দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে আইনের কোনো সুযোগ আছে কি না, সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রোববার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশনে বিচারকদের এক প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রথম কথা আমি যেটা বলব, সেটা হচ্ছে আপনারা বলছেন যে পড়ে (খালেদা জিয়ার আবেদন) রয়েছে। আসলে এটা পড়ে থাকে নাই। কথাটা হচ্ছে এর আগের দুই বার প্রত্যাখান হয়েছিল এবং আইনিভাবেই করা হয়েছিল। এখন অনেক পক্ষ থেকেই আবেদন এসেছে। আইনের কোনো ফাঁক, উপায় আছে কি না, সার্বিক দিক বিবেচনা করার পরেই এটার বিষয়ে মনে হয় সিদ্ধান্ত আসা উচিত।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সবসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক দেখেছেন। আমাদের কথা হচ্ছে আইনের যেন কোনো ব্যত্যয় না হয়। আইন যেন সঠিকভাবে আগে যে রকম করা হয়েছিল, সেই ভাবে, সেটাই সঠিক কিন্তু এবার যখন অনেক আবেদন এসেছে আইনজীবীদের থেকেও আবেদন এসেছে। সে জন্যেই কোনোকিছু ভেবেই কিছু করা যায় কি না, সবদিক দেখেই এটার একটা সুচিন্তিত সিদ্ধান্তে আসাটা আমার মনে হয়, সমীচীন। সে জন্যে আমরা একটু সময় নিয়েছি।’
এর আগে বিচারকদের প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বাংলাদেশে একটি সুদক্ষ ও বিশ্বমানের বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে চায়। এরই অংশ হিসেবে বিচার বিভাগের জন্য অত্যাধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিচারকদের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে মাত্র সাড়ে তিন বছরে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, চীন ও জাপানে ৮৫৫ বিচারককে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। করোনার প্রার্দুভাব না হলে এ সংখ্যা এতদিনে হয়তো দেড় হাজার ছাড়িয়ে যেত। দেশে প্রশিক্ষণ বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
দেশেই বিশ্বমানের প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যে মাদারীপুর জেলার শিবচরে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল একাডেমি গড়ে তোলা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। বলেন, এখানে দেশিও বিচারকদের পাশাপাশি সারা দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিচারকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের উপযোগী একাডেমি গড়ে তোলা হবে। এর কাজ আগামী বছর শুরু করা হবে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গ
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই আইনে যেসব অপরাধ আনা হয়েছে, তা পেনাল কোডেও আছে। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তা কী ছিল? উত্তর হচ্ছে পেনাল কোডে যেটা আছে, সেটা ডিজিটালি করলে আইনের দিক থেকে তা অপরাধ নয়। সেজন্যই ডিজিটাল অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানের পাতায় পাতায় গণতন্ত্রকে জোরদার করার কথা বলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাক-স্বাধীনতা বা সংবাদ ক্ষেত্রের স্বাধীনতা বন্ধ করার জন্য করা হয়নি।’
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক গোলাম কিবরিয়াও বক্তব্য রাখেন।