বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় বিদেশে থেকে চিকিৎসক নিয়ে আসতে কোনো বাধা নেই বলে আবারও সংসদে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। কিন্তু চিকিৎসক আনার বিষয়ে দলটির কোনো উদ্যোগ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিএনপি শুধু বলে, বিদেশ পাঠায় দাও।’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংসদ অধিবেশনে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বিশেষ আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী এ সব কথা বলেন।
আনিসুল হক বলেন, ‘বিএনপির সব নেতা বলেন, আমাদের নেত্রীকে এখনই বিদেশে পাঠাতে হবে, উনার চিকিৎসা করাতে হবে বিদেশে, আমাদের দেশের চিকিৎসা খুব খারাপ। বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া তিন তিনবার হাসপাতালে গেছেন। এর আগেও দুবার গিয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছেন।’
আদালতের রায়ে দণ্ডিত খালেদা জিয়াকে আইনি দিক থেকে বিদেশে পাঠানোর সুযোগ নেই বলে আগেই জানিয়েছে সরকার।
সেই প্রসঙ্গ ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি, বিদেশ থেকে যদি ডাক্তার আনতে হয়, আনেন, চিকিৎসা করান। সেই আইনে কোনোদিন হাত দেবে না, সেই কথা চিন্তাও করবে না, সেইটার জন্য একটা পদক্ষেপও নেবে না। শুধু বলবে বিদেশ পাঠায় দাও। বিদেশ থেকে একজন ডাক্তার এনে যদি চিকিৎসা করায়…’
দেশে আইনের শাসন নেই বলে বিএনপি সাংসদ হারুনর রশীদের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উনাদের আইনের শাসন হচ্ছে ক্যু করে গুলি করে মেরে দাও। বিচার নাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে বিচার করা যাবে না, আইন করতে হবে। আর উনাদের নিজেরটাও (জিয়া হত্যা) করে না, যাক কী বলব…’
আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেল হত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করেছেন।
‘বিএনপি এগুলো করেনি। কারণ উনারা ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সে বিশ্বাস করেন।’
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নিয়েও বিএনপির সমালোচনার জবাব দেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘উনি (হারুন) নির্বাচনের কথা বলছেন, আমি ঠিক বুঝলাম না। ইট ইজ স্যাড, অত্যন্ত ইয়ে ভাষণ দিতে পারেন একজন সংসদ সদস্য, যদি আরপিওটা না পড়ে আসেন, উনারা আরপিওর কথা এখানে এসে বললেন, উনারা কীভাবে নির্বাচিত। আরপিওর মধ্যে আছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারে।’
কোন প্রেক্ষিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়, তার ব্যাখ্যাও সংসদে তুলে ধরেন আনিসুল হক।
তিনি বলেন, ‘আনকনটেস্টেড ইলেকশন কখন হয়, যখন ইলেকশনের শিডিউল অনুযায়ী যে নমিনেশন পেপার উইথড্র করার দিন, সেইদিন পর্যন্ত যদি কোনো ক্যান্ডিডেট না থাকে, তাহলে তাকে আনকনটেস্টেড হিসেবে ডিক্লেয়ার করা হয়।’
আর এই বিধানটা আইনে আছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘উনাকে এটা দেখাতে হবে এটা আমার ইয়ে (আশা) ছিল না। আমি উনাকে বলব, আইনটা দেখেন, আইনে যদি এটা দেখেন, তাহলে কালকে থেকে এই কথাটা আর বলবেন না। আর আমি জানি এটা আইনে আছে।’
চিকিৎসার জন্য বাঙালিরা বিদেশে চলে যেতে চায় বলে বিএনপি নেতা হারুনর রশীদ যে অভিযোগ তুলেছেন তারও উত্তর দেন আনিসুল হক।
তিনি বলেন, ‘উনারা তো ২১ যোগ ৫, ২৬ বছর এই দেশ শাসন করেছেন। আমি বলব, সেবা করেন নাই, শাসন করেছেন। উনারা কী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি করেছেন যে, মানুষ বিদেশে গিয়ে স্বাস্থ্য নেবে না?
‘আমি একটা সত্য কথা বলি, বাংলার গরীব জনগণ এখনও চায় ঢাকা মেডিক্যালে যেন চিকিৎসা হয়, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে যেন চিকিৎসা হয়। কারণ তারা বলেন, সেখানে তারা চিকিৎসা পান, বিনা খরচে চিকিৎসা পান।’
বিএনপি শুধু পশ্চিম দিকে তাকিয়ে থাকে বলেও জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘উনারা তো দেখেন শুধু পশ্চিম দিক। উনাদের তো জায়গা আছে ওখানে। কাবা শরিফের পরে, আর আমাদের থেকে আগে। ওই জায়গাটার মধ্যে উনারা ন্যস্ত। ওখান থেকে তো বের হতে পারেন না। সেই কারণে বিএনপি শুধু ওই কথা বলে।’
উন্নয়ন সঙ্গে সঙ্গে হয়ে যায় না উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ভাঙা স্যুটকেসের মধ্যে আলাদিনের চেরাগ না, যে কোকো জাহাজ হয়ে যাবে। এটা করতে হলে প্রথমে ভৌত অবকাঠামো দাঁড় করাতে হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা সেটাই করেছেন। এটার ফল আগামী ১২ বছর দেখবেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আগামীতে সাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস ভবিষ্যত প্রজন্ম এই দিশারীর আলোতে আলোকিত হয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের উন্নত দেশের শীর্ষে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’