বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পিপলস লিজিং লুট: সাকার ৩ স্বজনসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ

  •    
  • ৯ ডিসেম্বর, ২০২১ ২১:৩৭

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর তিন স্বজন সামির কাদের চৌধুরী, সামিহা কাদের চৌধুরী ও সাজিয়া কাদের চৌধুরীর নামে ঋণ নেয় হয় ৭ কোটি ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫১৮ টাকা। সেই ঋণ এখন সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৫০৪ টাকা। সব মিলিয়ে ১৪ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ৫৪ কোটি ৭২ লাখ ২২ হাজার ৫২৬ টাকা ঋণ নিয়েছিল। তা সুদে-আসলে এখন হয়েছে ২১৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার ১৮০ টাকা।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর তিন স্বজনসহ ১৪ জনকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

তাদের গ্রেপ্তার করে ৯ জানুয়ারি আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে।

যাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই গিয়াস কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরী ও মেয়ে সামিহা কাদের চৌধুরী। আছেন আরেক স্বজন সাজিয়া কাদের চৌধুরীও।

ঋণখেলাপি অন্যদের মধ্যে আছে নাহার ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের তিনজন, এসএস ফিলিং স্টেশনের কর্ণধার, শোভা ফুড, জেসন ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডিসহ দুজন, জেসন অ্যাগ্রো, জেসন ব্রিডার্স, জেসন অ্যাপারেল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

আদালতের আদেশের বিষয়টি জানিয়েছেন পিপলস লিজিংয়ের আইনজীবী মিসবাহুর রহমান।

এই ব্যক্তি ও কোম্পানিগুলো নানা সময় পিপলস লিজিং থেকে ৫৪ কোটি ৭২ লাখ ২২ হাজার ৫২৬ টাকা ঋণ নিয়েছিল। সেই ঋণ সুদে-আসলে এখন হয়েছে ২১৫ কোটি ৪৭ লাখ ২৫ হাজার ১৮০ টাকা।

সাকার স্বজনদের কত টাকার ঋণ

হাইকোর্টের তালিকা অনুযায়ী সামির কাদের চৌধুরী ২০০৯ সালে ঋণ নেন ২ কোটি ৩০ লাখ ৪৬ হাজার ৬৯২ টাকা। এক যুগেও সে টাকা পরিশোধ না করায় এখন দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার ২৬৪ টাকা।

সামিহা কাদের চৌধুরী ও সাজিয়া কাদের চৌধুরী ঋণ নেন ২০১৩ সালে। তারা দুজনই তোলেন ২ কোটি ৪১ লাখ ৬৯ হাজার ৪১৩ টাকা করে। সেই ঋণ এখন সুদে-আসলে হয়েছে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৭২ হাজার ৬২০ টাকা।

অর্থাৎ এই তিনজনের নামে ঋণ নেয় হয় ৭ কোটি ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৫১৮ টাকা। সেই ঋণ এখন সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৩৭ লাখ ১৫ হাজার ৫০৪ টাকা।

এই তিনজন পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি ঢাকা ডায়িং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির পরিচালকও। তারা বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে নেই।

এদের মধ্যে সামির কাদের ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম-৬ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন বিএনপির প্রার্থী হিসেবে। তবে খেলাপি ঋণের কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়।

অন্যদের ঋণ কত

অন্য যে ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে নাহার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিংয়ের নামে। এর মধ্যে ২০০৫ সালে নেয়া হয় দেড় কোটি টাকা, যা সুদে-আসলে এখন হয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ ৭৩ হাজার ৪৪৪ টাকা।

২০১০ সালে ঋণ নেয়া হয় ১০ কোটি টাকা, যা সুদে-আসলে দাঁড়িয়েছে ৫৩ কোটি ২৩ লাখ ৪২ হাজার ৮০০ টাকা। ২০১১ সালে নেয়া ১৫ কোটি টাকার ঋণ। এখন দাঁড়িয়েছে ১১২ কোটি ৪৫ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ টাকা।

অর্থাৎ সাড়ে ২৬ কোটি টাকার ঋণ এখন সুদে-আসলে হয়েছে ১৭২ কোটি ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৫৮৪ টাকা।

