জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) একটি হলে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে খাবার আয়োজন নিয়ে ছাত্রলীগের ‘খবরদারির’ প্রতিবাদে প্রভোস্টসহ পাঁচ শিক্ষকের পদত্যাগের ঘটনা তদন্তে কমিটি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক আহমেদুল বারীকে প্রধান করে বৃহস্পতিবার বিকেলে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর নিউজবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দোলনচাঁপা হলের প্রভোস্ট ও চার হাউস টিউটরের পদত্যাগের ঘটনায় করা তদন্ত কমিটিকে দুই সপ্তাহ অর্থাৎ ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
আরও পড়ুন: খাবার নিয়ে ছাত্রলীগের ‘খবরদারি’, হল প্রাধ্যক্ষসহ ৫ জনের পদত্যাগ
বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দোলনচাঁপা হলের ছাত্রীদের জন্য খাবার আয়োজন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিবের হুমকি ও অপমানের অভিযোগ তুলে বুধবার বিকেলে পদত্যাগ করেন পাঁচ শিক্ষক।
ওই পাঁচজন হলেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ও দোলনচাঁপা হলের প্রভোস্ট সিরাজুম মনিরা এবং বাকি চারজন হাউস টিউটর। তারা হলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আফরোজা আক্তার লিপি, ইংরেজি বিভাগের ফারজানা খানম, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের আরিফুর রহমান এবং চারুকলা বিভাগের রাশেদুর রহমান।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান রাকিব
সিরাজুম মনিরা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিজয় দিবস উপলক্ষে ছাত্রীদের খাবারের জন্য ৬১ হাজার টাকা ও অন্যান্য উপহারসামগ্রী জোগাড় করি। আমরা খাসি ও পোলাওয়ের চালসহ সবকিছু কিনে ফেলি। ছাত্রীদের খাবারের টোকেনও দেয়া হয়।
‘এ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতা রাকিব তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে এসে বলে, খাসি ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রি করে তাদের হাতে পুরো টাকা তুলে দিতে হবে। ছাত্রলীগ সেক্রেটারির কথামতো না চললে কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারবে না।’
পদত্যাগের পর মনিরা অভিযোগ করেন, ‘রাকিবের অনুসারীরা আমাকে প্রতিনিয়ত মানসিক চাপ প্রয়োগ করছে। ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছি না। বাইরে বের হলে রাকিবের ছেলেরা ক্ষতি করতে পারে এমন আশঙ্কায় থানায় গিয়ে জিডি করতেও ভয় পাচ্ছি।’
তবে রাকিবের দাবি, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ মিথ্যা। শিক্ষকদের এভাবে পদত্যাগ করা বাড়াবাড়ি।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের অনুরোধে আমরা দুটি হলের খাবারের আয়োজন একসঙ্গে করতে চেয়েছিলাম। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা ও প্রক্টর স্যারের সামনেই আলাপ হয়েছে। আমি কাউকে হুমকি দেইনি বা অপমান করিনি।’
পাঁচ শিক্ষকের পদত্যাগের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি এমদাদুর রাশেদ জানান, যারা শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট করেছে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নাহলে সব শিক্ষক একসঙ্গে কর্মবিরতিতে যাবেন।
প্রক্টর উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। তবে রাকিবের অনুসারীরা যে সিরাজুম মুনিরাকে ফোন দিয়ে হুমকি দিচ্ছে তা আমার জানা নেই। যদি এমন হয় তাহলে তিনি তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ জানাতে পারেন। এরপর বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’