জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল বসানোয় আপত্তি তোলা রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে। একই আইনে আরও দুই থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
এর মধ্যে বোয়ালিয়া থানায় করা মামলার বাদী হয়েছেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি ও ১৩ নম্বর কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন, চন্দ্রিমা থানার মামলার বাদী নগর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তহিদুল হক সুমান এবং রাজপাড়া থানায় মামলা করেছেন ১৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন।
বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘রাতেই মেয়র আব্বাসের নামে মামলা হয়েছে।’
রাজপাড়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, তার থানার মামলাটি প্রক্রিয়াধীন।
তবে চন্দ্রিমা থানার ওসি এমরান হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আরএমপির হেড কোয়ার্টারে কথা বলেন। উনারাই বলবেন।’
ফাঁস হওয়া একটি অডিও থেকে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের বিপক্ষে মেয়রের অবস্থানের কথা জানা গেছে। তবে এই অডিওর বিষয়ে মেয়রের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আব্বাস পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। তিনি জেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য। অডিও ফাঁসের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগ।
মেয়রের অডিওটি মঙ্গলবার থেকে ঘুরছে ফেসবুকে। এক মিনিট ৫১ সেকেন্ডের বক্তব্য শোনা যাচ্ছে, তিনি একজনকে বলছেন, ‘সিটি গেট আমার অংশে। …ফ্রার্মকে দিয়েছে তারা বিদেশি স্টাইলে সাজিয়ে দিবে; ফুটপাত, সাইকেল লেন টোটাল আমার অংশটা। কিন্তু একটু থেমে গেছি, গেটটা নিয়ে। একটু চেঞ্জ করতে হচ্ছে… যে ম্যুরালটা দিয়েছে বঙ্গবন্ধুর সেটা ইসলামি শরিয়ত মতে সঠিক নয়। এ জন্য আমি ওটা থুব না (রাখব না), সব করব তবে শেষ মাথাতে যেটা… ওটা (ম্যুরাল)।’
মেয়র আব্বাস আলী বলছেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, ম্যুরালটা ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে; তো কেন দিব, দিব না। আমি তো কানা না, যেভাবে বুঝাইছে তাতে আমার মনে হয়েছে, ম্যুরালটা হলে আমার ভুল করা হবে।
‘এ খবরটা যদি যায় তাহলে আমার রাজনীতির বারোটা বাজবে যে এই ম্যুরাল দিছে না। তাহলে বঙ্গবন্ধুকে খুশি করতে গিয়ে… আল্লাহকে নারাজ করব নাকি। এ জন্য কিছু করার নাই। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যাবে না।’
মেয়রের অডিওটি কোন সময়ে বা কাদের সঙ্গে আলাপের সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে তার মোবাইলে কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি সাড়া দেননি। পরিচয় জানিয়ে তাকে এসএমএস করা হলেও জবাব দেননি মেয়র আব্বাস।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অনিল কুমার সরকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মেয়র আব্বাসের অডিওর বিষয়ে আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলেছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি। তারা শাস্তিমূলক কী ব্যবস্থা নেয়া হবে সেটি জানাবেন।’
বহিষ্কার হতে পারেন কি না জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এটি কেন্দ্র থেকেই নিশ্চিত করা হবে। তবে আমি এবং জেলার সেক্রেটারি কথা বলে কেন্দ্রকে তার বিষয়টি জানিয়েছি। এখন কেন্দ্র থেকে কী জানাচ্ছে, সেটির জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।’
ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি করায় সম্প্রতি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে জাহাঙ্গীরের দাবি, তার বক্তব্য সুপার এডিট করা হয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।
রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীগত ২২ সেপ্টেম্বর ঘরোয়া আলোচনার ওই রেকর্ড ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তাকে (জাহাঙ্গীর আলম) মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করতে শোনা যায়। এরপর আওয়ামী লীগের একটি অংশ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনি ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভে নামে।
ক্ষোভ-বিক্ষোভের মধ্যে গত ৩ অক্টোবর জাহাঙ্গীরের ব্যাখ্যা চায় আওয়ামী লীগ। এতে তাকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। ১৮ অক্টোবর সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই মেয়র তার ব্যাখ্যা দেন বলে জানান।
২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ১৯ নভেম্বর তাদের দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এই বৈঠকের আগে কয়েক দিনে মেয়রের পক্ষে-বিপক্ষে পোস্টারে সয়লাব হয়ে যায় গাজীপুর। মেয়রবিরোধীরা দাবি করতে থাকেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আসছে। তবে তার অনুসারীরা দাবি করতে থাকেন, তার কিছুই হবে না।
শুক্রবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত আসার পরপর গাজীপুরের সালনা, টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করেন মেয়রবিরোধীরা।
টঙ্গীতে মেয়রবিরোধীরা সন্ধ্যার পর আতশবাজি পুড়িয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তারা একে অন্যকে মিষ্টিমুখ করিয়ে আনন্দ করেন।