মওলানা ভাসানীর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে হামলার শিকার হওয়ার পৌনে ৩ ঘণ্টা পর পুলিশি নিরাপত্তায় টাঙ্গাইল ছেড়েছেন গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া এবং সংগঠনটির সদস্য সচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
কাগমারি পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বুধবার বিকেলে সোয়া ৩টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে টাঙ্গাইল ছাড়েন তারা। এর আগে নুরদের সঙ্গে ফাঁড়িতে দেখা করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ। তিনিও টাঙ্গাইলে এসে মওলানা ভাসানীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে নুরদের সঙ্গে রাজধানীমুখী হন।
টাঙ্গাইল ছাড়ার আগে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে তার সমাধিতে এতে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছি। এ সময় সহযোদ্ধারা আমাকে নিরাপত্তা দিয়ে মাজারের পাশে থাকা একটি পুলিশভ্যানে তোলেন।
‘এরপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশের সামনেই পুনরায় হামলা করেন। এক পর্যায়ে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ আমাদের সেখান থেকে টাঙ্গাইলের কাগমারি পুলিশ ফাঁড়িতে হেফাজতে নেয়। আর ড. রেজা কিবরিয়াকে টাঙ্গাইল সদর থানায় নেয়া হয়। হামলার ঘটনায় আমাদের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজকে আমি প্রত্যাশা করেছিলাম, আপনি নিজে এই সমাধিতে আসবেন। যদি দুই সপ্তাহ পৃথিবী ভ্রমণ করতে পারেন তাহলে ১০ মিনিটের জন্য হেলিকপ্টারে করে এখানে আসতে পারতেন। ভাসানীর দোয়া নিতে পারতেন।
‘আপনার বাবা বিপদের সময় তার (মওলানার) কাছে এসে বসতেন। আজকে আপনারও সময়ে এসেছে এই মাজারে এসে তার কাছ থেকে দোয়া নেয়ার।’
প্রধানমন্ত্রী বিপদে আছেন উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘আপনার একদিকে ‘র’, ‘মোসাদ’ অন্যদিকে মানুষ অনাহার, পুষ্টিহীনতা, জিনিসপত্রের দাম কল্পনাতীতভাবে বাড়ছে। আপনি ভারতের প্রেসিডেন্টকে এনে রেহাই পাবেন না। রেহাই পেতে পারেন মওলানা সাহেবের দোয়া নিয়ে। আগে এক ভুল করেছে পীরগঞ্জে আপনি যাননি।
‘আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনি হেলিকপ্টার নিয়ে আধাঘণ্টার জন্য হলেও মওলানা সাহেবের দোয়া নিয়ে যান। নিভৃতে এসে তার কাছে কামনা করেন কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে হবে। কীভাবে দেশে গণতন্ত্র আনতে হবে। তা না হলে আমাদের সম্মুখে বড় বিপদ।’
টাঙ্গাইলের সন্তোষে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করার পথে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ উঠে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দাবি, তাদের নেতা-কর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা।
হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত ৭ জন আহত হন। তাদের মধ্যে ৫ জন গণ অধিকার পরিষদের।
উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর নিজের ফেসবুক পেজ থেকে লাইভে রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা আজকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের আসল রূপ দেখলাম। একজনের মাজারে আমরা ফুল দিতে গেছি, সেখানে তারা…পুলিশ কিছু করতে পারেনি। প্রায় ১০-১৫ পুলিশ ছিল। যখন ছাত্রলীগ আমাদের আক্রমণ করেছে তারা সরে গেছে। হয়ত তারা ভয়ে সরে গেছে, না হয় তাদের কোনো ইনস্ট্রাকশন আছে। আমি জানি না। তারা ঠিক প্রটেকশন দিতে পারেনি।
‘এখন আশা করি, তারা এ ব্যাপারে সক্রিয় হবে। প্রটেকশন দেবে। আমাদের অনেক ছেলে আহত হয়েছে এবং ছাত্রলীগের যারা এটার পেছনে আছে তাদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হয়। এই দাবিটা আমরা করি। এখন আমরা থানায় যাচ্ছি।’
লাইভে গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘আমাদের অগণিত নেতা-কর্মী মওলানা ভাসানীর মাজারে অবরুদ্ধ রয়েছেন। যাকে যেখানে পাচ্ছে সাপের মতো পেটানো হচ্ছে। আমরা যারা ওখানে ছিলাম, যারা সামনে ছিলাম প্রত্যেককে বাঁশ, লাঠিসোঁটা, ইট-পাটকেল যেভাবে পেরেছে সেভাবে পিটিয়েছে। ইট-পাথর নিক্ষেপ করেছে।
‘আমাদের আহ্বায়ককে কোনোক্রমে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসতে পেরেছি। কিন্তু নুরুল হক নুরসহ অনেক নেতা-কর্মী সেখানে রয়েছেন। দেশবাসীর কাছে, পুলিশ প্রশাসনের কাছে, সরকারের কাছে আমাদের উদাত্ত আহ্বান, আপনারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরসহ আমাদের নেতা-কর্মীদের উদ্ধার করেন।’
হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক নিবিড় পাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে ঢোকার সময় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। আত্মরক্ষায় তারাও ইটপাটকেল ছুড়লে উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে তাদের দুই কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজনের মাথা ফেটে গেছে।
টাঙ্গাইলের অতিরক্তি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সরোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, গণঅধিকার পরিষদের নেতারা মওলানা ভাসানীর মাজারে কাছাকাছি পৌঁছার পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাক-র্মীরা হামলা চালান। পরে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ড. কিবরিয়া ও ভিপি নুরসহ গণঅধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের পুলিশি নিরাপত্তায় ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। পরে তারা চলে গেছেন।’