বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রতিবেশীর আনন্দ দেখতে পাওয়া সৌভাগ্যের: রামনাথ

  •    
  • ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ১৬:৫৫

ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভারতীয়দের হৃদয়ে বাংলাদেশের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। আমাদের রয়েছে আত্মীয়তা, ভাগাভাগি করা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রাচীন বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে রচিত এক অনন্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।’

ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর আনন্দ দেখতে পাওয়া অন্য প্রতিবেশীর জন্য সৌভাগ্যের বলে মনে করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ।

তিনি বলেছেন, বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে তার যাত্রায় সহায়তা করতে এবং বৃহত্তর সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

শুক্রবার ভারতীয় নাগরিক ও ঢাকায় ভারতীয় বন্ধুদের জন্য এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রামনাথ কোবিন্দ এমন মন্তব্য করেন।

রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের এই ঐতিহাসিক ৫০তম বছরে আজ ঢাকায় আসতে পেরে আমি আনন্দিত। একজন ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা করার আনন্দ ও সম্মানের পাশাপাশি বাংলাদেশের জনগণের উষ্ণতা ও ভালবাসা আমাকে গভীরভাবে ছুঁয়েছে।

‘আপনাদের সঙ্গে দেখা করার ঠিক আগেই আমি ঐতিহাসিক রমনা কালী মন্দির থেকে ফিরেছি। সেখানে সংস্কার করা মন্দির উদ্বোধন করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমি একে মা কালীর আশীর্বাদ হিসেবে দেখি।’

ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে যে বাংলাদেশ-ভারতের সরকার ও জনগণ মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক ধ্বংসকৃত মন্দিরটি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করেছে। দখলদার বাহিনীর হাতে বিপুলসংখ্যক মানুষ এখানে নিহত হয়।'

‘মন্দিরটি ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধনের প্রতীক। এটি আমার বাংলাদেশ সফরের একটি শুভ সমাপ্তি ঘোষণা করবে।

‘গত বছর কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর থেকে এটাই আমার প্রথম বিদেশ সফর। আমি এই সফরকে সবচেয়ে সঠিক বলে মনে করছি। কারণ আমার প্রথম বাংলাদেশ সফর এই বিশেষ বছরে ঘটছে, যখন আমরা যৌথভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করছি।’

ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘স্বৈরাচার থেকে স্বাধীনতা অর্জনে বাংলাদেশের জনগণের বিপুল ত্যাগের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাই। ভয়ঙ্কর প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদের অদম্য সাহসিকতাকে আমরা অভিনন্দন জানাই। আমি আপনাদের ভারতীয় বন্ধুদের এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আত্মত্যাগের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাই, যারা একটি নৈতিক কারণে তাদের প্রাণ দিয়েছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘ভারতীয়দের হৃদয়ে বাংলাদেশের একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। আমাদের রয়েছে আত্মীয়তা, ভাগাভাগি করা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রাচীন বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে রচিত এক অনন্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমাদের সম্পর্ক দুই দেশের বিচক্ষণ নেতৃত্বের দ্বারা লালিত হচ্ছে।

‘ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে শ্রদ্ধা নিবেদন করার সময় বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঢাকায় যে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের জনগণ যে নৃশংসতা ও গণহত্যার মুখোমুখি হয়েছিল এবং নৃশংস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র সংগ্রামের কথাগুলো আমার মনে পড়ছিল।

‘আমি শ্রদ্ধা জানাই সেই হাজার হাজার নারীর প্রতি যাদের মর্যাদা লঙ্ঘন করা হয়েছিল এবং অসহায় বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি, শুধু সম্মানজনক জীবনযাপন করার আকাঙ্ক্ষা ছাড়া যাদের কোনো দোষ ছিল না এবং যাদেরকে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছিল। আজ যেমন আপনাদের দেশ এই অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের মডেলে পরিণত হয়েছে, তেমনি বিশ্ববাসীর কাছে প্রমাণ হয়েছে যে, বাংলাদেশের জনগণের লড়াই ন্যায়সঙ্গত ছিল। এই লড়াই ছিল মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ছিল প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতার শক্তিকে পরাজিত করে অধিকারের শক্তির জয়।

রামনাথ কোবিন্দ বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পর, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বড় ধরনের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। ভারত এই প্রশংসনীয় প্রবৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছে। আমাদের দুদেশের জনগণের মধ্যে যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক যোগসূত্র তৈরি হয়েছে সেটিও এই প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের যৌথ গল্পে অবদান রেখেছে।’

ভারতের রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ভুটান এবং নেপালের সঙ্গে স্থল সীমানা ভাগ করে নেয়া একটি দেশ হিসেবে ভারত এই সত্যটি সম্পর্কে সচেতন যে, একটি সুসংযুক্ত ও উন্নত সমন্বিত উপ-অঞ্চল আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং তাদের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নমূলক আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই চেতনার আলোকে একটি শক্তিশালী অর্থনীতির দিকে বাংলাদেশের যাত্রায় সহায়তা এবং বৃহত্তর সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় অংশীদার হতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমি উভয় পক্ষের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়, বিশেষ করে বাংলাদেশ এবং আমাদের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সংযোগ নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সুযোগটি কাজে লাগাতনার অনুরোধ করছি।’

কোবিন্দ বলেন, ‘আমরা তরুণ জাতি হিসেবে ভাগ্যবান, যাদের উদ্যমী এবং সৃজনশীল জনগোষ্ঠী রয়েছে। তরুণরাই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমাদের অবশ্যই এই জনসংখ্যাগত সুফল কাজে লাগাতে হবে, যাতে করে এটি জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারে।

‘আমি আজ এখানে উপস্থিত সব ভারতীয় নাগরিককেও অভিনন্দন জানাই। আপনারা সবাই বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখার পাশাপাশি আপনারা আমাদের দীর্ঘস্থায়ী, ঘনিষ্ঠ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককেও দৃঢ় করেছেন। আমাদের অঞ্চলে সমৃদ্ধি এনে আপনারা ভারতকে গর্বিত করছেন। এই কাজগুলো করার সময়, আপনারা আমাদের দেশের মূল্যবোধ এবং রীতিরও অনুসরণ করেছেন, যা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ভাগ করে নেয়া যৌথ ঐতিহ্যেরও অংশ।’

একটি প্রগতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক ও সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজের বাংলাদেশের মৌলিক মূল্যবোধ বজায় রাখা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রধান অবদান। আমি রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছিলাম যে, ভারত এমন একটি বাংলাদেশকে সমর্থন করবে যা এদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে আবির্ভূত মূল্যবোধগুলিকে তুলে ধরে বলে তিনি জানান।

রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে আমাদের বন্ধুদের আবারও আশ্বাস দিচ্ছি, ভারত আপনাদের অসাধারণ সদিচ্ছা ও বন্ধুত্বকে মূল্যায়ন করে। আমরা ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত থাকা, যৌথভাবে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি অর্জন এবং আমাদের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রত্যাশা করছি।

‘এই অনন্য বছরে, মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং আমাদের বন্ধুত্বের ৫০তম বার্ষিকী এবং সে সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতার ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপন করার সময়ে, আসুন আমরা আমাদের জাতির স্থপতিদের স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজেদেরকে পুনরায় উৎসর্গ করি। আমি আত্মবিশ্বাসী, ১৯৭১ সালে রক্ত ও আত্মত্যাগের ফলে তৈরি এই বন্ধন ভবিষ্যতেও আমাদের দেশ দুটিকে একসূত্রে বেঁধে রাখবে।’

এ বিভাগের আরো খবর