নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন দাবিতে কিছুদিন ধরে রাজধানীর রামপুরায় আন্দোলন করতে থাকা শিক্ষার্থীদের পেছনে একটি রাজনৈতিক দলের ইন্ধন আছে বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শনিবার সকালে সড়ক নিরাপত্তা ও গণসচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সড়ক নিরাপত্তামূলক রোড শোতে অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কাদের বলেন, ‘রাজনৈতিক দল থেকে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেয়া হয়। সেটার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এর ভিডিও ফুটেজ আছে। এটা একটা রাজনৈতিক দলের মহানগরের মহিলা নেত্রী রামপুরায় রাস্তায় নেমে ছাত্র-ছাত্রীদের উসকানি দিচ্ছেন, স্কুলের ড্রেস পরে।
‘তার পরও এই আন্দোলনটা একটা বিশেষ এলাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে। এটা রামপুরা এলাকাতেই শুধু হচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা যখন আন্দোলন শেষে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করছে, তখনই রাজনৈতিক উসকানি দিচ্ছে একটি মহল।’
বাসভাড়া অর্ধেক করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝে ২৯ নভেম্বর রাতে রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষা দেয়া এক ছাত্রের প্রাণ যায়।
এর আগে ২৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন নটর ডেম কলেজের এক ছাত্র।
এসব ঘটনার পর নানা দাবিতে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পেছনে যারা জড়িত, তাদের বিচারের পাশাপাশি অন্যতম দাবি ছিল বাসভাড়া অর্ধেক করা।
এমন অবস্থায় ৩০ নভেম্বর ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়েছেন তারা। পরের দিন থেকেই ঢাকা শহরে ছাত্রদের জন্য কার্যকর করা হয় হাফ পাস।
হাফ পাসের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে মালিক সমিতি। এর মধ্যে রয়েছে হাফ পাস কার্যকর হবে শুধু রাজধানীতে, হাফ ভাড়া দেয়ার সময় অবশ্যই ছবিসংবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখাতে হবে। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোয় কোনো হাফ পাস থাকবে না।
তবে রাস্তা ছাড়ছে না রামপুরার শিক্ষার্থীরা। প্রতিদিনই দুপুর ১২টা থেকে ২-৩ ঘণ্টার জন্য নিয়ম করে রামপুরার ব্রিজে অবস্থান নেয় তারা। এতে বাড্ডা-এয়ারপোর্ট রোডে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।
রাস্তা ছেড়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার পরামর্শ দিলেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘প্যান্ডামিকের কারণে শিক্ষার্থীদের অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। অনেক ক্ষতি হয়েছে তাদের। তারা এখন পড়াশোনায় মনোনিবেশ করুক- এটাই আমাদের চাওয়া।’
শিক্ষার্থীদের গণপরিবহনে হাফ পাস ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে দেখা গেছে, অনেক সরকারি দপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গাড়ির কাগজপত্র নেই। বিষয়টি সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর নজরে আনা হলে তিনি সমস্যার কথা স্বীকার করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এগুলো আছে, সমস্যা আছে। সমস্যা যে নেই, তা না। এগুলো নজরে আসছে, এগুলো সমাধানে পদক্ষেপও নেয়া হচ্ছে।’
আন্দোলনের উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাওয়া হয় মন্ত্রীর কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আইনগত ব্যবস্থা যেভাবে নেয়া হয় সেভাবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিষয়টি তো আমার হাতে নেই। তদন্ত করে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’