ব্যাডমিন্টন খেলতে তিন বন্ধুকে নিয়ে সারঞ্জাম আনতে যাচ্ছিলেন সানজিদ দেওয়ান। পথে কয়েকজন যুবক দুই কিশোর-কিশোরীকে আটকে ছিনতাইয়ের চেষ্টা করছিল। তাদেরকে রক্ষা করতে গিয়ে ১৮ বছর বয়সী সানজিদকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। আহত হয় বিকাশ নামের আরেক তরুণ।
নারায়ণগঞ্জ নগরীর কিল্লার পুল এলাকায় রোববার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার উপপরির্দশক আব্দুল মুত্তোলিন।
তিনি নিউজবাংলাকে জানান, ওই ঘটনায় সোমবার রাতে সদর মডেল থানায় চার জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন সানজিদের বাবা রিপন দেওয়ান। জমজ দুই ভাই আদম ও কদমসহ মামলার অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।সানজিদের খালা মনি বেগম বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে সানজিদ। এরপর সে পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। তাকে বিদেশে কাজের জন্য পাঠানোর চেষ্টা করছিলাম। সানজিদ সাত মাস ধরে হাজীগঞ্জের এসিআই কোম্পানিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। ঘটনার দিন বিকেল সাড়ে ৫টায় কাজ শেষে বাড়ি ফিরে কিছুক্ষণ পর ব্যাডমিন্টন খেলার কথা বলে বেরিয়ে আর ফেরেনি।’ ছেলেকে হারিয়ে দিশেহারা মা পুষ্প বেগম। আহাজারি করে কিছুক্ষণ পরপর অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
পুষ্প বেগম বলেন, ‘খুনিরা এলাকার ছিনতাইকারী ও মাদকসেবী। ওদের বিচার চাই।’
ওই ঘটনায় আহত সিজান আহমেদ বিকাশ কমরে ২২টি সেলাই নিয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। তার পাশে বসে ডুকরে ডুকরে কাদছে মা।
বিকাশ বলেন, ‘সানজিদ ও রনিকে নিয়ে রাতে মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলতে লাইট ও বাশ আনতে পাশের এলাকা কিল্লারপুল যাচ্ছিলাম। পথে আদম ও কদমসহ কয়েকজন দুইটি ছেলে-মেয়েকে আটকে ধরে। তারা ওদের জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিল।
‘তখন সানজিদ প্রথমে তাদের সামনে গিয়ে বাধা দেয়। তারা সানজিদকে গলা চেপে ধরে টেনেহিঁচড়ে সামনের দিকে নিতে থাকে। এ সময় তারা ছুরি দিয়ে সানজিতের পেটে ও বুকে কোপাতে থাকে। আমি সানজিদকে ধরতে গেলে তারা আমাকেও পেছন থেকে ছুরি মারে।’ প্রত্যক্ষদর্শী আরেক বন্ধু মুহাম্মদ রনি বলেন, ‘ওই সময় আদম ও কদমের কয়েকজন সঙ্গী আমার সঙ্গে তর্ক করছিল। চিৎকার শুনে সামনের দিয়ে গিয়ে দেখি ওরা দুই জন রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে। পরে আমার চিৎকারে আশাপাশের লোকজন ছুটে এসে ওদের হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সানজিদকে ঢাকা মেডিক্যালে নিলে সেখানে সে মারা যায়।’হতাহতদের স্বজনরা জানান, ঘটনার দুইদিন পার হলেও পুলিশ কাউকে ধরতে পারেনি। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তারা মাদক কারবার ও ছিনতাই করে বেড়ায়।
এ বিষয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জামান জানান, মামলার আসামিদের মধ্যে আদমের নামে আরও একটি হত্যা মামলা রয়েছে। তিনি দুই মাসে আগে জেল থেকে জামিনে বের হন।অন্যদের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম চেষ্টা করছে।
ওসি জানান, গত রোববার রাত ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ নগরীর কিল্লার পুল এলাকায় সানজিদ ও বিকাশ নামের দুই তরুণ ছরিকাঘাতে গুরুতর জখম হন। তাদের মধ্যে সানজিদকে ঢাকা মেডিক্যালে নেলে সেখানে রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। আহত বিকাশ নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।