এসএস ফিলিং স্টেশন ২০১০ সালে ঋণ নেয় ২ কোটি ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৮ টাকা। সুদে-আসলে এখন দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৮ লাখ ৪২ হাজার ১৪০ টাকা।

বাঁধন ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ২০১৩ সালে নেয় আড়াই কোটি টাকা। সুদে-আসলে বর্তমান পাওনা ৪ কোটি ৭৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৭০ টাকা।

শোভা ইন্টারন্যাশনালের নামে ২০১৩ সালে নেয়া হয় দেড় কোটি টাকা। এখন খেলাপি ৮২ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৭ টাকা।

জেসন ফার্মাসিউটিক্যালসের নামে ২০১১ সালে নেয়া হয় ৫ কোটি টাকা। এখন খেলাপি দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৩০ টাকা।

একই কোম্পানির নামে ২০১৩ সালে নেয়া হয় আড়াই কোটি টাকা। এখন খেলাপি ২ কোটি ৪৩ লাখ ৪৬ হাজার ১৯৩ টাকা।

জেসন অ্যাগ্রোর নামে ২০১৩ সালে নেয়া হয় আড়াই কোটি টাকা। এখন দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৯ লাখ ৯ হাজার ৬০০ টাকা।

জেসন ব্রিডার্সের নামে ২০১৩ সালে নেয়া হয় আড়াই কোটি টাকা। সেটি এখন দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৭০ লাখ ৬৭ হাজার ৪৮৬ টাকা।

জেসন ন্যাচারাল প্রডাক্টের নামে ২০১৩ সালে নেয়া হয় আড়াই কোটি টাকা। এখন দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬২০ টাকা।

আইনজীবী যা বলছেন

পিপলস লিজিংয়ের আইনজীবী মিসবাহুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, গত ১২ জুলাই যে আদেশে আদালত পিপলস লিজিং বাঁচাতে বোর্ড গঠন করে দিয়েছিল। সেই একই আদেশে আরেকটি নির্দেশনা ছিল সেটি হলো, ৩০ দিনের মধ্যে ঋণখেলাপিদের ডাউন পেমেন্টের কিছু অংশ দাখিল করতে হবে। বাকি টাকা পুনঃতফসিল করার জন্য আবেদন করবেন।

মিসবাহুর বলেন, ‘আদালতের এ আদেশের পর ঋণখেলাপিদের পিপলস লিজিং চিঠি দেয়ার পাশাপাশি ই-মেইল এবং ফোনে যোগাযোগ করে। এরপর ২১ জন ঋণখেলাপির তালিকা আমি পাই। এই ২১ জনের মধ্যে ছয়জন ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বাকিটা কীভাবে দেবে সেটা তারা জানায়। আরেকজন অসুস্থ থাকায় তাকে বাদ দিয়ে বাকি ১৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে হাইকোর্ট।’

বিদেশে পলাতক পিকে হালদার কাণ্ডে ডুবতে বসা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডকে বাঁচাতে ১০ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করে আদেশ দেয় গত ১৩ জুলাই। বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলমকে।

বোর্ডের সদস্য করা হয় সাবেক সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার, সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ হাসান শাহীদ ফেরদৌস, পূবালী ব্যাংকের সাবেক এমডি আব্দুল হালিম চৌধুরী, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) কাজী তৌফিকুল ইসলাম, নুর-এ-খোদা আব্দুল মবিন এফসিএ, মওলা মোহাম্মদ এফসিএ, সঞ্চয়কারীদের প্রতিনিধি ড.নাশিদ কামাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড.নুরুল কবির এবং এমডি হিসেবে থাকবেন আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক এমডি মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন।

গত ২৮ জুন পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডকে (পিএলএফএসএল) পুনরুজ্জীবিত করার আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।

আদালতে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম, আমানতকারীদের পক্ষে ছিলেন আহসানুল করিম।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ঋণগ্রহীতাদের তলব করে ২১ জানুয়ারি আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।

এরপর কয়েক দফায় ঋণখেলাপিরা আদালতে হাজির হয়ে হলফনামা দাখিল করেন এবং ঋণ পরিশোধের আশ্বাস দেন। এরপর প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য শোনে হাইকোর্ট। আদালতের নির্দেশে হাজির না হওয়ায় ওই দিনই ১২২ জনের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আদেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট।

এ বিভাগের আরো খবর