পেট ফুলে যাওয়া ছাড়া প্রথম দিকে তেমন সমস্যা ছিল না মোস্তফার। ধীরে ধীরে পেটে অল্প ব্যথা অনুভব হয়। পরে পেট ফুলতে শুরু করে। পেটের আকৃতি হয় চাকার মতো।
বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে অবশেষে কয়েক দিন আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্বিভাগে আসেন মোস্তফা। চিকিৎসক তাকে হাসপাতালটিতে ভর্তি করান।
গতকাল রোববার দুপুরে অস্ত্রোপচার করে পেট থেকে বের করা হয়েছে ১০ কেজি ওজনের একটি টিউমার। টানা তিন ঘণ্টা এ অস্ত্রোপচারের পরও সুস্থ আছেন মোস্তফা।
৩১ বছর বয়সী মোস্তফার বাড়ি ময়মনসিংহ জেলায়। তিন বছর ধরে তার পেটে ছিল টিউমারটি।
বিএসএমএমইউ-এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিদ্যুৎ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘রোগীর পেটে আমরা একটি চাকা বা লাম দেখতে পাই। পরে আমাদের ইউনিটে ভর্তি করানোর পর বায়োপসি করি। ধারণা করেছিলাম, ওনা কোনো রোগের কারণে হবে। বায়োপসিতে দেখা গেল সেটি আসলে একটি টিউমার। পরে আমরা অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিই।’
তিনি বলেন, আমরা অপারেশন করতে এক ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিই। পরে চার ব্যাগ রক্ত জোগাড় করে অপারেশন শুরু করি। তিন ঘণ্টা পর ১০ কেজি ওজনের টিউমারটি অপসারণ করা হয়। তিনি এখন সুস্থ রয়েছেন।
এই চিকিৎসক আরও জানান, প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করানো হলে রোগীর ঝুঁকি কমে যায়। তাই শরীরের কোথাও কোনো চাকা হলে বা পেট ভারী হওয়ার মতো সমস্যা দেখা গেলে চিকিৎসা নিতে দেরি করা উচিত নয়।
নিজের চিকিৎসক জীবনে এত বড় আকারের কোনো টিউমার পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় বের করার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম বলে জানালেন ওই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, হাসপাতালের দীর্ঘদিনের অস্ত্রোপচারের তালিকায় এ ধরনের টিউমার অক্ষত বের করার নজির পাওয়া যায়নি।
বিদ্যুৎ চন্দ্র বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং গুরুত্বপূর্ণ রক্তনালিগুলো সুরক্ষিত রেখে পুরো টিউমারটি একবারে বের করে আনা। অস্ত্রোপচারের সময় কিডনি ও খাদ্যনালির নিম্নাংশসহ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোনো ক্ষতি হয়নি।’
অস্ত্রোপচারের সময় অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোনো রক্তনালিতে আঘাত লাগলে রোগীর জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারের সময় টিউমারটি কোনোভাবে ফেটে গেলেও হতে পারত বড় ধরনের সমস্যা বলে জানান তিনি।
কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? চিকিৎসকরা জানালেন, টিউমারের মধ্যে ক্যানসারের কোষ থাকলে সেটি ফেটে গেলে পুরো পেটের ভেতর ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যদিও এখনো জানা যায়নি, ঠিক কোন ধরনের টিউমারে আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই রোগী।
টিউমারের আণুবীক্ষণিক পরীক্ষার ফল পাওয়া গেলে এ বিষয়গুলো জানা যাবে। পরীক্ষার জন্য এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ফল জানা যাবে।
অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম জোয়ার্দারের নেতৃত্বে অস্ত্রোপচারে অংশ নেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিদ্যুৎ চন্দ্র দেবনাথ, ডা. ফেরদৌস আলম খানসহ আরও কয়েকজন।