নেত্রকোনার হৃদয়ে একসময় মানুষের স্বপ্ন, ভরসা আর যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম ছিল লঞ্চ। নেত্রকোনা পৌর এলাকার মালনী রোড সংলগ্ন মগড়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা সেই পুরানো লঞ্চঘাট এখন শুধুই স্মৃতিচিহ্ন বহন করে যাচ্ছে। এই লঞ্চঘাট ঘিরে একসময় গড়ে উঠেছিল পাটপট্রি এলাকায় অসংখ্য পাট গুদাম ও ধানের বড় বড় গুদাম ঘর। বিভিন্ন এলাকা থেকে বড়-ছোট নৌকা আর লঞ্চ আসত এই ঘাটে। অপরিকল্পিত নৌযোগাযোগের কারণে আজ বিলীন হয়েছে এই লঞ্চ ঘাটটি। মগড়া নদী বয়ে গেছে সদর দেওপুর, লক্ষীগঞ্জ, আটপাড়া কোনাপাড়া, ব্রোজের বাজার, নাজিরগঞ্জ বাজার হয়ে মদন দেওয়ান বাজার ও মদন বাজার পর্যন্ত। আর এই রুটেই লঞ্চ দিয়ে যাত্রী ও মালামাল পৌঁছাত নির্বিঘ্নে। তখনকার দিনগুলোতে সড়ক যোগাযোগের অবস্থা ছিলো খুবই দুর্বল, তাই মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো লঞ্চ ভ্রমণ করতে। লঞ্চঘাটে ভিড় জমতো সকাল-বিকেলে। এখানে যাত্রী ওঠা-নামার ভিড়, নদীর ঢেউ আর হুইসেলের শব্দে সরগরম হয়ে উঠত পুরো এলাকা। ছোট্ট ছোট্ট শিশুরা নদীর পাড়ে দৌড়ে এসে লঞ্চ দেখত, আনন্দে হাত নেড়ে যাত্রীদের বিদায় জানাত ছোট-ছোট শিশুরা। সেইসব মুহূর্ত আজ কেবলই স্মৃতি হয়ে রয়েছে। কালের আবর্তে সেই লঞ্চ সেবা হারিয়ে গেছে এলাকা থেকে। নদী নিয়মিত খনন না হওয়া, আর এর উপর অপরিকল্পিতভাবে নিচু ব্রিজ নির্মাণ করায় এখন নৌকা বা ট্রলারও চলাচল করতে পারছে না। ফলে একসময়কার নদীপথের প্রাণচাঞ্চল্য নিভে গেছে। এলাকার মানুষের এখন সড়কপথই প্রধান ভরসা। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে, অর্থনৈতিক ক্ষতিও হচ্ছে সমষ্টিগতভাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যদি নদী পথটিকে পুনরুজ্জীবিত করা যায়, তবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে যেমন বিকল্প সুবিধা মিলবে, তেমনি সড়কের চাপও কমবে। নেত্রকোনার লঞ্চঘাট তাই এখন কেবলই মানুষের স্মৃতিতে বেঁচে আছে। পুরোনো দিনের সেসব কোলাহল, শিশুদের হাসি আর যাত্রীদের ভরসা সবকিছুই সময়ের স্রোতে হারিয়ে গেছে।
নেত্রকোনা জেলার মগড়া নদীর লঞ্চঘাটটি এখন শুধুই স্মৃতি
এ বিভাগের আরো খবর/p>