রাজধানীর দিয়াবাড়ির ঝাউবন থেকে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানতে পেরেছে, ওই নারী খুন হয়েছেন। তিনি ছিলেন গৃহকর্মী।
গৃহকর্তার সঙ্গে ‘সম্পর্কে’ জড়িয়েছেন এমন সন্দেহে তার স্ত্রী ওই গৃহকর্মীকে খুন করেন বলে জানিয়েছে পিবিআই। এ ঘটনায় গৃহকর্তা ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় আগারগাঁওয়ে পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রো উত্তরের অফিসে প্রেস ব্রিফিংয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম।
ব্রিফিংয়ে বলা হয়, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন সন্দেহে নিয়মিত গৃহকর্মী পারভীনকে নির্যাতন করতেন গৃহকর্ত্রী। গত ১ নভেম্বর ঝগড়াঝাঁটির একপর্যায়ে পারভীনকে গৃহকর্ত্রী লাঠি দিয়ে বেদম পেটান। মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু হয় পারভীনের। তিনি এক সন্তানের জননী, বাড়ি দিনাজপুরে।
পরে গৃহকর্তা ও তার স্ত্রী পরামর্শ করে মরদেহ গোপন করার উদ্দেশ্যে তাদের ড্রাইভারের সহায়তায় প্রাইভেট কারে করে তুরাগ দিয়াবাড়ী এলাকায় ঝাউবনে ফেলে আসা হয় মরদেহটি।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, মরদেহটি প্রথমে অজ্ঞাতনামা হিসেবেই উদ্ধার করে পুলিশ। পরে নিহতের নাম-ঠিকানা ও মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনসহ আসামিদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম জানান, মরদেহ শনাক্তের পর পিবিআইয়ের তদন্ত দল তাৎক্ষণিকভাবে তদন্ত শুরু করে। তার গ্রামের বাড়িতে স্বামী মোমিনুলসহ অন্য আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন জানা যায় ভিকটিম পারভীন এক-দেড় বছর আগে অভাবের তাড়নায় স্বামী-সন্তানসহ ঢাকা শহরে চলে আসেন। গৃহকর্মীর কাজ করতেন।
তিনি বলেন, ‘তদন্তে আরও জানা যায় ওই গৃহকর্মীর স্বামী ঢাকায় রিকশা চালাতেন। ঐ বাসায় কাজ নেয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে পারতেন না তিনি। একদিন তার স্ত্রী ফোনে জানান, তাকে গৃহকর্ত্রী মারধর করে আটকে রেখেছেন। এ সংবাদ পেয়ে স্বামী গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর তিনি একদিন ঐ বাসায় গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আসেন, কিন্তু এরপর আর কোনো দিন দেখা করতে পারেননি। পরে গত অক্টোবরে তিনি তার গ্রামের বাড়ি চলে যান।’
জিজ্ঞাসাবাদে ওই গৃহকর্মীর স্বামী পিবিআইকে জানান, ঐ বাসায় তার স্ত্রী ৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন। কাজ নেয়ার পর থেকে গৃহকর্তা প্রতি মাসে তাকে মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা করে পাঠাতেন। বাকি টাকা জমা থাকত, কিন্তু স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দিতেন না।
হত্যার শিকার নারীর স্বামী মোমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে তুরাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। এই মামলায় দুই আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। মরদেহ গোপন করার কাজে সহায়তা করায় ড্রাইভার রমজান আলীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।