শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতায় সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখতে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেন, বাংলাদেশের লক্ষ্য বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলা।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে রোববার বিকেলে সেনানিবাসে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা যেন শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতায় সর্বত্র প্রশংসিত হতে পারেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি উন্নয়নমূলক কাজে অবদান রেখে দেশের গৌরব সমুন্নত রাখতে পারেন, আমি সেটাই বিশ্বাস করি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সশস্ত্র বাহিনী বাঙালি জাতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমরা বিশ্বদরবারে উন্নত জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে চলব। এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’
এ সময় করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সবাই সচেতন থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে দেশের সকল অগ্রগতিকে স্তব্ধ করে দেয়া হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ ২১ বছরের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করি।’
এরপরই সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন আধুনিকায়নের সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের সরকার সেনাবাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র, বিমান ও হেলিকপ্টারসহ মর্ডান ইনফ্যান্ট্রি গেজেট, বিভিন্ন আধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং সরঞ্জামাদি, আকাশ বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় শোরাড, ভিশোরাড, সর্বাধুনিক অয়েরলিকন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইত্যাদি সংযোজন করেছি।’
নৌবাহিনীর উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নৌবাহিনীতে অত্যাধুনিক করভেট, ফ্রিগেট, সাবমেরিন ও মেরিটাইম হেলিকপ্টার সংযোজন এবং বিশেষায়িত ফোর্স হিসেবে সোয়াডস গঠন করেছি। পটুয়াখালীতে বানৌজা শের-ই-বাংলা ঘাঁটি, কক্সবাজারে বানৌজা শেখ হাসিনা সাবমেরিন ঘাঁটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’
বিমান বাহিনীতেও বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। বলেন, ‘বিমান বাহিনীতে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার, উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র সংযোজন করেছি। লালমনিরহাটে এভিয়েশন ও অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি ফরোয়ার্ড এভিয়েশন বেইজ নির্মাণ করেছি।’
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা দেশের যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগে সদা প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
করোনা, মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে অভিমত প্রধানমন্ত্রীর।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী এক্সেস কন্ট্রোল এক্সপ্রেসওয়ে, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, দৃষ্টিনন্দন হাতিরঝিল, ফ্লাইওভার এবং সীমান্ত সড়ক নির্মাণে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। অপর দিকে আমাদের নৌবাহিনী ভাসানচরে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগারিকদের জন্য আবাসন এবং অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে সুনাম অর্জন করেছে। সম্প্রতি বনায়ন কর্মসূচির আওতায় বিমান বাহিনী দেশের উপকূলীয় এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় সিডবল নিক্ষেপ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।’
রূপকল্প-২০২১-এর সফল বাস্তবায়নে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি সূচকেই সাফল্য এসেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিক অগ্রগতির মানদণ্ডে বিশ্বের প্রথম ৫টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছি। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছি এবং মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত করেছি।’