সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার পর বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যেই জাপানে জন্ম নেয়া দুই কন্যাশিশুকে নিয়ে হাজির হয়েছেন তাদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ।
বেলা ১১টা ২৩ মিনিটের দিকে শিশু দুটিকে নিয়ে আপিল বিভাগে উপস্থিত হন ইমরান। একই সময়ে উপস্থিত হন শিশুদের জাপানি মা এরিকো নাকানো।
ইমরানের বিরুদ্ধে শিশুদের জাপানি মা এরিকো নাকানোর আনা আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানি চলছে। প্রধান বিচারপতিসহ পাঁচ বিচারপতি শিশুদের খাস কামরায় ঢেকে তাদের বক্তব্য শুনছেন।
দুই শিশুকে রোববার রাত ১০টার মধ্যে মায়ের কাছে দেয়ার কথা থাকলেও দেননি বাবা শরীফ ইমরান। এই নির্দেশনা না মানায় তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনবেন বলে রোববারই জানিয়েছিলেন এরিকোর আইনজীবী।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ রোববার সকালে দুই দিনের জন্য শিশু দুটিকে মায়ের কাছে দেয়ার নির্দেশ দেয়। আদালত বলে, ‘দুই দিন শিশুরা মায়ের কাছে থাকবে।’
এরপর ১৫ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির তারিখ ঠিক করে দেয় আদালত।
এর আগে গত ১৯ আগস্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক স্বামী শরীফ ইমরানের কাছ থেকে ১০ ও ১১ বছর বয়সী দুই কন্যাসন্তানকে ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন জাপানি নারী এরিকো। রিটের দীর্ঘ শুনানি শেষে গত ২১ নভেম্বর রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে দুই কন্যাকে বাবার কাছে রেখে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দেখা করতে পারবেন। আর এ জন্য মায়ের সব খরচ বাবাকে বহন করতে হবে।
হাইকোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধেই আপিল করেন মা।
২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানের এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান জাপানি আইন অনুযায়ী বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তারা হলো জেসমিন মালিকা, লাইলা লিনা ও সানিয়া হেনা।
এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। মালিকা, লিনা ও হেনা টোকিওর চফো সিটিতে আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসআইজে) শিক্ষার্থী ছিল।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি শরীফ ইমরান বিয়ে বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। ২১ জানুয়ারি ইমরান এএসআইজে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ এরিকোর সম্মতি না থাকায় তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে ইমরান তার মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপ থেকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান।
২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে তার সন্তানদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। এরিকো তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এরপর ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার সন্তানদের জিম্মার অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি শিশুদের সঙ্গে পারিবারিকভাবে সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
এরিকোর অভিযোগ, গত ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট নেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ইমরান তার দুই মেয়ে জেসমিন ও লাইলাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।