১১ দফা দাবিতে গত কয়েক দিনের মতো শুক্রবারও রামপুরা সড়কে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।
বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রামপুরা ব্রিজের পশ্চিম পাশে অবস্থান নেয় তারা।
শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচিতে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটেনি। কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেনি, তবে এক শিক্ষার্থীকে লাঞ্ছনার অভিযোগকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য তাদের বাগবিতণ্ডা হয়।
পরে আরও কিছুক্ষণ অবস্থান নিয়ে তারা রামপুরা এলাকা ছেড়ে দেয়।
অবস্থান কর্মসূচিতে থাকা শিক্ষার্থীরা ‘পুলিশ দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘আমরা আছি থাকব, যুগে যুগে লড়ব’, ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাইরে’, ‘আমার ভাই কবরে, প্রশাসন কী করে’, ‘ছাত্র হত্যার আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ এ ধরনের স্লোগান দিতে থাকে।
বাগবিতণ্ডা কেন
কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা নিয়ে বাংলা কলেজের ছাত্র তানভীর হোসেন ফাহিম বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। হঠাৎ শুনলাম আমাদের কয়েকজন ছাত্র বাস আটকাচ্ছে। পরবর্তী সময়ে আমরা সেখানে গিয়েছি তাদের থামানোর জন্য। তখন পুলিশের একজন সিভিলে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘তোমার আইডি কার্ড দেখাও।’ আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছি এবার। পড়ি মিরপুর বাংলা কলেজে। সেকেন্ড ইয়ারের আইডি কার্ড পাইনি। তাই আমার ভর্তির কাগজ নিয়ে আসছি।
“তাকে ভর্তির কাগজ দেখালে তিনি কাগজটি দলামোচড় করে ফেলে দেন। পরে বলেন, ‘তোকে লাত্থি মেরে ফেলে দেব।’ পুলিশকে জানালে, তারা বলে, ‘সে আমাদের লোক না।’ তা হলে পুলিশ থাকতে সে কীভাবে আমাদের সঙ্গে এমন ব্যবহার করল।”
খিলগাঁও মডেল কলেজের ছাত্রী সোহাগী সামিয়া বলেন, ‘পুলিশ বলছে আন্দোলনে বহিরাগতদের প্রবেশের কথা। আমাদের আন্দোলনে যদি বহিরাগত ঢুকে যায়, সেটা তারা দেখবে। তারা আমাদের প্রটোকল দেবে। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ ছিল এবং আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই করতে চেয়েছি। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পুলিশ বাহিনী নস্যাৎ করার জন্য সুকৌশলে কিছু ঘটনা ঘটাচ্ছে।
‘আমাদের ছাত্রদের গায়ে তারা কেন হাত তুলবে? আমাদের এক ছাত্র প্রবেশপত্র দেখাইছে। সেটা তারা ছুড়ে ফেলে দিছে। ছাত্রদের সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটালে ছাত্ররা কি মাথা নত করে চলে যাবে?’
ওই ছাত্রী বলেন, ‘গতকালও শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার সময় পুলিশ বাধা দিয়েছে। আমরা তো বলেছি, আমরা এমনভাবে আন্দোলন করব, যাতে কারও যাতায়াতে সমস্যা না হয়। আমরা জনগণের জন্য জীবনের স্বার্থ ত্যাগ করে নামছি।’
“যত দিন আমাদের দাবি না মানা হবে, তত দিন আমরা রাস্তায় নামব। সড়কের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমরা ‘লাল কার্ড’ দেখাতে চাই। আমরা আগামীকাল ফুটপাতে দাঁড়িয়ে লাল কার্ড ও ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন করব।”
ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. রমজান বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ এবং গায়ে হাত তুলিনি। কে বা কারা করেছে সেটি বলতে পারব না।’
বাস ভাড়া অর্ধেক করার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাঝে গত সোমবার রাতে রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের ধাক্কায় এসএসসি পরীক্ষা দেয়া এক ছাত্রের প্রাণ যায়।
এর আগে ২৪ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে সিটি করপোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন নটর ডেম কলেজের এক ছাত্র।
এ ঘটনার পর নানা দাবিতে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পেছনে যারা জড়িত, তাদের বিচারের পাশাপাশি অন্যতম দাবি ছিল বাস ভাড়া অর্ধেক করা।
এমন অবস্থায় গত মঙ্গলবার ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়েছেন তারা।
বুধবার থেকেই ঢাকা শহরে ছাত্রদের জন্য কার্যকর করা হয় হাফ পাস।
হাফ পাসের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে মালিক সমিতি। এর মধ্যে রয়েছে হাফ পাস কার্যকর হবে শুধু রাজধানীতে, হাফ ভাড়া দেয়ার সময় অবশ্যই ছবিসংবলিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখাতে হবে।
সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোয় কোনো হাফ পাস থাকবে না।