কয়েকটি এনজিও ও ব্যক্তির বিভ্রান্তিকর তথ্যের উপর ভিত্তি করে র্যাব ও তার বাহিনীর সাবেক-বর্তমান শীর্ষ সাত কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সচিবালয়ে রোববার তথ্য অধিদপ্তরে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি দিজ অ্যাকশন ইজ মিস লিডেড। কারণ, আমাদের দেশের কিছু এনজিও, কিছু ব্যক্তিবিশেষ ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন জায়গায় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তারা বিভিন্ন দেশে, অন্যান্য দেশে ভুলভাবে তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করেন। ফেব্রিকেটেড, মিসলিডেড তথ্য উপাত্তের প্রেক্ষিতে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মনে করি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যেভাবে র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এটা অনভিপ্রেত, দুঃখজনক ও অগ্রহণযোগ্য। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে সরকার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলবের ঘটনা দেশে আগে ঘটেছি কিনা, সাম্প্রতিক সময়ে ঘটেনি।’
যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞা কূটনৈতিক শিষ্ঠাচার বহির্ভূত বলেও মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্র আমাদের উন্নয়ন সহযোগী এবং নানাভাবে আমাদের জাতির অগ্রগতিতে সহযোগিতা করে আসছে। সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গি দমনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ট্যাকটিক্যাল (কৌশলগত) সহযোগিতা রয়েছে। তাদের সেই সহযোগিতা নিয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো উপকৃত হয়েছে।
‘যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র। উন্নয়ন সহযোগী। আমরা আশা করছি, এক্ষেত্রে তারা আমাদের দেশের সেন্টিমেন্ট অনুধাবন করতে সমর্থ হবে। কারণ কোনো ধরনের যোগাযোগ ছাড়া হঠাৎ করে এভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে হয়েছে কিনা, কূটনৈতিক শিষ্টাচার লংঘিত হয়েছে বলে আমরা মনে করি।’
এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও তুলে ধরেন মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। তাদের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ক্রমাগতভাবে বছরের পর বছর মানবাধিকার লঙ্ঘন করে। তাদের হেফাজতে যে মৃত্যু হয় সেগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা রয়েছে। গুয়ানতানামো বে-তে বন্দিদের ওপর নির্যাতন করা হয় সেগুলো নিয়ে বহু প্রতিবেদন বিশ্বব্যাপী প্রকাশিত হয়েছে, সেটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবাদ হয়েছে।
‘ট্রাম্প প্রশাসনের সময় অভিবাসীরা যখন সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেছে, তখন মা-বাবার কাছ থেকে যেভাবে শিশুদের আলাদা করে রাখা হয়েছে, সেটি অন্য কোনো দেশে হয়েছে বলে আমার জানা নেই। সে নিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ হয়েছে। ফ্লয়েডকে দিনের বেলা গলায় পা দি চেপে ধরে হত্যা করা হয়েছে। এমন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেনি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে জঙ্গি দমনের সময় এনকাউন্টারে অনেক জঙ্গি মারা যায়। বোস্টনে যখন বোমা হামলা হয়, এরপর তাদেরকেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এরপ্রেক্ষিতে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোনো বড় দেশ ভবিষ্যতে সেসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় কিনা সেটি দেখার বিষয়।
‘আমরা মনে করি, এ ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই থাক। আমাদের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে সম্পর্ক যেটির ওপর এ ঘটনার প্রেক্ষিতে কোনো প্রভাব পড়বে না।’
মার্কিন নিষেজ্ঞার কোনো প্রভাব জাতীয় নির্বাচনেও পড়বে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেবে জনগণ। কোন দেশ কার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল সেটি জনগণের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।
‘যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কিন্তু ইসরাইলের কোনো কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেখিনি। যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ভালো সম্পর্ক, ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে সেসব দেশের কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে দেখিনি।’