ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন হয়রানি ও নির্যাতনে জড়িত একটি আন্তর্জাতিক চক্রের সন্ধান পেয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। এই চক্রে ১০০টি দেশের নাগরিকদের যুক্ত থাকার প্রমাণ মিলেছে, এর মধ্যে আছে বাংলাদেশিও।
সিবিআই জানতে পেরেছে যে ১০০টি দেশের নাগরিকের ৫০টি দলে অন্তত পাঁচ হাজার ব্যক্তি জড়িত। ভারত, বাংলাদেশ, কানাডা, নাইজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, বেলজিয়াম, ইয়েমেনের মতো দেশের অনেকেই অনলাইনে শিশুদের যৌন নির্যাতন করছে।
সিবিআইয়ের এক তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বেশকিছু দলের বিরুদ্ধে শিশুদের যৌনতা সংক্রান্ত বিভিন্ন ভিডিও দেখা, ছড়িয়ে দেয়া ও সংগ্রহ করে রাখার মতো মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে। এই কাজে বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হচ্ছে।’
ওই কর্মকর্তা জানান, সোশাল মিডিয়া ও বিভিন্ন গ্রুপে লিঙ্ক, ভিডিও, ছবি, টেক্সট ও পোস্ট ছড়িয়ে দেয় চক্রটি। সিবিআই গত ১৪ নভেম্বর ৮৩ জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অনলাইনে শিশুদের যৌন নির্যাতন ও শোষণ সংক্রান্ত অভিযোগে ২৩টি মামলা নথিভুক্ত করেছে।
সিবিআই-এর ৮০টি দল অন্ধ্র প্রদেশ, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, বিহার, হরিয়ানা, ওড়িশা, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থানসহ ভারতের মোট ১৪টি রাজ্যের ৭৭টি জায়গায় সম্প্রতি তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। এ সময় বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট, মোবাইল ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
সিবিআই জানায়, এ ধরনের সামগ্রী জোগানের সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। তদন্তে নেমে আরও বেশ কিছু স্থানের খোঁজ পেয়েছে সংস্থাটি। সেসব স্থানেও অভিযান চালানো হবে।
সূত্র জানায়, ওড়িশার ঢেনকানালে অভিযানের সময় সিবিআই কর্মকর্তাদের ওপর স্থানীয়রা হামলা চালায়। মিঠুন নায়ক নামে এক ব্যক্তিকে তার বাড়িতে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় স্থানীয় কিছু মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে সিবিআই কর্মকর্তাদের ওপর চড়াও হয়। কর্মকর্তারা এক পর্যায়ে পুলিশের সহায়তা নিয়ে রক্ষা পান।
ওই ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ মিঠুন নায়ককে আটক করে। পরে মিঠুন স্বীকার করেন, দুই মাস আগে তিনি ‘দেশি-এমএমএস’ নামে একটি গ্রুপে যোগ দেন। তিনি বিভিন্ন সোশাল মিডিয়া গ্রুপে ভিডিও লিঙ্কগুলো শেয়ার করতেন এবং বিনিময়ে প্রতিটির জন্য ২১ ডলার করে পেতেন।
সিবিআই’র ওই কর্মকর্তা জানান, ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের যৌন নির্যাতনের ঘটনায় বিভিন্ন দেশের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এই মামলার তদন্তে ‘অনলাইন শিশু যৌন নির্যাতন এবং শোষণ প্রতিরোধ/তদন্ত দল’ গঠন করেছে সিবিআই।