নিবন্ধনের তিন মাস পর ১৩ অক্টোবর জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেন নুসরাত জাবীন বিভা। নিয়ম অনুযায়ী টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার কথা এক মাস পর। তবে দেড় মাসের বেশি সময় পার হলেও টিকাসংক্রান্ত এসএমএস পাননি তিনি। এক প্রকার নিরুপায় হয়ে দ্বিতীয় ডোজ নিতে ২ ডিসেম্বর টিকাকেন্দ্রে যোগাযোগ করেন তিনি।
কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলেন, ১৩ অক্টোবর যারা টিকা নিয়েছেন তাদের তথ্য সার্ভার থেকে ডিলিট হয়ে গেছে। যে কারণে ওই দিনে টিকা নেয়া কাউকেই এসএমএস দেয়া সম্ভব হয়নি। নিজ উদ্যোগে যারা টিকাকেন্দ্রে আসছেন তাদের টিকাদানের তারিখ আপডেট করে দেয়া হচ্ছে। এরপর দু-একদিনের মধ্যে তাদের এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। এতে নতুন করে ভোগান্তিতে পড়ছেন টিকার প্রথম ডোজ গ্রহীতারা।
শুধু নুসরাত জাবীন বিভা নন, ওই দিন টিকা দেয়া আড়াই লাখের বেশি টিকাগ্রহীতার তথ্য সার্ভার উধাও হয়ে গেছে। তবে টিকা গ্রহণের তারিখ সার্ভার থেকে কেন কীভাবে উধাও হয়ে গেল, তা জানা নেই ওই কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্তকর্তা স্বীকার করেছেন, সার্ভারের জটিলতার কারণেই গত ১৩ অক্টোবর সারা দেশে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৬১ জন টিকাগ্রহীতার টিকা গ্রহণের তারিখ সুরক্ষা ওয়েবসাইটের (www.surokkha.gov.bd) সার্ভার থেকে উধাও হয়ে গেছে।
তারা বলছেন, ইতিমধ্যে এমন একাধিক অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আসছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সমাধানের চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। যাদের তথ্য গায়েব হয়েছে, তাদের কিছুদিন পর নতুন করে টিকা কার্ড ডাউনলোড করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, সার্ভার জটিলতার কারণে ওই দিন হয়তো এমনটা হতে পারে। টিকাগ্রহীতার টিকা নেয়া তারিখ খুঁজে না পাওয়ায় ইতিমধ্যে বিষয়টি আইসিটি বিভাগকে জানানো হয়েছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সমস্যার সমাধান হলে ওই দিনের টিকাগ্রহীতারা নতুন করে টিকা কার্ড ডাউনলোড করলে ৮০ শতাংশই টিকা গ্রহণের তারিখ পেয়ে যাবেন। বাকি ২০ শতাংশের ক্ষেত্রে যে সমস্যাটা তৈরি হবে, তা সরাসরি আইসিটি বিভাগকে জানানো হবে। আশা করা যায়, এরপর তাদের সমস্যারও সমাধান হবে।
‘এমন কোনো সমস্যা দেখা দিলেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে বিষয়টি আইসিটি বিভাগকে জানিয়ে দেয়া হয়। এ বিষয়টি ইতিমধ্যে আমরা জানিয়ে দিয়েছি। তারা জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘শুধু ১৩ অক্টোবর নয়, ওই মাসের ২৮ তারিখেও দেশের কিছু কেন্দ্রে এমন সমস্যা দেখা দেয়। তা নিয়েও কাজ করছে আইসিটি বিভাগ।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিক্যাল অফিসার ডা. দেবাশিস বিশ্বাস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওই দুই দিনে টিকা নেওয়া প্রায় সবার ক্ষেত্রেই এমন সমস্যা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সার্ভার জটিলতার কারণে এমন সমস্যা তৈরি হয়ে থাকতে পারে। তবে টিকার তথ্যগুলো আছে, কিন্তু হ্যাং হয়ে গেছে। এখনো সেগুলো উদ্ধার করা যায়নি। এখন নতুন করে নিতে গেলে একই তথ্য দুবার নেয়া হয়ে যাবে। এটা নিয়ে অধিদপ্তর ও আইসিটি বিভাগ কাজ করছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এমন তথ্য আমার জানা নেই। তবে এমনটা হয়ে থাকলে বিষয়টি অবশ্যই আইসিটি বিভাগে জানানো হবে।’