ধান-চালের ভাণ্ডার খ্যাত উত্তরের জেলা নওগাঁয় বোরো মৌসুমের জিরা, কাটারি, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সরু ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে।
নতুন আমন মৌসুমের চালের সরবরাহ বাড়ায় দেশের অন্যতম বৃহৎ চালের মোকাম নওগাঁয় মোটা চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত কমেছে। তবে কেজিতে তিন থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সরু ও মাঝারি জাতের চালের দাম।
শম্পা কাটারি জাতের চাল এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ টাকায়। মোটা জাতের স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত কমে এখন ৪৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রোববার নওগাঁ শহরের আলুপট্টি এলাকায় চালের মোকামে বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সপ্তাহ আগে যে স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা জাতের চালের বস্তা (৫০ কেজি) বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ১৫০ টাকায়, তা এখন ২ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চালের (মিনিকেট ও শম্পা কাটারি) দাম বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা বেড়ে ৩ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের চাল বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আমন মৌসুমের ধান স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা ধানের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এসব ধানের দাম পড়ে গেছে। ফলে মোটা চালের দাম কমেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মোটা চালের দাম আরও কমতে পারে।
মিল মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বোরো মৌসুমের জিরা, কাটারি, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সরু ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে। সরু ও মাঝারি জাতের চালের দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই।
নওগাঁ সদর উপজেলার পিরোজপুরের মেসার্স জাহেরা রাইস মিলের মালিক এনামুল হক জানান, পাঁচ-সাত দিন ধরে নতুন ধানের (স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা) দাম কমতে শুরু করেছে। যেসব জেলায় বড় বড় আড়ত আছে, সেখানেও ধানের দাম কমতির দিকে। প্রতি মণ ধানের দাম আগের চেয়ে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। বর্তমানে নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণা ধান এক হাজার ১০ থেকে এক হাজার ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধানের দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচেও হেরফের হচ্ছে।
মিল মালিকরা এ কারণে মোটা চালের দাম কমিয়েছেন বলে তার দাবি।
সরু ও মাঝারি চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে নওগাঁ সদরের চৌমসিয়া এলাকার টুম্পা রাইস মিলের মালিক শাহদত হোসেন বলেন, ‘বোরো মৌসুমে জিরা ও কাটারি ধানের সরবরাহ এখন বাজারে নেই বললেই চলে। বাজারে সরু ও মাঝারি চাল হিসেবে পরিচিত জিরা ও কাটারি জাতের চালের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মিল মালিক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’
নওগাঁ পৌর বাজারের খুচরা চালবাজারের বিক্রেতা নিখিল চন্দ্র বলেন, ‘শম্পা কাটারি জাতের চাল এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল, তা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৪ টাকায়। এ ছাড়া কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়ে মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। নন-শর্টার জিরা ও কাটারি চাল এবং বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের চাল দাম কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অন্যদিকে মোটা জাতের স্বর্ণা চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা পর্যন্ত কমে এখন ৪৪ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।’
নওগাঁ শহরের পৌর বাজার খুচরা চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি উত্তম কুমার সরকার বলেন, ‘মোকাম থেকেই সরু ও মাঝারি চাল বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। তাই সরু ও মাঝারি জাতের চাল বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বিক্রেতাদের চালের দাম বাড়ানো বা কমানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা যারা খুচরা চাল বিক্রেতা আছি। তারা পাইকারি চাল কিনে কেজিপ্রতি সামান্য কিছু লাভ করে বিক্রি করে থাকি। চালের বাজার মাঝেমধ্যেই ওঠানামা করে।’