জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে যেসব কার্যক্রম চলছে তা ধরে রাখতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ঢাকা সেনানিবাসে স্বাধীনতা যুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমি এটুকুই চাই, আমাদের দেশের এই অগ্রযাত্রা যেন কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়। বাংলাদেশ যেন সারা বিশ্বে মর্যাদা নিয়ে চলতে পারে, প্রতিটি বাঙালি পৃথিবীর যেখানে যাবে মাথা উঁচু করে গর্ব ভরে বলতে পারবে আমরা বিজয়ী জাতি। আমরা উন্নত জাতি, আমরা নিজেদের দেশকে গড়ে তুলেছি একটা সম্মানজনক অবস্থানে।
‘আন্তর্জাতিক যেকোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সমানতালে পা মিলিয়ে চলতে পারে সেই সক্ষমতা অর্জন করেছে। কাজেই লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, সেটা ধরে রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘যে যেখানেই থাকুক, যে দলেই থাকুক না কেন, মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাই। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই তারা সম্মান পাবে। আমরা সেই পদক্ষেপ নিয়েছি।’
করোনা মহামারি বলে নয়, যেকোনো দুর্যোগ দুর্বিপাক মোকাবিলার সক্ষমতা বাংলাদেশ অর্জন করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে কোনোভাবে ব্যাহত না হয় সেজন্য সবাইকে সতর্কও করেছেন তিনি।
করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু করোনাভাইরাস মোকাবিলা নয়, যেকোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাক যেটাই আসুক না কেন আমরা তা মোকাবিলার করার সক্ষমতা অর্জন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য ভূমিকার কথাও।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জানতেন যে ৭০-এর নির্বাচনে জয়লাভ করতে পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। যদি না করে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধ করতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং, অস্ত্র কোথা থেকে আসবে, শরণার্থীরা আশ্রয় কীভাবে পাবে, প্রতিটি পরিকল্পনা সুপরিকল্পিতভাবে তিনি করে রেখেছিলেন।’
গণহত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানিরা যুদ্ধটা চাপিয়ে দিয়েছিল মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মানুষ চাই না মাটি চাই- এই নীতি নিয়ে তারা গণহত্যা চালায়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন বাঙালি সদস্যরা, তারা বেরিয়ে আসেন, যুদ্ধ শামিল হয়, সেইসঙ্গে এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র, জনতা, সাধারণ মানুষ- সবাই যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই যুদ্ধটা একটা জনযুদ্ধ এবং যে যুদ্ধে প্রত্যেকটা মানুষের অবদান রয়েছে।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যার বিষয়টিও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দেশের রাজনীতির নানা দিক নিয়েও কথা বলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন একটা সময় এসেছিল যখন মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিতেই ভয় পেত। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। একটা মনগড়া ইতিহাস চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমি জানি না ঠিক, পৃথিবীর কোনো দেশে এ ধরনের নিজেদের বিজয়গাঁথা কখনও বিকৃত করা হয়, এটা পৃথিবীর কোনো দেশে করা হয় না। সেই ধরনের একটা জঘন্য কাজ আমাদের দেশে করা হয়েছিল।’
৭৫-পরবর্তী সময়ে প্রবাসে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে নিজের শরণার্থী জীবনের নানা দুঃখ দুর্দশার কথাও ওঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে। মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। শহীদের রক্ত কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। ব্যর্থ হতে আমরা দেব না।’
দেশে ফেরার পর রাজনীতির আর প্রতিহিংসা নানা ঘাত প্রতিঘাত আর চড়াই-উৎরাই পার হতে হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ওই সময়ে নিষিদ্ধ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এখন বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলের মর্যাদা পেয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর নামে ইউনেসকোর পুরস্কার প্রবর্তনের বিষয়টিও সামনে এনে তিনি বলেন, সত্য কখনও চাপা থাকে না।