধর্মীয় বক্তা বলেন, ‘আমার দেশের তথাকথিত ইউনিভার্সিটির একজন ভিপি; যার নাম ভিপি নুর। সে কোরআনকে বাংলার সংবিধানের সঙ্গে এক করে বক্তব্য দিয়ে আমার কোরআনের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। কোরআনের শানে আঘাত করেছে। এই ভিপি নুরকে অচিরেই গ্রেপ্তার করা দরকার।’
রজভী বলেন, ‘বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন মুসলমান। যে প্রধানমন্ত্রী ফজরের নামাজ পড়ে হাতের মধ্যে কোরআন নেন উনাকে বলছি, আপনার ধর্মীয় কিতাবকে অবমাননা করা হয়েছে। অচিরেই তার বিরুদ্ধে আপনার ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
রজভীর সেই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ভিডিওটি প্রায় তিন লাখ মানুষ দেখেছে।’
ধর্মীয় এই বক্তার সেই ভিডিও নিয়ে শুক্রবার দুপুরে ইংরেজিতে লেখা নুরুল হক নুর পেইজ থেকে ফেসবুক লাইভে আসেন নুর।
লাইভে তিনি দাবি করেন, এ রকম কোনো বক্তব্য তিনি দিয়েছেন কি না তা মনে পড়ছে না। আর দিলেও এটি তিনি মুখ ফসকে বলেছেন। অনেক আগের বক্তব্য এখন সামনে আসার পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
নুর বলেন, ‘কোরআনের সঙ্গে মানবরচিত পৃথিবীর কোনো গ্রন্থের তুলনা চলে না। কোরআনের সমতুল্য কোনো গ্রন্থও পৃথিবীতে নেই। আমিও অবাক হচ্ছি। এই বক্তব্য আমি দিয়েছি কি-না, সেটি নিয়েও সন্দেহ আছে। আর আমরা যারা রাজনীতি করি, বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি দিই, কথা বললে স্লিপ অব টাং হতেই পারে। কিন্তু সেটাকে ফেব্রিকেটেড করে রংচং মাখিয়ে অপপ্রচার করা এবং সেটাকে আবার ভাইরাল করার জন্য আরেক দল লেগে থাকে। সে কারণে আমি খুব অবাক হয়েছি।’
লাইভে নুর আরও বলেন, ‘একজন মুসলমান হিসেবে কোরআনকে আমি আমার মাথার ওপরে রাখি। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট ধর্মীয় গ্রন্থ এটি নিয়ে কোনো মুসলমান বিতর্ক করে না। যারা নাস্তিক বা অন্য ধর্মের তাদের কথা আলাদা। আমি তো নাস্তিকও না অন্য ধর্মেরও না। এই কথাটা যদি আমি বলে থাকি, তাহলে সেটি অসতর্কতাবশত হয়েছে। তবে আমি এটি বলেছি বলে মনে হয় না। ফেব্রিকেটেড করে এই বক্তব্য প্রচার করা। দেখে বুঝা যাচ্ছে যে, কারও অসৎ উদ্দেশ্য থাকলেই কেবল এ ধরনের জঘন্য কাজ করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘অনেকে রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহার করেন। ধর্মপ্রাণ মানুষের মনকে সহজে প্রভাবিত করা যায়। বাম-ডান সবার কাছে যেহেতু আমাদের একটি অন্য রকমের গ্রহণযোগ্যতা আছে, সে জন্য ধর্মীয় ইস্যুতে ভিপি নুরকে একটু কাবু করার জন্য এসব লোককে দিয়ে হয়তো কেউ করাচ্ছে।’
এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে নুর বলেন, ‘এগুলো বিভ্রান্তিকর। এগুলো কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এডিট করে প্রচার করছে। তার পরও সেটি যদি আমার বক্তব্য হয়ে থাকে, আমি সেটা প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। এটা তো কমনসেন্সের বিষয় যে, সচেতনভাবে ইসলাম ধর্মের কেউ এই ধরনের বক্তব্য দেবে না।’