সড়কে অব্যবস্থাপনার প্রতি লাল কার্ড দেখিয়েছে গণপরিবহনে হাফ পাস চালু, নিরাপদ সড়কসহ নানা দাবিতে রাজধানীর রামপুরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
রামপুরা ব্রিজের ওপর শনিবার দুপুর ১২টার পর পরই অবস্থান নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা লাল কার্ড উঁচিয়ে সড়ক ও পরিবহন খাতের লুটপাট আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘সড়কে দুর্ঘটনায় পুরো সিস্টেম জড়িত। এই সিস্টেমে ঘুষ আছে, লুটপাট আছে। এর সঙ্গে জড়িত সরকারি-বেসরকারি লোক। এই লুটপাট ও দুর্নীতিকে আজ আমরা লাল কার্ড দেখাচ্ছি।’
এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নিজেদের ‘রেফারি’ দাবি করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা জানায়।
সোহাগী বলেন, ‘যখন ফুটবল খেলা হয়, খেলোয়াড়রা ভুল করলে লাল কার্ড দেখায়। আমরা সেই রেফারিদের ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছি। আমরা দেখাতে চাই, বাংলার মাটিতে দুর্নীতি হচ্ছে, যে মাটিতে ছাত্রসমাজ বড় বড় আন্দোলন করেছে। আজ আবার ২০২১ সালে আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি।’
আন্দোলনকারী সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌসকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে ছাত্রী নয় বলে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সোহাগী একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী।
সোহাগী ইস্যুতে কথা বলেছেন খোদ সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার দাবি, রামপুরায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পেছনে একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধন আছে।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শনিবার সকালে সড়ক নিরাপত্তা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সড়ক নিরাপত্তামূলক রোড শোতে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দল থেকে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেয়া হয়। সেটার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এর ভিডিও ফুটেজ আছে। এটা একটা রাজনৈতিক দলের মহানগরের মহিলা নেত্রী রামপুরায় রাস্তায় নেমে ছাত্র-ছাত্রীদের উসকানি দিচ্ছেন, স্কুলের ড্রেস পরে।
সোহাগী সামিয়া জান্নাতুল ফেরদৌসের আইডি কার্ড। ছবি: নিউজবাংলামন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন সোহাগী। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেক সৌভাগ্য আমরা এত দিন ধরে আন্দোলন করছি, এই আন্দোলনকে বিব্রত করার জন্য তিনি মুখ খুলেছেন। তার যে এখানে নজর এসেছে, এ কারণে আমরা ধন্য।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে যে চর্চা চলছে, তার পুরোটা ‘অপপ্রচার’ বলে দাবি করেন সোহাগী।
তিনি বলেন, ‘আমি নাকি ছাত্রী না, আমি নাকি ৩০ বছরের একটি মহিলা। আমি নাকি স্কুল ড্রেস পরে শিক্ষার্থীদের উসকানি দিচ্ছি। প্রথমে বলতে চাই, আমাদের ছাত্ররা রোবট না। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে। দ্বিতীয়ত, আমি ৩০ বছরের মহিলা নই। আমার কাছে আইডি কার্ড আছে। আমি যে একজন ছাত্রী তার সব প্রমাণ আমি এখানে হাজির করেছি।’
নিজের রাজনৈতিক অবস্থানও পরিষ্কার করেন আন্দোলনকারী এই শিক্ষার্থী। বলেন, ‘আমি বুক ফুলিয়ে বলছি, আমি ২০১৭ সাল থেকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট করি। আমি ঢাকা মহানগরের দপ্তর সম্পাদক। প্রশ্ন এখানে না, আমি এ দেশের একজন নাগরিক। আমার সংগঠন করার অধিকার রয়েছে।’
ছাত্র অন্দোলনের মুখপাত্র হয়ে উঠেছেন সোহাগী। ছবি: নিউজবাংলা‘প্রশ্ন হচ্ছে এটা যে, আমি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু এখানে টেনে এনেছি কি না। আমি শুরু থেকেই এই আন্দোলনে যুক্ত। আমার কোনো স্লোগান, আমার কোনো বক্তব্যে কোনো রাজনৈতিক ইস্যু আনিনি, সেটা সবাই জানে।’
এ সময় সোগাহী নিজের পরিচয়পত্র তুলে ধরে বলেন, ‘আমি আমার আইডি কার্ড আপনাদের সামনে শো করছি। আমি খিলগাঁও মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পরিক্ষার্থী।’
বেলা ১টা ১০ মিনিটে অবস্থান তুলে নেয় আন্দোলনকারীরা।